মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে বিশাল এক ফার্নিচার মার্কেট। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মিরপুরে স্থানান্তর হওয়ার এক যুগের বেশি সময় আগ থেকেই এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল মার্কেট। স্টেডিয়ামের মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) প্রতি মাসে দোকান ভাড়াবাবদ বড় অঙ্কের টাকা পায়। সে কারণেই হয়তো ক্রিকেট বোর্ড স্টেডিয়াম লিজ নেওয়ার পরও দোকানগুলো সরায়নি এনএসসি। ২০০৬ সাল থেকে মিরপুরে হওয়া বিভিন্ন সিরিজ কিংবা টুর্নামেন্টের সময় মার্কেটটি বন্ধ রাখা রুটিনের অংশ। এক সময় ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ পরিশোধ করত বিসিবি। কিন্তু আট বছর ধরে অর্থ পরিশোধ করছে না তারা। এতে করে ‘বেকায়দায়’ পড়েছেন দোকান মালিকরা। আর টাকার অঙ্ক ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় পরিশোধ নিয়ে বিপরীত অবস্থানে চলে গেছে বিসিবি ও এনএসসি। এখন সমস্যা সমাধানে দোকান মালিকরা চেয়ে আছেন এনএসসির দিকে।
গত মার্চে আয়ারল্যান্ড সিরিজের টেস্টের প্রস্তুতিকালে এনএসসি থেকে দুটি চিঠি পায় বিসিবি। একটি চিঠিতে স্টেডিয়ামের ভেতরকার দোকানগুলো বন্ধ রাখা বাবদ ৯ দিনের ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়। অন্য চিঠিতে বিসিবির কাছ থেকে ২০১৩ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৮ বছরে পাওনা বাবদ সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য অনুরোধ করা হয়। ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে একটা সমস্যা চলমান থাকায় ২০২২-২৩-এর হিসাব সেখানে সংযুক্ত করা হয়নি। খুব শিগগির সে হিসাবও যুক্ত করা হবে। এনএসসির পাঠানো চিঠিগুলো দৈনিক কালবেলার হাতে আছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এপ্রিল ২০১৩ থেকে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত বিভিন্ন টুর্নামেন্টের জন্য দোকান বন্ধ রাখায় ক্ষতিপূরণ বাবদ বিসিবির কাছে পাওনার পরিমাণ ১১ লাখ ৪ হাজার ২২৮ টাকা। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেছিল বিসিবি; বাকি আছে ৬ লাখ ৪ হাজার ২২৮ টাকা। এরপর ২০১৬ সালে ৭৯ দিন, ১৭ সালে ৩০ দিন, ১৮ সালে ৪৫ দিন, ১৯ ও ২০ সালে ৫৬ দিন ও ২১ সালে দোকান বন্ধ ছিল ৩২ দিন। এতে পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৪১ টাকা। তবে ২০২২ ও ২৩ সালে হিসাব ধরলে সংখ্যাটা আরও বড় হবে (হিসাব করে দেখা গেছে অর্ধকোটির বেশি)। এই সময় মিরপুরে অনেক সিরিজ ও টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে বিসিবি।
পাওনা অর্থ পরিশোধে বিসিবির কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না এনএসসি। বিষয়টি নিয়ে এনএসসির যুগ্ম সচিব শেখ হামিম হাসান কালবেলাকে বলেছেন, ‘দোকান বন্ধ রাখায় ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ পরিশোধ করার জন্য আমরা বিসিবিকে একাধিকভাবে চিঠি দিয়েছি। প্রতিবারই (সিরিজে) বন্ধ রাখার যে চিঠি দিই, সেখানেও আমরা উল্লেখ করেছি যে—এই ক্ষতিপূরণের টাকা বিসিবিই পরিশোধ করবে। কিন্তু বিসিবি পরিশোধ না করায় দোকান ভাড়ার সঙ্গে এটি সমন্বয় করা যাচ্ছে না। অতীতে একবার পরিশোধ করার ফলে আমরা দোকান ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করেছিলাম। ব্যক্তিগতভাবেও আমরা যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু বিসিবি যে কোনো কারণে টাকা দেয়নি।’ মার্চে দেওয়া চিঠিরও কোনো উত্তর পায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা বিসিবির জন্যই অস্বস্তিকর হতে পারে। কারণ, এক সময় যখন তাদের এককালীন অনেক টাকা দিতে হবে, তখন সমস্যা আসলে বিসিবিরই হবে। যে কোনো কারণে বিসিবি এ টাকা পরিশোধ করার ব্যাপারে খুব একটা তৎপরতা দেখাচ্ছে না। এ নিয়ে বিসিবির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা কথা বলব, তারপর এ সমস্যার সমাধান হবে।’ গত এক যুগে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা বেড়েছে বিসিবির। বার্ষিক হিসাব বলছে, ৯০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে। তাদের জন্য অর্ধকোটি টাকা পরিশোধ করা খুব একটা বড় সমস্যা নয়। কিন্তু কী কারণে তৎপর নয়, তা জানতে চাইলে বিসিবির এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা চাইলে বন্ধ করে দিতে পারি (টাকা পরিশোধ), এটি কোনো বাধ্যবাধকতার বিষয় না। এটি এমন না যে আমাদের দিতেই হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এক সময় দিয়েছি। আবার কখনো মনে করলে দেব। এটি পুরোপুরি আমাদের সিদ্ধান্ত। ওটা (অর্ধকোটি বকেয়া পরিশোধ) নিয়ে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। এসব দোকান যারা নিয়েছেন, তারা কিন্তু একটা সুবিধাজনক শর্তেই নিয়েছেন, সুতরাং তারা একপ্রকার লাভবানও।’ সত্যিই কি বিসিবি চাইলেই পরিশোধ না করে পার পাবে? বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এনএসসির যুগ্ম সচিব হামিম বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে তো। স্টেডিয়াম তো সরকারের সম্পত্তি, সরকার করছে। আমরা তাদের বিনা শর্তে দিইনি, সরকার কাউকে কোনো কিছু বিনা শর্তে দেয় না। ওই শর্তের মধ্যে তারা এটি প্রতিপালন করতে বাধ্য।’ বিষয়টি নিয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংশ্লিষ্ট মহল আছে, চেয়ারম্যান (জাহিদ আহসান রাসেল) আছেন, ভাইস চেয়ারম্যান আছেন। বিসিবিরও দায়িত্বশীল মহল আছে। সবার সঙ্গে বসে এটার একটা সমাধান করতে হবে।’ তার মানে, সমস্যা সমাধানের জন্য একটা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে দোকান মালিকদের।
মন্তব্য করুন