এনায়েত শাওন
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫১ এএম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
উপজেলা নির্বাচন

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন আ.লীগকে

শাস্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ৩০ এপ্রিল
মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন আ.লীগকে

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা। গতকাল সোমবার প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হলেও অনেক প্রার্থীই সরে দাঁড়াননি। দলীয় সভাপতির নির্দেশনা অমান্য করেই ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী পরিবারের প্রার্থীরা। তৃণমূল নেতাদের এই ধৃষ্ঠতাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ হিসেবেই গণ্য করছে ক্ষমতাসীনরা। কার্যনির্বাহী সংসদের পরবর্তী সভায় এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের সভাপতি যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা আমরা জানিয়েছি। যারা এই নির্দেশনা উপেক্ষা করেছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর খেসারত কী দিতে হবে, তা আগামী ৩০ এপ্রিল কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় চূড়ান্ত হবে।’

ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এ নির্দেশনা উপেক্ষা করার সাহস আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নেই। কিন্তু কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপির মদদে তাদের পরিবারের সদস্যরা এ ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন, যা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। দলের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক সম্পাদকরাও অনেককে এই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ প্রার্থী তা না মানায় দলের নেতারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। তবে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত তারা নির্বাচন থেকে সরে যাবেন বলে এখনো আশাবাদী দলের নীতিনির্ধারকরা। তা না হলে নির্দেশ অমান্য করার খেসারত দিতেই হবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। অতীতে দলীয় প্রধানের নির্দেশ অমান্যের কারণে প্রথিতযশা রাজনীতিবিদদের পরিণতি কী হয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মী ও স্বজনদের।

জানা গেছে, প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলায় দেড় ডজনেরও বেশি উপজেলায় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে

মন্ত্রী-এমপিরা যেন খবরদারি করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ স্বজনদের প্রার্থী না হতে নির্দেশ দেন। তা সত্ত্বেও গতকাল সোমবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনেও দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই নির্বাচনে অনড় এসব প্রভাবশালীর স্বজনরা। আগামী ৮ মে এই ধাপের ভোটগ্রহণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন,

‘মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন হওয়ার কারণে কেউ যেন হঠাৎ করে এসে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্যই দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এর আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল, ত্যাগীদের সুযোগ করে দেওয়া। দল একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে, তা সবাইকে মেনে নিতে হয়। দল ও দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত যে বা যারা অমান্য করেছে, তাদের পরিণতি ভালো হয়নি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,

নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তিনি প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন।

অন্যদিকে হাতিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন

নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী অমি। এখানে ডামি প্রার্থী হিসেবে ছিলেন সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী দুবারের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস।

বগুড়া-১ আসনের এমপি শাহাদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল সারিয়াকান্দি উপজেলা থেকে এবং ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন সোনাতলা উপজেলা থেকে নির্বাচন করছেন। তারা কেউ গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। সংসদ সদস্যের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহারে দলীয় কোনো নির্দেশনা পাননি। এ কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না।

সংসদ সদস্যের ভাই লিটন বলেন, তিনি এখনো নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। সংসদ সদস্যের ভাই পরিচয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। দল থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা তিনি পাননি। এ ছাড়া সোনাতলা উপজেলায় মাত্র দুজন প্রার্থী, প্রত্যাহার করলে অপর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে অনড় কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা। তিনি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নির্ধারিত সময় পার হলেও তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘অবশ্যই আমি ভোট করব। ভোটের মাঠে আছি। কেন্দ্র থেকে এমন কোনো নির্দেশনা কিংবা চিঠি পায়নি যে ভোট করতে পারব না। আমার মতো যারা রানিং চেয়ারম্যান রয়েছেন, তাদেরকেও বলা হয়নি। তবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত যদি আসত আমি অবশ্যই মেনে নিতাম।’

দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই। টানা তিনবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার কালবেলাকে বলেন, ‘তিনবার দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমি এখনো চেয়ারম্যান আছি। আমি নির্বাচনে অবশ্যই থাকব।’

