ছোটবেলায় সায়েন্স ফিকশন পড়তেন খুব। তাতেই আগ্রহ বাড়ে রোবটিকসে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার তার ঝুলিতে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সানি জুবায়েরের রোবট অভিযান নিয়ে লিখেছেন জাহিদুল ইসলাম-
রোবটিকসের শুরু
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালে রোবটিকস ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু সানি জুবায়েরের। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বই ও মুভি দেখেই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তার। কৌতূহল ও জানার আগ্রহ থেকেই এরপর ইলেকট্রনিকস নিয়ে কাজ শুরু করেন জুবায়ের। শুরুর দিকে প্লাস্টিক বোতলের ছিপি বা ঢাকনা খুলে মোটর যুক্ত করে একটি গাড়ি বানান তিনি। এ গাড়িটিতে ব্যাটারি সংযোগ দেওয়া হয়। পরে সুইচও সংযুক্ত করে দেন। যখন সুইচ অন করা হয়, এটি চার চাকা গাড়ির মতো চলতে থাকে। ঘাঁটাঘাঁটি করে মোটর কীভাবে কাজ করে কিংবা ব্যাটারি ও সেন্সর কীভাবে কাজ করে, তা শিখে ফেলেন। এর ধারাবাহিকতায় একসময় দেখা গেল রোবটিকসের ভারী ভারী কাজগুলোও করতে সক্ষম হয়ে যান জুবায়ের। তখন সেন্সর বা রোবটিকসের মালপত্র এতটা সহজলভ্য ছিল না। ফলে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ডিভাইস থেকে এগুলো খুলে রোবটে ব্যবহার করতেন। কাজ করতে করতে তার ইচ্ছাশক্তি আরও বেড়ে যায়। ‘নতুন কিছু জানা বা উদ্ভাবনের মধ্যে বড় একটা সাফল্য নিহিত থাকে—আর এ বিশ্বাস থেকেই আমার রোবটিকসে যাত্রা শুরু।’
টিম অ্যাটলাস
রোবটিকস চর্চাকে আরও গতিশীল করতে ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সানি জুবায়ের প্রতিষ্ঠা করেন টিম অ্যাটলাস। তিনি এই দলের দলনেতা। এই দলটি যাত্রা শুরু করে ৩০ মার্চ ২০১৬ সালে। বর্তমানে দলটির সদস্য সংখ্যা ৫০ জন। তিনজন উপদেষ্টাও রয়েছে। টিম অ্যাটলাসে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন, যারা সৃজনশীল রোবটিকস চর্চায় কাজ করে যাচ্ছেন। রোবটিকসে কাজ করতে আগ্রহী এমন যে কেউ চাইলে দলটির সদস্য হতে পারবেন।
আগুন নেভাতে ডিফেন্ডার
জুবায়ের ও তার দল, টিম অ্যাটলাসের বানানো রোবট ডিফেন্ডার। নাম থেকেই কিছুটা আঁচ করা যাচ্ছে। রোবটটি কোনো কিছু থেকে মানুষকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে। রোবট ডিফেন্ডার আগুন নেভায়। অনেক অগ্নিকাণ্ড হয় যেখানে রাসায়নিক দ্রব্যাদির কারণে আগুন নেভানোটা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। কিন্তু রোবট ডিফেন্ডার সেই ঝুঁকিপূর্ণ ও রাসায়নিক অগ্নিকাণ্ড নেভাতে সম্ভব। এতে থাকা ইমেজ প্রসেসর ও সেন্সর আগুনের উৎস খুঁজে বের করতে পারে সহজেই। আর আগুনের উৎস খুঁজে বের করতে তা নিয়ন্ত্রণও সহজ। রোবট ডিফেন্ডার ও অ্যাটলাস স্পার্ক এ বছর টেকনোশিয়ান ওয়ার্ল্ড রোবটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে দলটিকে দ্বিতীয় স্থান এতে দেয়।
স্বয়ংক্রিয় ডাস্টবিন
ক্যাম্পাস পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখার কথা চিন্তা করে জুবায়ের ও তার টিম অ্যাটলাস তৈরি করেছে অটোমেটিক ডাস্টবিন। এটিতে যেমন ময়লা ফেলা যায়, পাশাপাশি এটি মানুষকে ময়লা ডাস্টবিনে ফেলতে উদ্বুদ্ধ করে। এতে ক্যামেরার পাশাপাশি সেন্সর রয়েছে, যা মানুষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে উৎসাহ দেবে। এরই মধ্যে এটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও রাস্তার পাশে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ডাস্টবিনটি বাজারজাত করতে চায় তারা।
অর্জন
সানি জুবায়ের দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিযোগিতায় পদক ও পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে সিলভার ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক পেয়েছেন। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড-২০১৯-এ বাংলাদেশের হয়ে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেন। ন্যাশনাল রোবটিকস কনটেস্ট-২০২১-এ চ্যাম্পিয়ন। জেইউ সিএসই ফেস্ট-২০১৯-এ চ্যাম্পিয়ন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড-২০২১ অর্জন করেন। সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত টেকনোশিয়ান ওয়ার্ল্ড রোবটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৩-এ তার দল ‘টিম অ্যাটলাস’ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। এরকম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কার রয়েছে তার ও টিম অ্যাটলাসের ঝুলিতে।
মন্তব্য করুন