যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সাবেক এক নেতার আয়োজনে পিঠা উৎসবে বাণিজ্যিকভাবে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি নামক ওই সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে গত ২৭ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে বাণিজ্যিকভাবে দূতাবাসে অংশ নেওয়াকে ভিয়েনা কনভেনশনের ৪২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দূতাবাসের কর্মকর্তারা এভাবে বাণিজ্যিক কোনো উৎসবে অংশ নিতে পারেন না।
সূত্র জানায়, উৎসবে অংশ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পিঠার দোকান দিয়েছেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতির নেতৃত্বে দূতাবাসের কর্মচারীরা। তারা পিঠা বিক্রিও করেন। বিষয়টি নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলির কর্ণধার আবু রুমি। তিনি জাসাসের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা। সুতরাং তার অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের এভাবে অংশ নেওয়া উচিত হয়নি। সূত্র আরও জানায়, পিঠা উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভীন।
কর্মকর্তারা জানান, ভিয়েনা কনভেনশনের ৪২ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে, দূতাবাস এবং দূতাবাসের এজেন্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো ব্যক্তিগত লাভ কিংবা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না। অথচ কাউন্সেলর শামীমার নেতৃত্বে কর্মচারীরা পুরোদস্তুর ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পিঠার দোকান দিয়ে বেচাবিক্রি করেন। কূটনৈতিক হিসেবে তিনি এটি ঠিক করেননি। রাষ্ট্রদূত কীভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে একটি দোকানের অনুমতি দিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগ) খন্দকার মাসুদুল আলম কালবেলাকে বলেন, ২৭ জানুয়ারি প্রোগ্রামের বিষয়ে আমাদের এখনো জানানো হয়নি। নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্রদূতের অনুমতি নিয়েই সেখানে সব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান করার পর তারা আমাদের কাছে লিখিত প্রতিবেদন পাঠান। দূতাবাসের কর্মকর্তারা কোনো অনুষ্ঠানে বাণিজ্যিক দোকান দিতে পারে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেখানে পিঠা উৎসবে দোকান দিয়ে থাকলে সেটি চ্যারিটি বেসিসে হয়েছে। এটি বাণিজ্যিকভাবে হয়েছে বলে মনে হয় না। বিদেশের মাটিতে দূতাবাসের এমন আয়োজনে যদি লাভ হয়, তাহলে সেটি চ্যারিটি ফান্ডে চলে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক কূটনৈতিক কালবেলাকে বলেন, বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। কী কারণে ওয়াশিংটন দূতাবাস অংশ নিল, তা খতিয়ে দেখার দরকার আছে।
শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতির বক্তব্যের জন্য ফোন করা হলে অন্য একজন ফোন ধরেন। তাকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি শামীমাকে জানানোর কথা বলেন। প্রতিবেদককে পুনরায় ফোন করে বিষয়টি জানানোর কথা বললেও আর যোগাযোগ করেননি। অন্যদিকে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে একাধিকবার হোয়াটসঅ্যাপে কল ও মেসেজ দেওয়া হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।