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় নির্বাচন করছেন মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুপাতো ভাই এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসরাফিল হোসেন। তিনি বলেন, ‘দলীয় এ সিদ্ধান্ত আমার জন্য প্রযোজ্য হবে না। আমি তো এখনো চেয়ারম্যান। তা ছাড়া আমি যখন রাজনীতিতে আসি, এমপি তারচেয়ে বিশ বছর পর রাজনীতিতে আসেন। দলীয় সভানেত্রী এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না, যেটা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হবে। আমি নির্বাচনে অবশ্যই থাকব, এলাকার জনগণ আমাকে নির্বাচনে রাখবে।’

নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার আশরাফ খানের শ্যালক শরীফুল হক পলাশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ঘোড়াশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরীফুল বলেন, ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিনি, কারণ জনগণের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। আমার রাজনৈতিক জীবন মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় হিসেবে নয়। ৭০ বছর ধরে আমার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি এমপি হওয়ার কারণে কি আমার রাজনীতি বন্ধ করে দেব! যেহেতু দলীয় কোনো প্রতীক নেই, তাই আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি।’

পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই এস এম নুরে আলম সিদ্দিকী নাজিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমি এখন কোনো দল করি না। আমার নির্বাচন করার সঙ্গে আমার ভাইয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমার এলাকার মানুষের ভালোবাসা সঙ্গে নিয়ে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজনের দুই চাচা ও চাচাতো ভাই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মাঠে রয়েছেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের এমপি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই ধনবাড়ী উপজেলায় হারুনার রশিদ হিরা নির্বাচনে অনড়। একই পরিস্থিতি মাদারীপুর সদর উপজেলাতেও। চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক নৌমন্ত্রী এবং মাদারীপুর-২ আসনের এমপি শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খানও ভোটের মাঠে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে আছি এবং থাকব। যেখানেই যাচ্ছি বিজয়ের আভাস পাচ্ছি।’

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সাবেক পরিবেশ মন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য শাহাব উদ্দিনের ভাগনে সোয়েব আহমদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। বরিশাল-৬ আসনের এমপি আব্দুল হাফিজ মল্লিকের ভাই বাকেরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনে লড়ছেন। এতকিছুর মধ্যেও সিংড়া উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারী ক্রেতাকে শ্লীলতাহানি চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড

মৎস্য খামারের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ফসলি জমির মাটি লুট

‘গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী এডিবি’

তীব্র খরার মধ্যেই দেশে বন্যা সতর্কতা

চট্টগ্রামে দুইবার বৃষ্টির হানার পর আবারও খেলা শুরু  

স্ত্রীর স্বীকৃতি চেয়ে সেই ছাত্রলীগ নেতাকে ‘খুঁজছে’ তরুণী

আজ রাতেও ঢাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা

গোসল করতে গিয়ে পুকুরে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু

সারা দেশে যেসব বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে

রাবির হল ক্যান্টিন মালিকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ

১০

রাজনীতির নেতৃত্ব দিতে চায় ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’

১১

মার্শাল আর্ট কিং রুবেলের আদ্যোপান্ত (ভিডিও)

১২

যে কারণে দেশ ছাড়ছেন কানাডার নাগরিকরা

১৩

ফের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি ফখরুলের

১৪

প্রান্তিক মানুষকে মূলধারায় নিয়ে আসতে কাজ করছি : দীপু মনি

১৫

জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর পরিচালনা করবে জাতীয় জাদুঘর

১৬

জালিয়াতি ধরা পড়ার পরও বুক ফুলিয়ে ঘুরছেন ওসমান

১৭

নাসির উদ্দিন পিন্টুর কবরে দলীয় নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা

১৮

উপাচার্যের কাছে জবি শিক্ষক সেকেন্দারের বিচার চেয়েছে নীলদল

১৯

বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গেল কনে!

২০
*/ ?>
X