নিজ দলের কর্মীদের মারধর, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ সব অপকর্মে নেতৃত্ব দেন তিনি। তুচ্ছতাচ্ছিল্যের কারণে সাধারণ মানুষকে মারধর করে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হলেও তিনি ও তার লোকজনের দাপটে স্বস্তিতে নেই দলীয় নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে নেতাদের নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জেলা শ্রমিক দল। বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটিও। এ ছাড়া কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা বিএনপি। আলোচিত এই ব্যক্তি হলেন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন।
জানা যায়, আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পরই নাসিম আকন ও তার ভাই ফিরোজ আকন উপজেলার টেন্ডারপ্রাপ্ত ১৭ প্রকল্পের প্রায় ৪০ কোটি টাকার কাজ নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নেতারা এসব কাজের ঠিকাদার। কাগজেকলমে এখন তাদের নাম থাকলেও বাস্তবে মাঠের কাজ করছেন নাসিম ও তার ভাই। পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এরা প্রথমে প্রকল্পের স্থান দখলে নেন। এরপর একাধিক প্রকল্প স্থান থেকে মালপত্রসহ সরঞ্জাম নিয়ে যান। এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করে নাসিম আকন তার লোকজন নিয়ে এসব কাজ করছেন। যদিও বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ভয়ভীতি, আতঙ্ক সৃষ্টি করে চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থার কথা বলা হলেও রাজাপুরে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, রাজাপুর উপজেলায় যেসব প্রকল্পের চাঁদাবাজিতে বাধা দিয়েছি, তার একটা প্রকল্প আমার বাড়ির সামনে। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন এবং বলেছেন, নাসিম
ভাইয়ের কাছ থেকে পারমিশন না নেওয়ার আগে কোনো কাজ হবে না। নাসিম উদ্দিন আকনের দাপটে স্বস্তিতে নেই এলাকার মানুষ। তাদের অভিযোগ নাসিমের লোকজনের বাধায় কোনো কাজ শেষ হচ্ছে না। কাজের এলাকা থেকে মালপত্র লুট ও ঠিকাদারদের মারধর করে চেক ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়ির সামনে বিএডিসির খাল কাটা কর্মসূচি চলমান। সেখানেও চাঁদা চায় নাসিম আকনের লোকজন। ঠিকাদারের ম্যানেজারকে ধরে হুমকি দিয়েছে নাসিম আকনের সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মামুনসহ কয়েকজন। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করায় আমার পরিবারের সদস্যদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমাদের পরিবারকে বন্দি করে রেখেছে। যারা আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে তাদেরও এলাকায় থাকতে দেবে না বলে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ আমার পরিবারের প্রত্যেক সদস্য ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ভুক্তভোগী।
কেবল এসবই নয়, রাজাপুরের বিভিন্ন হাটবাজার এবং ব্যবসায়ীদের তালিকা করে চাঁদা দাবির অভিযোগও রয়েছে নাসিম আকনের লোকজনের বিরুদ্ধে। এমনকি পকেট কমিটি গঠন করে স্বাক্ষর না করায় লাঞ্ছিত করা হয়েছে জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি টিপু সুলতানকে।
এদিকে চাঁদা দাবি এবং হুমকির বিষয়ে অবগত হয়ে নাসিম আকনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. সৈয়দ হোসেন এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. শাহাদাৎ হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না—এমন বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানতে চাওয়া হয়েছে।
বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল ইতঃপূর্বে মিডিয়ায় বলেন, আমার কাছে এক লোক ফোনে বলছে, শুক্তাগর ইউনিয়নে স্কুল ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি নাসিম আকনকে ফোন করে বলেছি, এখানে চাঁদাবাজির জায়গা নেই। পরদিনই সেই কাজ শুরু হয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাদাৎ হোসেন বলেন, এসব কাজ যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বিএনপি। ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাজাপুরের বিষয়গুলো আমরাও শুনেছি। আরও খোঁজখবর নিয়ে প্রমাণ সাপেক্ষে হাইকমান্ডকে অবহিত করব।
জাতীয় নাগরিক কমিটির নির্বাহী সদস্য তুহিনকে
হুমকি ও তার পরিবারকে লাঞ্ছিত করার নিন্দা ও
প্রতিবাদ জানিয়েছে। ৫ জানুয়ারি সংগঠনের সহ-মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তারা এ প্রতিবাদ জানান।
জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি টিপু সুলতান বলেন,
নাসিম আমাকে উপজেলা শ্রমিক দলের এক সভায় অশ্রমিক দিয়ে পকেট কমিটি করে তা অনুমোদন করতে বলে। এতে রাজি না হওয়ায় আমাকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে জেলা শ্রমিক দল গত ১৫ নভেম্বর নাসিম আকনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
নাসিম আকন বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এসব
করা হয়েছে।