হিমালয়কন্যা খ্যাত দেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি পেছাচ্ছে। আগামী ১৫ জুন থেকে এই বিদ্যুৎ আমদানির কথা থাকলেও বাংলাদেশের প্রস্তুতি নেই। গতকাল মঙ্গলবার নেপালের গণমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে না পারায় ১৫ জুন থেকে নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি পুরোপুরি সরকারের উচ্চমহলের ওপর নির্ভর করছে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে এখনো কাজ চলছে।
এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করে নেপাল। ওইদিন দুপুর ১টায় দেশটি থেকে ভারতের গ্রিড লাইন (সঞ্চালন লাইন) ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে ওই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পিডিবির সদস্য (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) আ ন ম ওবায়দুল্লাহ এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। আমরা চাই বিদ্যুতে দক্ষিণ এশিয়ার রিজিওনাল কানেক্টিভিটি তৈরি করতে।’
এ সময় তিনি ১৫ জুন থেকে নেপালের বিদ্যুৎ আমদানি শুরু না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তবে এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।
কবে নাগাদ আমদানি হতে পারে জানতে চাইলে পিডিবির এই সদস্য বলেন, ‘এটা বিদ্যুৎ বিভাগ বলতে পারবে।’
কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ১৫ জুন থেকে বাংলাদেশে নেপালের বিদ্যুৎ রপ্তানি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ এখনো লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে পারেনি। নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (এনইএ) কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গত বছরের বকেয়াও পরিশোধ করেনি। গত বছর নেপাল, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী আগামী সপ্তাহে রপ্তানি শুরু হওয়ার কথা।
ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী দীপক খাড়কা, ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লাল এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফজলুল কবির খান যৌথভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির উদ্বোধন করেন। সেদিন ৪ লাখ ৭০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি হয়েছিল। এর বিপরীতে বিল হয়েছিল ৩০ হাজার ৮০ মার্কিন ডলার, যা এখন পর্যন্ত পিডিবি পরিশোধ করেনি।
তবে পিডিবির সদস্য (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) আ ন ম ওবায়দুল্লাহ বলেছেন, নেপালের কোনো বিল বকেয়া নেই।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ আলোচনা শুরু করে ছয় বছর আগে। ২০১৮ সালে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ। নেপালের ওই জলবিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিড লাইন ব্যবহার করে আনতে হবে বলে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তি হয়নি। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে গত বছরের ৩ অক্টোবর ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সাত মাস বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে নেপাল।
এর আগে গত বছরের ১১ জুন আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নেপাল থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছিল।
তখন প্রতি ইউনিটের দর ঠিক হয় ৮ টাকা ১৭ পয়সা, যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয়ের চেয়ে কম। বাংলাদেশে এখন প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় ১১ টাকার বেশি। চুক্তির আওতায় এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সাত মাস বিদ্যুৎ আসবে। প্রতি বছর আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকা হিসাবে এই বিদ্যুৎ কিনতে পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬৫০ কোটি টাকা।
মন্তব্য করুন