পশুপাখি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে প্রায় দুই শতাধিক আয়াত বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন পশুপাখির নামে সুরাও অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন—সুরা বাকারা (গাভি), সুরা আনআম (উট, গরু, বকরি প্রভৃতি গবাদি পশু), সুরা নাহল (মৌমাছি), সুরা নামল (পিপীলিকা), সুরা আনকাবুত (মাকড়সা), সুরা ফিল (হাতি) ইত্যাদি। মানবজাতির জন্য হেদায়াতের দিশারি পবিত্র কোরআনে এমন নামকরণ থেকেও পশুপাখির প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুমিত হয়। পশুপাখির প্রতি দয়া প্রদর্শনও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে কোনো প্রাণীর ওপর দয়া করার মধ্যেও রয়েছে প্রভূত সওয়াব।’ (বোখারি: ৬০০৯)
পশুপাখি লালনপালন করা খারাপ নয়। বরং এদের প্রতি যত্ন নেওয়া, আহার জোগানো, খোঁজখবর রাখা ইবাদত বলে গণ্য হয়। যারা পশুপাখি লালনপালন করেন তাদেরও খোঁজখবর রাখা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আনাস (রা.)-এর ছোট ভাই আবু উমায়ের শৈশবে একটা বুলবুলি পাখি পুষতেন এবং তার সঙ্গে খেলাধুলা করতেন। একদিন পাখিটি মারা গেলে তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কাছে গিয়ে তাকে আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘হে আবু উমায়ের! তোমার ছোট বুলবুলিটির কী হলো?’ (বোখারি: ৬১২৯)
পালিত পশুপাখিকে যথাযথ আহার দান, সঠিক যত্ন নেওয়া এবং তার যেন কোনো প্রকার কষ্ট না হয় সেদিকে ভালোভাবে খেয়াল রাখা জরুরি। রাসুল (সা.) এদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতে বলেছেন। অকারণে তাদের মেরে ফেলা, তাদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপানো, নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য কষ্ট দেওয়াকে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ সেই ব্যক্তির ওপর, যে অকারণে পশুর অঙ্গহানি ঘটায়।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৩২)। আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়াই কোনো পাখি হত্যা করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার হিসাব নেবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৫৪৬)
পশুপাখির প্রাপ্য হক আদায় করা জরুরি। সাধ্যমতো তাদের আহার জোগানো ও তাদের থেকে উপকৃত হলে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা এসব বাকশক্তিহীন প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। সুস্থ অবস্থায় এগুলোতে আরোহণ করো, সুস্থ অবস্থায় আহার করো।’ (আবু দাউদ: ২৫৪৮)। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক মহিলা একটি বিড়াল বেঁধে রেখে খেতে না দেওয়ায় মারা যায়। ফলে মহিলাটিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়।’ (বোখারি: ৩৩১৮)
পাখিদের অকারণে তাদের ধরে বন্দি করা ভালো কাজ নয়। তাদের মুক্ত আকাশে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে দেওয়া। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক সফরে আমরা রাসুলুল্লাহর সঙ্গে ছিলাম। এক জায়গায় আমরা একটি চড়ুই পাখিকে দুটি বাচ্চাসহ দেখতে পেলাম। আমরা বাচ্চা দুটিকে হাতে তুলে নিলাম। ফলে মা পাখিটি অস্থির হয়ে আমাদের মাথার ওপর ঘোরাঘুরি করতে লাগল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘বাচ্চা ছিনিয়ে নিয়ে কে তাকে কষ্ট দিয়েছে? তার বাচ্চা তাকে ফিরিয়ে দাও।’ (আবু দাউদ: ৫৩৫৬)
এসব পশুপাখি বিভিন্নভাবে মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। তাই আমাদের কর্তব্য তাদের প্রাপ্য হক ও অধিকার সুনিশ্চিত করা।
লেখক: ইমাম ও খতিব