শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
মেজর (অব.) ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৩:২৪ এএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তুরস্কে পাহাড়ের চূড়ায় মসজিদ

তুরস্কে পাহাড়ের চূড়ায় মসজিদ

পাহাড়ের সঙ্গে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের একটা আবেগের সম্পর্ক ও ঐতিহাসিক মেলবন্ধন রয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কার হেরা পর্বতের গুহায় নবুয়ত লাভ করেন। এই পাহাড়েই সর্বপ্রথম পবিত্র কোরআন নাজিল হয় এমনি এক রমজান মাসে। এর আগে হজরত মুসা (আ.) মহান আল্লাহর নুর দর্শন করেন মিশরের সিনাই উপত্যকার তুর পাহাড়ে। পবিত্র কাবা ঘরের নিকটবর্তী সাফা ও মারওয়া নামের দুটি পাহাড়ের মধ্যে সাতবার যাওয়া-আসা পবিত্র হজের আবশ্যিক শর্ত। মুসলমানদের বহু যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের সাক্ষী অসংখ্য পাহাড়, তাই ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে পাহাড়ের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।

মুসলমান অধ্যুষিত দেশ তুরস্কের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৬২ লাখ, যার অধিকাংশ (প্রায় ৯৯ শতাংশ) ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। এই বিশাল মুসলমান জনগোষ্ঠীরসহ যুগপৎ ধর্মপ্রাণ এবং ভ্রমণ ও রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের কাছে একটি পরিচিত নাম ক্লারক্লার মসজিদ। উত্তরপূর্ব তুরস্কের বেবার্ট শহর থেকে আরও উত্তরে কৃষ্ণসাগর উপকূলবর্তী ট্রাবজোন পার্বত্য এলাকায় যাওয়ার পথে এই মসজিদের অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩২০০ মিটার উচ্চতায় এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে। এ মসজিদটির প্রকৃত নির্মাণকাল আজও অজানা। তবে ঐতিহাসিকদের মতে, অনেক আগে এখানে ৪০ জন মুসলমান সাধকের বসবাসকালে এ মসজিদ নির্মিত হয়। তাই মসজিদের আরেক নাম ও স্থানীয় শাব্দিক অর্থ ‘৪০ জনের মসজিদ’।

ক্লারক্লার পর্বতমালার সর্বোচ্চ শিখরে একটি দর্শনীয় স্থানে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। এখান থেকে নিচে একদিকে তাকালে কৃষ্ণসাগরের বিশাল জলরাশি এবং বাকি তিন দিকে তাকালে পর্বতের পর পর্বতমালা চোখে পড়ে। আর ওপরের দিকে তাকালে শুধুই নীল আকাশ দেখা যায়। কৃষ্ণসাগরের দিক থেকে ভেসে আসা প্রবাহমান নির্মল বাতাস এখানে ভ্রমণে আসা যে কোনো মানুষের দেহ ও মন জুড়িয়ে দেয়। তাই মহান আল্লাহর মাহাত্ম্য অনুধাবন ও তার অপার সৃষ্টিকে চোখ ভরে দেখা, একাগ্রচিত্তে এবাদত করা এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করার একটি আদর্শ স্থান এই ক্লারক্লার মসজিদ।

এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে মূলত আশপাশের পাহাড় থেকে সংগৃহীত পাথর দিয়ে। তবে মসজিদের দরজা-জানালা খুলে দিলে পাথরের এ মসজিদেও শীতলতা অনুভব করা যায়। ভেতর থেকে দরজা আর জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে শুধুই নীল আকাশ দেখা যায় বলে এ মসজিদকে পর্যটকরা অসীম নীলের প্রবেশদ্বার বলে থাকেন।

বর্তমানে মসজিদটির ভিতে পুরোনো পাথরই রয়েছে। তবে সংস্কারকালে মসজিদে চারপাশে কাঁঠালি রঙের কাঠ ও ওপরে পীত সবুজ রঙের টিন ব্যবহৃত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক এ ব্যতিক্রমধর্মী মসজিদটি দেখতে আসেন। মুসলমান পর্যটকদের অনেকেই এ মসজিদে নামাজ আদায় করেন এবং এখানে রাতযাপন করেন পাহাড়ের চূড়ায় রাতের নীরবতা অনুভবের আশায়। তাদের ঘুমানোর জন্য মসজিদের পাশে একটি থাকার ঘর নির্মিত হয়েছে, সঙ্গে রয়েছে একটি রান্নার ঘরও।

এ ছাড়া তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলের আরেক নাম সাত পাহাড়ের নগর। সিটি অব সেভেন হিলসের মধ্যে তৃতীয় পাহাড়ের চূড়ায় ১৫৫০ থেকে ১৫৫৭ সালের মাঝামাঝি অটোমান প্রবাদপুরুষ সুলতান সোলায়মান নির্মাণ করেন সুলাইমানি মসজিদ; তবে চতুর্দিকে নগরায়ণের ফলে পাহাড় চূড়ায় নির্মিত এ মসজিদের স্বকীয়তা অনেকাংশেই মলিন হয়েছে।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত মেজর,

গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২০২৬ বিশ্বকাপে কবে মুখোমুখি হতে পারে আর্জেন্টিনা–ব্রাজিল?

বিশ্বকাপের গ্রুপ অব ডেথে ফ্রান্স

নুরুদ্দিন অপুর হাত ধরে আ.লীগ নেতার বিএনপিতে যোগদান

২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত: দেখে নিন কোন গ্রুপে কোন দল

২০২৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ যারা

রাতে আবার হাসপাতালে গেলেন জুবাইদা রহমান

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় ৩০টির বেশি দেশ

খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, বন্ধ হয়েছে রক্তক্ষরণ

‘বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে ঝুপঝাপ শব্দে ভেঙে পড়ে’

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

১০

দেড় হাজার দৌড়বিদের অংশগ্রহণে হাফ ম্যারাথন

১১

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফ্রি যাত্রীসেবা

১২

বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ 

১৩

যুবদল নেতা সুমনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৪

দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

১৫

গণতন্ত্র মঞ্চের নতুন সমন্বয়ক সাইফুল হক

১৬

পুরোনো রাজনীতি পরিহার করে নতুন রাজনীতি করতে চাই : মঞ্জু

১৭

খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা দেখার জন্য শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন : স্বপন

১৮

ভুয়া ফটোকার্ড ও অপপ্রচারের অভিযোগে জিডি করলেন ছাত্রদলের আবিদ-মায়েদ

১৯

তারেক রহমান বাংলাদেশের ভোটার কি না এ প্রশ্ন অবান্তর : অ্যাটর্নি জেনারেল

২০
X