রাজন ভট্টাচার্য
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৪২ এএম
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জাপার সঙ্গে ‘অঘোষিত’ সমঝোতার চিন্তা

আ.লীগ-জাপা বৈঠক আজ
জাপার সঙ্গে ‘অঘোষিত’ সমঝোতার চিন্তা

জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে চায় না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিষয়টি আপাতত ‘উহ্য’ রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।

আগের তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক মিত্র ছিল জাতীয় পার্টি। নানা নাটকীয়তার পর সরকারের আশ্বাসে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে দলটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আসন বণ্টন ইস্যুতে কোনো সমঝোতা হয়নি। আজ বুধবার জাপার সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। যদিও গতকাল মঙ্গলবার জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বসতে চান না তারা।

নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন ইস্যুতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। পুরো প্রক্রিয়াটাই হতে পারে অত্যন্ত গোপনীয়তায়, যাতে ভোটার উপস্থিতির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।

এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে ভিন্ন চিন্তাও আছে। শেষ সময়ে জটিলতা এড়াতে আগেই আসন বণ্টনের ঘোষণা দেওয়া দরকার বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল ১৪ দলের শরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছেন জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।

তিনি বলেন, নির্বাচন জোটগতভাবে হবে, কাল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ। জোটের আসনবিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

জাপার একাধিক নেতা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির বিষয়টি সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিত কম হওয়ার অভিযোগ আছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে। এ কারণে এবারের জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সেই চিন্তা থেকেই শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেই দলের বিদ্রোহীদের নিয়েও অবস্থান পরিষ্কার করছে না আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি পাশে থাকলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। জাপার শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ভেতরে ভেতরে হলেও আসন ভাগাভাগির পক্ষে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাপার চাওয়া এবারের নির্বাচনে ৫০ আসন। যদিও আওয়ামী লীগের কাছে দলটি প্রায় ১০০ আসনের তালিকা পাঠিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৩৫টি আসন পেলেও সন্তুষ্ট থাকবে তারা। এ ক্ষেত্রে তাদের বিরোধী দলে থাকার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ আসন জাপাকে দেওয়া হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২৩টি আসনে জয়ী হয় জাপা। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনের চারটি পায় তারা। সব মিলিয়ে ২৭ জন নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করে জাপা। কিন্তু এবার নির্বাচনে আগের চেয়ে বেশি আসন ছাড়াও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে পাঁচজন মন্ত্রী, জি এম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা ও ডেপুটি স্পিকারের পদটিও আশা করছে জাতীয় পার্টি। রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা নির্বাচনে না আসায় অনেক চাওয়াই এবার পূরণ হবে বলে আশা জি এম কাদেরপন্থিদের।

এদিকে জাতীয় পার্টির ৩০৪ প্রার্থীর মধ্যে ২৭২ জনের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। বাতিল হয়েছে ৯ জনের। বাকিদের মনোনয়ন স্থগিত আছে। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আপিল করবেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

দলের বিভিন্ন জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, যে কোনো প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি না হলে আসন্ন নির্বাচনে জাপার আসন কমতে পারে। তা ছাড়া সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকা খুবই কঠিন। এতে রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে জাপাকে। তাই সমঝোতার মধ্য দিয়ে সন্তোষজনক আসন আদায় করা সম্ভব হলে দলকে শক্তিশালী করা যাবে বলেও মনে করেন তারা।

যদিও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে সম্মত নয় জাতীয় পার্টি। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে প্রকাশ্যে নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু দলের অস্তিত্ব রক্ষায় আসন সমঝোতার বিকল্প নেই।

জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালবেলাকে বলেন, ‘সরকারের আশ্বাসে জাপা নির্বাচনে এসেছে। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন।’

জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এক প্রশ্নে গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। আলোচনা চলছে। কথাবার্তা বলেই তো সমাধান করতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
ঘটনাপ্রবাহ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২০১৮ সালের নির্বাচনের বদনাম ঘোচাতে চায় পুলিশ : ডিএমপি কমিশনার

ওয়েস্ট হ্যামের বিরুদ্ধে চেলসির বড় জয়

নরসিংদী জেলা সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা’র নতুন কমিটিকে সংবর্ধনা

কেইনের হ্যাটট্রিকে লেইপজিগকে উড়িয়ে দিল বায়ার্ন

নিখোঁজের একদিন পর যুবকের মরদেহ মিলল পুকুরে

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের তারিখ ঘোষণা করলেন ট্রাম্প

এশিয়া কাপ দলে জায়গা পেয়ে সোহানের কৃতজ্ঞতার বার্তা

ঘুষ কেলেঙ্কারিতে পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

প্রবীণদের বিশেষ যত্ন নিয়ে বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিন: স্বাস্থ্য সচিব

বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত: রাষ্ট্রদূত আনসারী

১০

লা লিগার কাছে যে অনুরোধ করতে চায় বার্সা

১১

‘নির্বাচনে আমলাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে’

১২

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

১৩

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

১৪

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

১৫

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

১৬

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

১৭

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

১৮

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

১৯

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

২০
X