বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে শহীদ আবুল বরকত অন্যতম। শহীদ বরকত ১৯২৭ সালের ১৩ জুন (মতান্তরে ১৬ জুন) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর অঞ্চলের বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শামসুদ্দিন ও মায়ের নাম হাসিনা বেগম। দেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালে তার পরিবার ঢাকায় চলে আসে। ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ হয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নুরুল আমিন সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিলের সময় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন এ ভাষাসংগ্রামী। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় শুরু হওয়া সংঘর্ষ একসময় ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলেও ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ অতর্কিত হামলে পড়ে ছাত্রদের ওপর। আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে। একসময় পুলিশ হোস্টেলে ঢুকে অতর্কিত গুলি ছুড়তে থাকে। আবুল বরকত লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। তলপেটে লেগেছে গুলি। তাকে সঙ্গীরা কাঁধে তুলে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পথিমধ্যে পানি খেতে চাইলে, পানি না থাকায় তাকে রুমাল চুষতে দেওয়া হয়। এ সময়ও বরকত সাহস হারাননি এবং আন্দোলন যেন স্তিমিত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে বলেছেন—‘খুব কষ্ট হচ্ছে, বাঁচব না। বিষ্ণুপ্রিয়া ভবন, পুরানা পল্টনে খবর পৌঁছে দেবেন।’ রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান।
মন্তব্য করুন