একটু জোরে ছক্কা হাঁকালেই বল গিয়ে পড়ে জমে থাকা পানির গর্তে। সেই বল দিয়ে ফের খেলা শুরু করা সম্ভব নয়। সে কারণে কয়েকবার বল পরিবর্তন করতে হয়েছিল। অথচ এই মাঠে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলে গেছেন বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মা। তার আগে শেন ওয়ার্নরা খেলেছেন। এই মাঠেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন জেসন গিলেস্পি। অথচ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে স্কুল ক্রিকেটের ফাইনাল দেখে মনে হলো, অচল মাঠে খেলা চলছে।
বাংলাদেশের অন্যতম টেস্ট ভেন্যুর এমন বেহাল অবস্থা দেখে হতাশ হয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। স্কুল ক্রিকেটের ফাইনালে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। মাঠে প্রবেশ করেই চারপাশ ঘুরে দেখলেন। মাঠ দেখে তার মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল, কতটা হতাশ তিনি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় চারপাশে জমে আছে পানি। এমন মাঠে একটা সময় অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মতো দেশ টেস্ট খেলেছিল—ভাবতেও কষ্ট হয়।
সুজন বললেন, ‘আমার জন্য খুবই হতাশজনক হয়, যখন আমি এ মাঠে আসি। টেস্ট ইতিহাস আছে, এমন মাঠগুলোর মধ্যে আমার মনে হয় ফতুল্লা একটা ইতিহাস। এখানে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট ম্যাচে আমরা প্রায় জেতার মতো অবস্থা তৈরি করেছিলাম।’
দীর্ঘদিন অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকা মাঠটির সংস্কার হলে বাংলাদেশ ক্রিকেটও লাভবান হতো, এমনই মনে করেন সুজন, ‘অবশ্য এখানে আমিও অনেক ম্যাচ খেলেছি। আমার কাছে মনে হয় ঢাকা থেকেও কাছে। যেখানে আমাদের ঢাকায় মাঠের জন্য হাহাকার থাকে, সেখানে অন্তত দুটি ভালো মাঠ থাকলে ভালো হতো।’
ফতুল্লা মাঠের অবহেলার খবর গণমাধ্যমে নতুন নয়। এ মাঠ সংস্কার করতে বুয়েট ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজও করেছিল জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা (এনএসসি)। তার পরও সংস্কার হয়নি। চলতি বাজেটে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতে আছে এ স্টেডিয়ামের সংস্কারের উদ্যোগ। এর জন্য এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দিয়েছে এনএসসি।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৫০ কোটি টাকার অনুমোদন হয়েছে, যা দিয়ে তারা মাঠের পরিকাঠামো উন্নত করবে। আর শুধু মাঠের গ্রাউন্ডের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বিসিবি। খুব শিগগির টেন্ডার আহ্বান করে মাঠ ভরাটের কাজ করতে চায় তারা। কিছুদিন আগেই বোর্ড সভা শেষে এমনটাই জানিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সুজনও, ‘আমরা বোর্ডে কথা তুলেছিলাম অন্তত একটা মাঠকে যেন সংস্কার করা হয়। আমরা দুটি মাঠকে সংস্কারের জন্য লড়াই করেছি, পাপন ভাই নিশ্চিত করেছেন দুটি মাঠে তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো হয়েছে, মাঠকে উঁচু করে খেলার মতো করা যাবে। আশা করি খুব শিগগিরই মাঠ ঠিক হয়ে যাবে।’
আপাতত মূল মাঠের চারপাশে ৬ ফুট উচ্চতায় মাটি ভরাট করতে চায় বিসিবি। এর জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছেন তারা। মাঠের মালিকানা এনএসসির হওয়ায় বিসিবিরও কিছু বাধ্যবাধকতা আছে বলে জানান সুজন, ‘যেহেতু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিয়ন্ত্রণে, সেহেতু অবশ্যই দায়িত্বটা তাদের। অনেকেই ভুল করে। বিসিবি চাইলেই কিন্তু অনেক কিছু করতে পারে না, কারণ মাঠের মালিক তো আমরা নই। তবে আমরা এবার এনএসসির অনুমতি নিয়ে এ মাঠগুলোতে যতটুকু সম্ভব কাজ করা যায়, করব।’
জাতীয় দল ছাড়াও প্রিমিয়ার লিগ, এইচপি, বয়সভিত্তিক দলসহ অনেকগুলো খেলার আয়োজন করতে হয় বিসিবির। এর জন্য অনেকগুলো মাঠেরও প্রয়োজন হয়। ফতুল্লার সংস্কার হলে সে সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে বলে মনে করেন সুজন, ‘আমরা টেস্ট খেলুড়ে দেশ, সামনে আমাদের প্রচুর খেলা আছে। আমাদের ম্যাচের সমন্বয় করতে হয়। আমাদের মাঠের প্রয়োজন আছে, এজন্য হয়তো বিসিবি চিন্তা করছে এ মাঠটা সংস্কার করার।’
বিসিবির এমন উদ্যোগে খুব শিগগিরই হতে পারে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের সংস্কার। ভবিষ্যতে এ মাঠে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরবে, এমনই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
মন্তব্য করুন