রাজধানীর মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) সহযোগী অধ্যাপক, স্পেশাল কেয়ার নিউনেটাল ইউনিট ও নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ারের ইনচার্জ ডা. মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থ্যানে সরকার পতনের আগের দিন পর্যন্ত তিনি আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক হিসেবে আইসিএমএইচ দাপিয়ে বেড়াতেন। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে প্রভাব বিস্তার করতেন। তার কাছে জিম্মি ছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে নিজেই গড়ে তোলেন বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতাল। আইসিএমএইচ থেকে নিজের হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিতেন। এ কাজে গড়ে তুলেছিলেন দালাল চক্র। তবে গণআন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি ভোল পাল্টে বিএনপিপন্থি চিকিৎসক বনে গেছেন। এখনো তিনি সব অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রেখেছেন।
বিএনপিপন্থি চিকিৎসক পরিচয়ে ডা. মজিবুর রহমান বহিরাগতদের নিয়ে আইসিএমএইচের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের জোর করে তার সঙ্গে সভা-সমাবেশ করতে বাধ্য করছেন। এতে হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমন অভিযোগ ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আওয়ামী লীগের কোনো শীর্ষ নেতা ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নেই। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী বাগিয়ে নেওয়ার কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারলে যা শাস্তি হোক মেনে নেব। বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতাল আমার নয়, আমি সেখানে একজন কনসালটেন্ট মাত্র। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তারা চিকিৎসাসেবা ফেলে পালিয়ে গেছেন। আমরা চিকিৎসাসেবায় কাজ করে যাচ্ছি।
আইসিএমএইচের একাধিক চিকিৎসক-কর্মকর্তা জানান, ডা. মুজিবুর রহমান এখন ক্ষমতা দখলের নেশায় বহিরাগতদের নিয়ে হাসপাতাল প্রশাসনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। নির্বাহী পরিচালক যেন বাধ্য হন পদত্যাগে, তার জন্যে সব কর্মচারীর জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে এবং নিজেই কর্মবিরতির ডাক দিয়ে হাসপাতালে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা সেবা কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত করছেন। বিএনপিসমর্থিত চিকিৎসক পেশাজীবী সংগঠন ড্যাবের নব্য নেতা সেজে ডা. মুজিবুর আইসিএমএইচের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করছেন, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ওই চিকিৎসক এখানে দীর্ঘদিন থেকে রোগী নিয়ে বাণিজ্যসহ নানা অপকাজে জড়িত।
কালবেলার হাতে আসা তথ্য বলছে, ডা. মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমসহ একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সখ্য রয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডা. মুজিবুর সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য মন্ত্রণালয়ে ও ইনস্টিটিউটের বোর্ড অব গভর্নরসের আবেদনপত্র জমা দেন। এতে সুপারিশ করেন শেখ সেলিম। আইনবহির্ভূতভাবে আওয়ামী লীগের এ শীর্ষ নেতাকে দিয়ে তার পদোন্নতির জন্য তদবির করেন তিনি। তবে সরকার পতনের পর তিনি ভোল পাল্টে বিএনপিপন্থি চিকিৎসক বনে যান। ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, শেখ সেলিম আইসিএমএইচ বোর্ডের একজন সদস্য ছিলেন। পদোন্নতির সব শর্তপূরণের পর তার সুপারিশ নেওয়া অপরাধ নয়।
জানা যায়, ডা. মজিবুর রহমান ২০০৫ সালের ২৫ আগস্ট আইসিএমএইচে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার (শিশু) হিসেবে যোগ দেন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সহকারী অধ্যাপক (শিশু) এবং ইনচার্জ (স্ক্যানু) হিসেবে কাজ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই সহকারী অধ্যাপক শিশু (শূন্য) পদে পদোন্নতি পেয়ে পাঁচ বছর ধরে ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৫ সালে ডিসিএইচ এবং ২০১৫ সালে এফসিপিএস (নিওনেটোলজি) পাস করেন।