দখলকবলিত জাতীয় স্টেডিয়ামের বিভিন্ন ফটক উদ্ধার করা হয়েছে বটে। সেগুলো এখনো ঠিক ফটকে রূপ পায়নি। কাঠামো পরিবর্তন করে ২০ প্রবেশদ্বারের যে অবস্থা করা হয়েছে, গ্যালারিতে যাওয়ার পথে যে কেউ বিভ্রান্ত হবেন। এটা দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়ামের বাইরের চিত্র, ভেতরেও থাকছে নানা অসংগতি।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামের প্রথম ফটক ছাড়া বাকিগুলো নানা জটিলতায় আক্রান্ত। ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ফটকে গড়ে তোলা হয়েছিল দোকান। সাম্প্রতিক অভিযানে ফটকগুলো দখলমুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো দেখে বোঝার উপায় নেই এ পথ ব্যবহার করে গ্যালারিতে যাওয়া যায়। এ ভেন্যুতে ম্যাচ উপভোগ করতে আসা দর্শকরা বিভ্রান্ত হবেন নিশ্চিত!
বিভিন্ন দোকান মালিক নিজেদের সুবিধামতো স্টেডিয়ামের ফটকগুলোকে দোকানে পরিণত করে নিয়েছিলেন। অভিযোগ আছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কিছু কর্মকর্তার যোগসাযশে এসব করা হয়েছে। ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ফটকে বাহারি ব্র্যান্ডিংয়ে গড়া হয়েছিল ইলেকট্রনিকস দোকান। দোকানগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছিল, বাইরে থেকে বোঝার উপায় ছিল না—এটা গ্যালারিতে যাওয়ার পথ। ১৮ ও ১৯ নম্বর ফটকে ছিল আবাবিল ইলেকট্রনিকসের সাইনবোর্ড। ২০ নম্বর ফটকে ছিল গোল্ডেন ইলেকট্রনিকসের সাইনবোর্ড। ডোল্ডেন ইলেকট্রনিকসের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা অপারগতা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর দখলে থাকা ফটকগুলো আপাতত মুক্ত করা হয়েছে বটে, সেগুলো আদৌ ফটক হিসেবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখা যাবে তো!
প্রায় চার বছরের ‘ম্যারাথন সংস্কার’ কাজ শেষে স্টেডিয়াম বুঝিয়ে দেওয়ার কথা চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে। এ ভেন্যুতেই বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজনের তোড়জোড় চলছে। বিপুল অর্থ ব্যয়ের পর গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যুর যে অবস্থা প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। ন্যূনতম শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এ স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। ভেতরটা বাহারি রঙের, বাহ্যিক চিত্র অবশ্য ছন্নছাড়া। নির্মাণকাজের ধকল পরিষ্কার স্টেডিয়ামের বাইরে। স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের পথগুলোও খনাখন্দে ভরা।
ভেন্যুর বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কম্পিটিশন্স কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম গাউস কালবেলাকে বলেছেন, ‘এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) গাইডলাইন অনুযায়ী সবকিছু তো আর পাওয়া যাচ্ছে না। যতটুকু নিশ্চিত করা যায় আমরা সে চেষ্টাই করছি।’ সাবেক এ ফুটবলার আরও বলেন, ‘গোটা স্টেডিয়াম ডিপ-ক্লিন করা জরুরি। এ কাজগুলো করা হলেই আমরা ভেন্যু বুঝে নেব।’
এএফসি এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক পরিদর্শনে নানা অসংগতি ফুটে উঠেছে। সেগুলো আদৌ কাটিয়ে ওঠা যাবে কি না—এখনো নিশ্চিত নয়। ফ্লাডলাইট স্থাপনের কাজ শেষ হলেও আলোর বিন্যাস ঠিক হয়নি। স্টেডিয়ামের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে থাকা অ্যাথলেটিকসের টাওয়ার নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন এএফসির প্রতিনিধি। বহনযোগ্য টাওয়ার তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে ম্যাচের সময় সরিয়ে নেওয়া যায়। পূর্বপাশে টিনশেড সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। মিডিয়া বক্সের চেয়ার-টেবিল নিয়েও জটিলতা চিহ্নিত করেছেন এএফসির প্রতিনিধি। গ্যালারির কিছু চেয়ার এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যেখান থেকে মাঠ দেখা যায় না। কয়েক জায়গায় বসার জন্য যাতায়াতের পথ মসৃণ নয়, এ জন্য কিছু চেয়ার তুলে ফেলতে হবে।
যদিও এনএসসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মো. আজমুল হক দাবি করলেন, ‘মেজর কোনো কাজ বাকি নেই। এখন যেটা চলছে, তা হচ্ছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজার কাজ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ভেন্যু বুঝিয়ে দিতে আমরা প্রস্তুত। সেভাবে বাফুফের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।’ বাফুফে থেকে জানানো হয়েছে, স্টেডিয়ামের ২০ ফটকের মধ্যে একটি ছাড়া বাকি ১৯ ফটকেই সমস্যা রয়েছে। ১৪ হসপিটালিটি বক্স রয়েছে স্টেডিয়ামে। দুটি ছাড়া বাকি ১২ বক্সে চেয়ার স্থাপন করার কথা। ১২ বক্সে প্রায় ৩০০ চেয়ার স্থাপন করার কথা। ম্যাচের আগে আদৌ বক্সগুলো প্রস্তুত করা যাবে কি না, নিশ্চিত নয়।
ভেন্যুর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে স্টেডিয়াম প্রশাসক কামরুল ইসলাম কিরন কালবেলাকে বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে এ ভেন্যু বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। সেভাবেই কাজ চলছে। বড় কাজগুলো শেষ, এখন শেষ মুহূর্তের ঘষামাজার কাজ বাকি। ১২ ফটকে সংস্কর করা হয়েছে। দর্শকদের নির্বিঘ্ন চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাই করা হয়েছে।’ কিন্তু সরেজমিন দেখে মনে হলো, জতীয় স্টেডিয়ামের ভেতরটা ফিটফাট আর বাইরে দোকানপাট।
মন্তব্য করুন