

‘সংস্কার ও পুনর্গঠন’ নামে ক্রীড়াঙ্গনে যা হচ্ছে, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। সংস্কারের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশ পাশ কাটানোর একাধিক ঘটনায় ক্রীড়া নিয়ন্তাদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেই। স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতির অভিযোগ ছিল—এমন ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের পর প্রশ্নটা জোড়ালো হচ্ছে।
২০২৫ সালের ২৮ মে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছিল। ৭ ডিসেম্বর অপর এক পত্রে সে কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সর্বশেষ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে হাজি মো. খোরশেদ আলমকে, যিনি চার দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে নানা অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে অলিম্পিকভুক্ত এ ফেডারেশনে। যার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা হাজি মো. খোরশেদ আলমের, কমিটিতে যাকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তা করতে গিয়ে উপেক্ষা করা হয়েছে সরকারের সংস্কার উদ্যোগের শর্তকে। শর্তটা ছিল, যারা দুই বা তার বেশি মেয়াদে অতীতে কমিটিতে ছিলেন, তাদের অ্যাডহক কমিটিতে রাখা যাবে না। হাজি মো. খোরশেদ আলমকে কমিটিতে স্থান দিতে গিয়ে দুর্নীতির অভিযোগকেও পাশ কাটানো হয়েছে।
কীসের মোহে, কার নির্দেশে এমনটা করা হয়েছে—জানা নেই বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশন সংশ্লিষ্টদের। দুর্নীতি এবং নারীঘটিত অভিযোগের তীর যাদের দিকে এমন একাধিক ব্যক্তিকে বিভিন্ন ফেডারেশনের কমিটিতে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। অভিযোগ আছে, সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবং সব নীতি-নৈতিকতা পায়ে মাড়িয়ে এসব করা হয়েছে। সব ক্ষেত্রে অভিযোগের তীর কিন্তু এনএসসির এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এসব করা হয়েছে। বিস্ময়করভাবে এ নিয়ে নির্বিকার দেশের ক্রীড়া প্রশাসন।
বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশনের বিগত দিনের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরাতে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ফেডারেশনের পক্ষ থেকেও বিগত কমিটির দায়িত্বশীলদের, বিশেষ করে কোষাধ্যক্ষকে হিসাব বুঝিয়ে দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সাবেক কোষাধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দিন মন্টু হিসাব বুঝিয়ে দেননি, হাজির হননি তদন্ত কমিটির সামনে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম কালবেলাকে বলেছেন, ‘বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, অলিম্পিকভুক্ত একটা জাতীয় ফেডারেশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাত্র ১ হাজার ১০০ টাকা রেখে গেছে বিগত কমিটি। অতীতে দায়িত্বশীলরা কাঠামো না মেনে অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করেছেন। বিগত দিনের হিসাব বুঝিয়ে দিতে কোষাধ্যক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, ডাকা হয়েছিল তদন্ত কমিটির সামনে। কিন্তু তিনি চিঠির জবাব দেননি, তদন্ত কমিটির ডাকে সাড়া দেননি।’ বিগত দিনের নানা কর্মকাণ্ডে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. খোরশেদ আলমের। গঠিত তদন্ত কমিটি তাকে ডাকেনি কেন? প্রশ্নের জবাবে মাকসুদ আলম বলছিলেন, ‘তিনি বয়স্ক মানুষ। এ কারণে তাকে সরাসরি চিঠি দেওয়া হয়নি। কিন্তু দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি তো কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারবেন না। কারণ কোষাধ্যক্ষ এবং সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরেই তো লেনদেন হয়।’ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই হাজি মো. খোরশেদ আলমকে রোইং ফেডারেশনে পুনর্বাসিত করা হয়েছে ব্যক্তিস্বার্থে—এটা পরিষ্কার।
মন্তব্য করুন