মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২
রাশেদ রাব্বি
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৯ এএম
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেড় মাস পরিচালক নেই বার্ন ইনস্টিটিউটে

সেবাদান ব্যাহত
দেড় মাস পরিচালক নেই বার্ন ইনস্টিটিউটে
ছবি: সংগৃহিত

দেড় মাস ধরে পরিচালক ছাড়াই চলছে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। গত ১৮ নভেম্বর ভূতপূর্ব পরিচালক অধ্যাপক ডা. রায়হানা আওয়াল অবসরে যান। এরপর গত দেড় মাসে কোনো পরিচালক নিয়োগ করেনি সরকার। এমনকি কোনো কর্মকর্তাকে আয়ন-ব্যয়ন ক্ষমতাও দেওয়া হয়নি। এতে ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৯৫০ কর্মীর দুই মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা কেনাকাটা বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিচালক না থাকা ও হাসপাতালে অচলাবস্থা সৃষ্টির পেছনে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব এবং ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম-এনডিএফ সমর্থিত কয়েকজন চিকিৎসকের পরিচালক পদে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানান, পরিচালক নিয়োগ না হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে এনডিএফ সমর্থিত যুগ্ম পরিচালক ডা. মারুফুল ইসলাম এবং ড্যাব সমর্থিত ডা. ফোয়ারা তাসমীমের অন্তর্দ্বন্দ্ব। ডা. ফোয়ারা তাসমীম নিজে চলতি দায়িত্বে অধ্যাপক হয়ে পরিচালক হওয়ার চেষ্টা করছেন। গত ১৯ ডিসেম্বর তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বঞ্চিত চিকিৎসক হিসেবে সভায় উপস্থিত ছিলেন।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ইতোপূর্বে রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনায় সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। অন্যদিকে ডা. মারুফুল ইসলাম বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন, তিনিও ওই পদ পেতে চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিনও পরিচালক হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। তিনিও ড্যাবের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, পরিচালক পদপ্রত্যাশীদের একটি অংশ অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল যাতে ফের পরিচালক হতে না পারেন সেজন্য ঢাকা মেডিকেলের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের দিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর ইনস্টিটিউটের সামনে সমাবেশের আয়োজন করান। কারণ ওই সময় গুঞ্জন ছিল, অবসরোত্তর ছুটি বাতিল করে অধ্যাপক রায়হানাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার।

বর্তমানে যুগ্ম পরিচালক ডা. মো মারুফুল ইসলাম পরিচালকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তার ডিডিও (আয়ন ব্যায়ন) না থাকায় এবং প্রতিষ্ঠানে অন্য কোনো কর্মকর্তার ডিডিও ক্ষমতা না থাকায় সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা বন্ধ রয়েছে। এতে ইনস্টিটিউটে কর্মরত শিক্ষক, চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীর বেতন পর্যন্ত হচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রোগীদের জরুরি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ (অস্ত্রোপচারের সুতা, তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ এবং জরুরি ওষুধ) সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব রোগীরা নিজেদের অর্থায়নে চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে দিতে পারছেন না, তাদের চিকিৎসাও হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ইনস্টিটিউটে অপারেশন থিয়েটার মোট ১০টি। এর মধ্যে প্লাস্টিক সার্জারির জন্য ৫টি এবং বার্ন বা দগ্ধদের জন্য ৫টি। আগে দিনে ১৫ থেকে ২০টি অস্ত্রোপচার হলেও বর্তমানে সেটি অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারণ অস্ত্রোপচারের অনুষঙ্গের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্লাস্টিক সার্জারির জন্য সূক্ষ্ম যে সুচার বা সূতা ব্যবহার হয়, বর্তমানে সেগুলোর সরবরাহ নেই। এক্ষেত্রে রোগীরা নিজ উদ্যোগে এসব সরঞ্জাম কিনে দিলেই অস্ত্রোপচার হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়ার্ডগুলোতে দগ্ধ রোগীদের ড্রেসিংয়ের জন্য নরমাল স্যালাইন প্রয়োজন। কিন্তু সরবরাহ স্বল্পতার কারণে যেসব রোগীকে প্রতিদিন ড্রেসিং করাতে হয় তাদের নিজেদেরই স্যালাইন কিনে দিতে হয়। দগ্ধ রোগীদের ইনফেকশনজনিত জটিলতায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিকল্প অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করার ফলে রোগীর জটিলতা বাড়ছে।

জানা গেছে, পরিচালক না থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতনের ক্ষেত্রে। ইনস্টিটিউটে বর্তমানে প্রায় ৬৫০ জন নার্স, তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী প্রায় ৫০ জন এবং ২৫০ চিকিৎসক রয়েছেন। পরিচালক বা ডিডিও শিপ না থাকায় তারা বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণি আউট সোর্সিং কর্মীদের বেতন বন্ধ প্রায় তিন মাস। তাই অনেকেই চাকরি ছেড়ে গেছেন, আবার দলীয় বিবেচনায় অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে বার্ন ইনস্টিটিউটের মতো বিশেষায়িত স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা যথাযথভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না।

এসব বিষয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক ডা. মারুফুল ইসলাম বলেন, ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছি; কিন্তু আমাকে আয়ন-ব্যয়ন ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। ফলে কর্মীদের বেতন, হাসপাতালের স্বাভাবিক কেনাকাটা ইত্যাদি বন্ধ রয়েছে। বেতন না পাওয়ায় কর্মীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে রোগীদের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবাও ব্যাহত হচ্ছে।

ড্যাব ও এনডিএফ দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি এমন নয়। তবে ইনস্টিটিউটের ভেতরে ও বাইরে অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করছেন এবং চেষ্টা করছেন। তবে সামগ্রিকভাবে পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ওপরই বর্তায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে যা বললেন আমিনুল

১৩ বছরের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চায় গাজীপুরবাসী

সুন্দরবনে ভেসে গিয়ে বেঁচে ফিরলেন কুয়াকাটার পাঁচ জেলে

শিশু হত্যার দায়ে একজনের ৭ বছরের কারাদণ্ড

সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

যুক্তরাজ্যের বিশেষ দূতের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদলের বৈঠক

পাইকগাছা রিপোর্টার্স ইউনিটির দ্বি-বার্ষিক কমিটি গঠন

বৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরম নিয়ে নতুন বার্তা আবহাওয়া অফিসের

গুগলে দ্রুত প্রয়োজনীয় তথ্য জানার ৭ কৌশল

১০

পুনরায় বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হলেন মনজুর আলম

১১

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আ.লীগ নেতা ও তার ছেলের ইলিশ শিকার

১২

কবরস্থান-মসজিদ রক্ষায় রেলকর্মীদের আলটিমেটাম

১৩

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকার / এককভাবে সরকার গঠনে আত্মবিশ্বাসী তারেক রহমান

১৪

চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যের প্রতারণা, সেনা অভিযানে গ্রেপ্তার

১৫

কোরআনে হাফেজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

১৬

বাংলাদেশে নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে তুরস্ক

১৭

৫ দিনের মাথায় আবারও গুলি করে যুবককে হত্যা

১৮

আ.লীগ নেত্রী আকলিমা তুলি গ্রেপ্তার

১৯

এক ভিসায় যাওয়া যাবে আরবের ৬ দেশে, কীভাবে?

২০
X