

ওস্তাদ জাকির হোসেন ভারতীয় তবলা বাদক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। তিনি কিংবদন্তি তবলা বাদক ওস্তাদ আল্লা রাখার জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা তবলা বাদক হিসেবে গণ্য করা হয়। ওস্তাদ জাকির হোসেন ১৯৫১ সালের ৯ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাহিমের সেন্ট মাইকেলস হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, মুম্বাই থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিন বছর বয়সে প্রথম তবলা বাজানো শুরু করেন ওস্তাদ জাকির হোসেন। সাত বছর বয়সে থেকে আসরে বাজানো শুরু করেন। তিনি মালয়ালম ভাষার বাণপ্রস্থম চলচ্চিত্রের সুরায়োজন করেন। ভারতীয় সংগীত উপদেষ্টা হিসেবে অভিনয়ও করেন। চলচ্চিত্রটি ১৯৯৯ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এবং এএফআই লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসরে গ্র্যান্ড জুরি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে। ২০০০ সালে ইস্তাম্বুল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও ৪৭তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়। তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রের সুরায়োজন করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে ইসমাইল মার্চেন্ট পরিচালিত ইন কাস্টডি ও দ্য মিস্টিক ম্যাসোর। তিনি ফ্রান্সিস ফোর্ড কোপলার অ্যাপোক্যালিপ্স নাউ, বেরনার্দো বেরতোলুচ্চির লিটল বুদ্ধা চলচ্চিত্রে সাউন্ডট্র্যাকে তবলা বাজিয়েছেন। গ্লোবাল ড্রাম অ্যালবামের ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে তিনি গ্লোবাল ড্রাম প্রজেক্ট অ্যালবামে পুনরায় মিকি হার্ট, সিকিরু আদেপোয়ু ও জোভান্নি হিদালগোর সঙ্গে কাজ করেন। ২০০৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ৫১তম গ্র্যামি পুরস্কারে এ অ্যালবামটি সমকালীন বিশ্ব সংগীত অ্যালবাম বিভাগে গ্র্যামি পুরস্কার অর্জন করেন।
ছয় দশক দীর্ঘ কর্মজীবনে জাকির হোসেন বহু বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে ১৯৭৩ সালে ইংরেজ গিটারিস্ট জন ম্যাকলাফলিন, বেহালাবাদক এল শংকর এবং পারকশনিস্ট টিএইচ ভিক্কু বিনায়াকরামের সঙ্গে তার সংগীত প্রকল্পটি ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীত এবং জ্যাজের এক অনন্য মিশ্রণ তৈরি করে। কর্মজীবনে পণ্ডিত রবিশঙ্কর, আলি আকবর খান এবং শিবকুমার শর্মার মতো ভারতের প্রায় সব কিংবদন্তি শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন। পশ্চিমা সংগীতজ্ঞদের সঙ্গে তার যুগান্তকারী কাজ—যেমন ইয়ো-ইয়ো মা, চার্লস লয়েড, বেলা ফ্লেক, এডগার মেয়ার, মিকি হার্ট এবং জর্জ হ্যারিসন—ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতকে আন্তর্জাতিক শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেয় এবং তাকে একটি বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। রবি শঙ্কর বা ওস্তাদ আমজাদ আলি খান বাজাচ্ছেন আর ওস্তাদ জাকির হোসেন তবলায় সংগত করছেন—এ ছবি এখনো অনেকের মনে অম্লান। তবলার বোলে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে পারতেন শ্রোতাদের। তার ব্যান্ড শক্তির অ্যালবাম ‘দিস মোমেন্টস’ এ বছর শ্রেষ্ঠ বৈশ্বিক অ্যালবাম বিভাগে গ্র্যামি পুরস্কার পায়। বিশ্বজুড়ে শ্রোতাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। ভারত সরকারও অন্যতম খ্যাতনামা এ ধ্রুপদি সংগীতশিল্পীকে ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০২৩ সালে পদ্মবিভূষণ প্রধান করে। পেয়েছেন চারটি গ্র্যামি পুরস্কার, যার মধ্যে তিনটি একই বছর, অর্থাৎ, ৬৬তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে। জাকির হোসেন অগণিত ভক্তকে কাঁদিয়ে ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর মারা যান।
মন্তব্য করুন