শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বদলের রেকর্ড করেছে সরকার। গত ১০ মাসে ২২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা এবং তাদের পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের নাম বদল করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার অংশ হিসেবে সর্বশেষ গত ৪ জুন ২৪টি সরকারি স্কুলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন নামকরণ করা হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তির নাম বাদ দিয়ে স্থানীয় নামে নামকরণ করা হয়েছে। এত অল্প সময়ের এত সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানরর নাম বদলের রেকর্ড আগে কখনও হয়নি। শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কমকর্তারা জানিয়েছেন, নাম বদলের এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশব্যাপী অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণ নিজেদের পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাদের নামে করেছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের নাম সরানোর পদক্ষেপ নেয়।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই ১০ মাসে বিভিন্ন ধাপে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব নাম অপসারণ করা হয়েছে।
নাম পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ
৬টি মেডিকেল কলেজের নাম বদল: গত ৩০ অক্টোবর ৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ, মানিকগঞ্জের নাম পরিবর্তন হয়ে ‘মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ’ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুরের নাম পরিবর্তন হয়ে ‘ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ’।
১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন:
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার সদস্যদের নামে থাকা দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশের নামকরণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার নামে, যেমন নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম ‘নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম ‘কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়’।
বিএসএমএমইউসহ ৩টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন: গত ১৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সহ তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। বিএসএমএমইউ-এর নাম হয়েছে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’, খুলনার শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ রাখা হয়েছে।
৬৮টি সরকারি কলেজের নাম পরিবর্তন:
গত ২৯ মে দেশের ৩৭ জেলার ৬৮টি সরকারি কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়। যদিও গাজীপুরের কাপাসিয়ায় অবস্থিত সরকারি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদ হওয়ায় পরে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছেন যে এর নাম পরিবর্তন হচ্ছে না।
১৬টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বদল:
গত ১৩ এপ্রিল ১৫টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নাম থেকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের স্বজনদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
২১টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শেখ পরিবারের নাম বাদ:
গত ২৪ এপ্রিল ১৬টি স্কুল, ৩টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ২টি কলেজসহ মোট ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়।
পাঁচ দফায় ৭৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম বদল:
গত ১০ মাসে পাঁচ দফায় ৭৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সর্বশেষ গত ১৮ মে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়।
এই পদক্ষেপগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামকরণে পরিবর্তন আনার বৃহত্তর নীতির অংশ।
মন্তব্য করুন