প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই সহোদর মো. সাখাওয়াত হোসেন (৩৪) ও সায়েম হোসেনের (২২) বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইচাইল গ্রামে। প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি সাখাওয়াত। মাদ্রাসায় পড়েছেন কয়েক মাস। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা মারা যাওয়ার পর পড়াশোনা ছেড়ে এক যুগ আগে গ্রামে অটোরিকশার অ্যাসিড পানির ব্যবসা শুরু করেন। বছর দেড়েক ব্যবসা করে সুবিধা করতে পারেননি। এরপর ছোট ভাই সায়েমকে নিয়ে ঢাকা চলে যান সাখাওয়াত।
রাজধানীর রাজারবাগ এলাকায় নতুন পানির ফিল্টার বিক্রি ও পুরোনো ফিল্টার মেরামতের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন সাখাওয়াত এন্টারপ্রাইজ। নিজেকে সেই প্রতিষ্ঠানের সিইও হিসেবে পরিচয় দিতেন সাখাওয়াত। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকাতেই থাকতেন তিনি। সাখাওয়াতের ফেসবুক আইডিতে দেখা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে তিনি হঠাৎ বিদেশ সফর শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই বিদেশ সফরের ছবি দিতেন।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ নগরের দিঘারকান্দা বাইপাস এলাকার কাদুরবাড়ি মোড়ে রয়েছে সাখাওয়াতের বাবা শাহেদ আলীর দোকান। সাহেদ আলী চল্লিশ বছর ধরে নিজের ওয়েল্ডিংয়ের দোকান পরিচালনা করেন। সংসার চালাতে এখনো চলেছে তার জীবনযুদ্ধ। ফুলবাড়ীয়ার ইচাইল গ্রামে নিজের ঘরটি জরাজীর্ণ হওয়ায় থাকেন আকুয়া বাইপাস এলাকায় ভাগনির বাসায়। কিন্তু তার দুই ছেলে সাখাওয়াত ও সায়েম ঢাকায় কাটান বিলাসী জীবন। ঘুরে বেড়ান এশিয়া ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে।
প্রতিবেশী গিয়াস উদ্দিন বলেন, দুই ভাইয়ের প্রায়ই বিদেশ সফর আমাদের আশ্চর্য করেছে। যারা নিজের বাড়ি ঠিক করতে পারেন না, তারা কীভাবে বিদেশ ঘুরে বেড়ান—বুঝতে পারছি না। বছরে দুই ঈদে পরিবার নিয়ে বাড়িতে আসতেন দুই ভাই। গত দুই বছর ধরে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার নিয়ে তারা বাড়ি আসতেন। তারা জানান, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ১১ লাখ টাকায় প্রাইভেটকারটি কেনেন। এলাকায় তারা ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। এ কারণে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তারা গ্রেপ্তার হওয়ায় এলাকাবাসী হতবাক। তবে ঘটনা সত্য হলে বিচার করা হোক সাখাওয়াত ও সায়েমের।
শাহেদ আলী কালবেলাকে বলেন, আমার ছেলে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত থাকলে তার ব্যবসা কে দেখত? সে চক্রে জড়িত নয়। তারা যে ব্যবসা করে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে বসে থাকতে হয়, মেরামতের কাজে যেতে হয়। আমার ছেলেরা ব্যবসায় যেহেতু এগিয়ে যাচ্ছে, সেজন্য তাদের দাবিয়ে দিতে এসব কথা বলছে। তাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে বিদেশে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, সাখাওয়াত ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছে। ওদের কোনো টাকা নেই। ব্যাংকে প্রায় এক কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। আমি আমার জমি বিক্রি করে দোকান দিয়েছি।
চার ভাই-বোনের মধ্যে সাখাওয়াত সবার বড় এবং সায়েম সবার ছোট। সায়েম ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও আর পড়াশোনা করেননি। দুই বছর আগে সে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হন। সাখাওয়াতের এক বোন চাকরি করেন ঢাকার একটি ব্যাংকে, ছোট বোন পড়ছেন ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে।