রাজশাহী ওয়াসায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেন মো. সোহেল রানা ডন। তবে প্রকৌশলীর চেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন ব্যবসায়ী। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করেন মহানগরের রাজনীতিও। ২০১৬ সালে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারও হন তিনি। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করে ফের আলোচনায় আসেন। রাজশাহী ওয়াসার মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত ডনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়রা।
জানা গেছে, সোহেল রানা ডন ওয়াসার প্রকৌশলীর পাশাপাশি সুলতান ডাইনসের রাজশাহী শাখার মালিক। এ ছাড়া তিনি ইউসিসি কোচিং ও রয়েল মেডিকেল কোচিংয়েরও রাজশাহী শাখার মালিক হিসেবে রয়েছেন। ওয়াসার ঠিকাদারি কাজেরও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ তার হাতে। কারণ রাজশাহীর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের স্ত্রী শাহিন আক্তার রেনির ঘনিষ্ঠ তিনি। আর লিটন-রেনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পুরো ওয়াসাই ছিল ডনের হাতের মুঠোয়। অনেক সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে রাজশাহী ওয়াসার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বও নেন ডন। পুরো প্রকল্পে রয়েছে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ। আর নিজে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। দামকুড়া হাট এলাকায় কিনেছেন একসঙ্গে ৫০ বিঘারও বেশি জমি। রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। ২০১৬ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিনি। তবে সাবেক মেয়র লিটনের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যান।
জানা গেছে, অঢেল সম্পদ অর্জনের উৎস খুঁজে বের করতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছেন রাজশাহী ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিভাগীয় দুদক অফিসে এ অভিযোগ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্তদের অভিযোগ, রাজশাহীতে আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন ডন। এমনকি ৫ আগস্ট রাজশাহী নগরীর আলুপট্টিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগের অস্ত্র ও অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাজশাহী আদর্শ কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজের শিক্ষার্থী রক্তিম ইসলাম রিমন বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় এসব বিষয়ে একটি মামলাও করেন। সেই মামলার এজাহারে ৪ নম্বরে সোহেল রানা ডন ও ৫ নম্বরে তার স্ত্রী সায়েরা বানুর নাম রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সোহেল রানা ডনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাজশাহী ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিছুদিন ধরে ডন অফিসও করছেন না।