সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে সারা দেশে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। অভিযানের ভয়ে কোম্পানীগঞ্জের বল্লাঘাট থেকে ধোপাগুল পর্যন্ত ক্রাশার মিল ও মজুত এলাকায় বিভিন্ন ক্রাশার মিলের মালিক লুট করা পাথর বালু ও মাটি দিয়ে ঢেকে আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এদিকে, যৌথ বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে, সাদা পাথর লুট ও চুরির ঘটনায় ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর তিন ধাপে ৯০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারের পর এসব পাথর দিয়ে প্রশাসন পর্যটন কেন্দ্রগুলো সাজানোর চেষ্টা করছে।
সরেজমিন দেখা যায়, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের ক্রাশার মিলের সামনে আমদানি করা পাথর রাখা ও মিলের পেছনের লুটের পাথর বালু ও মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ দ্রুত পাথর ভেঙে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ধোপাগুলের মিলে মাটি ফেলে পাথর ঢেকে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বুধবার রাতে অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে কোম্পানীগঞ্জ থেকে ধোপাগুল পর্যন্ত অনেক ক্রাশার মিল বন্ধ। গতকাল জেলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ক্রাশার মিলের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। অভিযানের কারণে অনেক মিল মালিক ও বালু-পাথর ব্যবসায়ী গা-ঢাকা দিয়েছেন।
এক শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। তিনি বলেন, চুরি ও লুট হওয়া সাদাপাথরের পাথরগুলো অনেক মিল মালিক কিনেছেন। তারা প্রশাসনের অভিযানের ভয়ে পাথরের ওপর বালু ও মাটি ফেলে আড়াল করার চেষ্টা করছেন।
সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াৎ কালবেলাকে বলেন, ‘সাদাপাথরের লুট হওয়া পাথর বালু ও মাটিচাপা দিয়ে আড়ালের চেষ্টা করছেন কিছু মিল মালিক—এমনটা শুনেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন বাড়িতে পাথর লুকানো হচ্ছে বলেও খবর মিলেছে। পাথর উদ্ধার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ কালবেলাকে বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জ ও ধোপাগুলের বিভিন্ন স্থানে লুটের পাথর মাটিচাপা দেওয়ার সংবাদ শুনে আমরা অভিযান চালিয়েছি। পাথর উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কী পরিমাণ পাথর জব্দ করা হয়েছে, তা আমরা দুদিন পর জানাব।’
১৫০০ জনকে আসামি করে মামলা: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদা পাথর লুট ও চুরির ঘটনায় ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে। থানা সূত্রে জানা যায়, খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হাবীব গতকাল রাতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতকারী গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধ ও অননুমোদিতভাবে কোটি কোটি টাকার পাথর লুটপাট করেছে মর্মে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে পাথর লুট ও চুরির ঘটনায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন