কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে

নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে

বহুল প্রচলিত একটি কথা—পানির অপর নাম জীবন। অবশ্যই সে পানি হতে হবে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ। অথচ দেশের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ এ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত! শুধু তাই নয়, পানির সব ধরনের উৎসের প্রায় অর্ধেক এবং প্রতি ১০টির মধ্যে ৮টি পরিবারে ব্যবহৃত পানির নমুনায় ভয়ংকর ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া দূষণ রয়েছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে একটি সার্ভেতে। নিঃসন্দেহে এ চিত্র গভীর উদ্বেগের।

পানিতে ভয়ংকর ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া দূষণ দেশের লাখ লাখ শিশুর জন্য ডায়রিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তারা প্রতিদিন এ ঝুঁকির মুখোমুখি হয়। সাধারণ এক গ্লাস পানিই তাদের জন্য ভয়ানক বিপদ বয়ে আনতে পারে। ইউনিসেফের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা সর্বশেষ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভেতে (এমআইসিএস) এসব তথ্য উঠে এসেছে।

দূষিত পানি কিংবা অনিরাপদ পানিতে শুধু শিশুরাই আক্রান্ত হয় না; এর শিকার সব বয়সী মানুষ। অনিরাপদ পানির জন্য নানাবিধ রোগ ছড়ায়। স্বাস্থ্যবিজ্ঞান মতে, বিশুদ্ধ পানির অভাবে কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, অ্যামিবিয়াসিস, কৃমির মতো রোগ বৃদ্ধি পায়; দেখা দেয় কিডনির সমস্যা, পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্লান্তি ও অপুষ্টির মতো রোগ। এর প্রভাব শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিই বাড়ায় না, হ্রাস করে জীবনযাত্রার মান; এমনকি অর্থনৈতিক চাপ পর্যন্ত তৈরি হয়। বিশেষ করে বন্যাকবলিত অঞ্চল কিংবা আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় এ রোগগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করে। সার্ভেতে যেমনটা বলা হয়েছে সে অনুযায়ী, মাত্র ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের নিরাপদ ব্যবস্থাপনার আওতায় পানি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তার মানে বাকি বিরাটসংখ্যক মানুষ রয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে।

পরিসংখ্যান বলছে, নিরাপদ পানির অভাবে প্রতি বছর বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে ৮ থেকে ১৫ লাখ মানুষ পানিবাহিত রোগে মারা যায়। এর বেশিরভাগই শিশু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বের প্রায় ২২০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। প্রতি চারজনের মধ্যে একজন সুরক্ষিত পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত; যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের বিরাটসংখ্যক মানুষের পানির অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য দায়ী কে? করণীয়ইবা কী?

আমরা মনে করি, নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে যে একটি সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত জাতীয় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন, তা সম্ভব হয়নি। এজন্য দায়ী স্বয়ং রাষ্ট্র এবং বিভিন্ন সময় সরকারের দায়িত্ব পালনকারীরা। একই সঙ্গে দায় রয়েছে প্রত্যেক মানুষের। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতার ঘাটতি যেমন রয়েছে; তেমনি এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে আর্থিক সংগতির বিষয়টিও। কেননা, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে পানি দূষণমুক্ত করা, সঠিকভাবে সংরক্ষণ কিংবা বন্যা বা জরুরি অবস্থায় বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহার যেমন সচেতনতার মধ্যে পড়ে; অন্যদিকে এমন মানুষের সংখ্যা কম নেই, যাদের পানি বিশুদ্ধকরণের এ প্রক্রিয়ায় যাওয়ার আর্থিক সংগতি নেই। ফলে সবার জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হলে বৃহৎ পরিসরে, অর্থাৎ প্রান্তিক অঞ্চল থেকে শুরু করে শহর-নগর পর্যন্ত অবকাঠামো উন্নয়নসহ নিরাপদ পানির উৎস বাড়াতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ জরুরি। পাশাপাশি জরুরি জনসচেতনতা বৃদ্ধি। আমাদের প্রত্যাশা, সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে বর্তমানের সংশ্লিষ্টরা এবং পরবর্তীকালে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন, তারা আন্তরিক হবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শারীরিক প্রতিবন্ধী আলিফের পাশে চট্টগ্রামের ডিসি

ইউরোফাইটার টাইফুন কিনবে বাংলাদেশ

মসজিদের ভেতর বৃদ্ধের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বহিষ্কৃতদের প্রত্যাবর্তনে ছন্দে ফিরছে সিলেট বিএনপি

অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা কলেজের বাস চলাচল বন্ধ

বিসিএস পরীক্ষার নম্বর বণ্টনে পরিবর্তন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন

৩ শর্তে জাতীয় সরকার গঠন করতে চান জামায়াত আমির

খুলনা-২ / বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার মাস পেরোলেও ঐক্যবদ্ধ প্রচারকাজ শুরু হয়নি

দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের ঐক্যের ডাক

১০

গুলশানের একটি সড়কের নতুন নাম ‘ফেলানী এভিনিউ’

১১

এসএসসি পাসেই বসুন্ধরা গ্রুপে চাকরি, পাবেন যেসব সুবিধা

১২

দল মত নির্বিশেষে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান সেলিমুজ্জামানের

১৩

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

১৪

তৈরি পোশাক খাতে নারী নেতৃত্ব অগ্রগতিতে অংশীজনদের আহ্বান

১৫

ছাত্রীর টিফিন বক্স থেকে পথ কুকুরদের খাওয়ানোর দৃশ্য ভাইরাল

১৬

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটি বাতিল

১৭

কোন ব্যথায় গরম সেঁক, কোন ব্যথায় ঠান্ডা? জানুন সঠিক পদ্ধতি

১৮

সিআইডি কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতকারী পলাতক সেই ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৯

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাউশির জরুরি নির্দেশনা

২০
X