বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভেঙে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করছে প্রভাবশালী একটি মহল। সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য সহকারী অধ্যাপক পদে চার বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হলেও সেই অভিজ্ঞতা না থাকা ব্যক্তিকে নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে সিন্ডিকেট। নিয়োগ পাওয়ার জন্য ডা. মিলিভা মোজাফফর নামে এক প্রার্থী আবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্য আমলে নিয়ে তাকে নিয়োগ দিতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বিএমইউতে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে দুজন সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কমপক্ষে চার বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। এই দুই পদের বিপরীতে দেশে-বিদেশে নামিদামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা আবেদন করেন। কিন্তু সিন্ডিকেট চাকরির শর্ত পূরণ না করা প্রার্থীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
যে দুজনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে একজন মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিলিভা মোজাফফর। ডা. মিলিভা ২০১৭ সালে রাজধানীর উত্তরার ওই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। তার এই নিয়োগ ২০২২ সালের ১০ মে কলেজের গভর্নিং বডি অনুমোদন করে। সে অনুযায়ী তিনি সহযোগী অধ্যাপক পদের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম চার বছর সহকারী অধ্যাপক নিয়মিত পদে চাকরির শর্ত পূরণ করেননি।
তবে তিনি আবেদনপত্রে নিজেকে ২০১৭ সাল থেকেই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে উল্লেখ করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়োগ বোর্ডে সাক্ষাৎকারের জন্য নির্বাচিত করা হয়। এ সময় তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য একাধিক প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যক্ষ ডা. মেজর (অব.) শেখ ফিরোজ কবির কালবেলাকে বলেন, ডা. মিলিভা প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান, যা ২০২২ সালের ১০ মে কলেজের গভর্নিং বডি অনুমোদন করে এবং এ-সংক্রান্ত নথিতে একই মাসের ১৯ মে আমি স্বাক্ষর করি।
সূত্র জানায়, চলতি বছরে ২৭ মে চাকরি প্রার্থীদের মধ্য থেকে মৌখিক সাক্ষাৎকার শেষে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়। এই তালিকায় ছিলেন খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জেবা উন নাহার, বিএমইউর সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফিল ডিগ্রীধারী ডা. মোহাম্মদ আলী ও ডা. মিলিভা। কিন্তু দেখা যায় ৩১ মে সিন্ডিকেট সভায় যে দুজনের নাম পাস হয়, সেখানে জেবা ও মিলিভার নাম উল্লেখ করা হয়। বাদ পড়েন ডা. আলী।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনকারীর অন্তত তিন বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা ন্যূনতম চার বছর অন্যান্য স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে সহকারী অধ্যাপক পদে সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু মিলিভার এই অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় তিনি তথ্য গোপন করে চলতি দায়িত্বকেও এই পদে চাকরির জন্য অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখান, যা বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি চাকরি উভয় ক্ষেত্রের ব্যত্যয়।
এ বিষয়ে বিএমইউর রেজিস্ট্রার ডা. নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে দুজন নিয়োগের বিষয়ে সিন্ডিকেটে পাস হয়। একজন এরই মধ্য নিয়োগ পেয়েছেন। অন্যজনের বিষয়ে এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এটুকু বলতে পারি, স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে ডা. মিলিভা মোজাফফর কালবেলাকে বলেন, সিন্ডিকেটে পাস হয়ে রয়েছে, কিন্তু নিয়োগ এখনো দেয়নি। উত্তরা মহিলা মেডিকেলে আমার রয়েছে সহকারী অধ্যাপক পদে তিন বছর ও চলতি দায়িত্বে রয়েছে দুই বছরের অভিজ্ঞতা।
তবে সর্বশেষ জানা গেছে, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ডা. মিলিভারের কাগজপত্র যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল কাউন্সিলে প্রেরণ করেছে। তারা যাচাই করে রিপোর্ট দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বিএমইউ কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য করুন