ফেসবুক গ্রুপের নাম ফোন লাইব্রেরি। অর্ডার করলেই পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ফোন। ঘরে বসে একেবারে নতুন ফোন, তাও আবার বাজার মূল্যের অর্ধেকে। গ্রুপটির আবার শোরুমও আছে রাজধানীর মিরপুরেই। চটকদার বিজ্ঞাপনে ভুলে দোকানের ঠিকানা দেখে আশ্বস্ত হয়েছেন ক্রেতারা। চোখ বন্ধ করে পণ্য অর্ডার করেছেন। অগ্রিম টাকাও পাঠিয়েছেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। কথা ছিল এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত মোবাইল পৌঁছাবে গ্রাহকের দুয়ারে। তবে শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি গ্রুপ অ্যাডমিন সামিউজ্জামান শুভ।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না করে গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা মেরে লাপাত্তা হন তিনি। অভিনব এই প্রতারকের বিরুদ্ধে মিরপুর শাহ আলী থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি সূত্র জানায়, অভিযুক্ত শুভ ২০২০ সালে ফেসবুকে ফোন লাইব্রেরি নামে গ্রুপ খোলেন। এরপর ২০২১ সাল থেকে শুরু করেন প্রতারণা। প্রায় এক বছর পর্যন্ত গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হন তিনি। তার প্রতারণার শিকার শতাধিক মানুষ।
মামলায় বলা হয়, বাজার মূল্যের চেয়ে কম বা প্রায় অর্ধেক দামে দেওয়া হবে নতুন মোবাইল ফোন—এমন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে ফেসবুকে গ্রুপ খোলেন শুভ। রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের একটি শপিং কমপ্লেক্সে দোকানও ভাড়া নেন। তার শর্ত, নির্ধারিত দামের অর্ধেক দিয়ে মোবাইল বুকিং দিতে হবে। টাকা নেওয়ার পর তিনি আবার গ্রাহকদের ভাউচারও দিতেন। এরপর মোবাইল সরবরাহের আগের দিন পুরো টাকা পরিশোধ করতে বলতেন। গ্রাহকদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে শুরুতে বেশ কয়েকজনকে ঠিকঠাক মোবাইল ডেলিভারিও করেন শুভ। যেসব গ্রাহককে যথাযথভাবে পণ্য ডেলিভারি করেছেন তাদেরকে ফেসবুক গ্রুপে পণ্য পেয়েছে মর্মে পোস্ট (রিভিউ) দিতে উৎসাহিত করেন। যাতে সেসব পোস্ট দেখে অন্য গ্রাহকরা পণ্য কেনার জন্য অগ্রিম টাকা দিতে আশ্বস্ত হন।
ঘটনা অনুসন্ধানের পর সিআইডি জানায়, অর্ডার করা পণ্যের মূল্য তিনি মোবাইল ব্যাংকিং ছাড়াও দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিতেন। প্রথমদিকে গ্রাহকদের পণ্য দিলেও পরে যখন অনেক টাকা তার জমা হয়ে যায় তখন আর কোনো পণ্য দেননি। অভিযুক্ত শুভ শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার বেশি নিয়ে পালিয়ে গেছেন।
ফেসবুক গ্রুপটিতে ঢুকে দেখা যায়, অধিকাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পোস্টে শুভকে প্রতারক বলে কমেন্ট করেছেন। ২০২১ সালে গ্রুপে পোস্ট দিয়ে অভিযুক্তরা জানান, সমস্যার কারণে মোবাইল ডেলিভারি আপাতত বন্ধ আছে। সবার হাতে পণ্য পৌঁছাতে দেরি হবে। আর যদি কারও পণ্য না দেওয়া যায় তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু এই পোস্ট দেওয়ার পর আর কোনো গ্রাহকের ফোন রিসিভ করেননি। রিপ্লাই দেননি মেসেঞ্জারেও। কিছুদিন পর তিনি তার দোকানটিও বন্ধ করে দেন। পরে গ্রাহকরা বুঝতে পারেন প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন তারা।
মো. আরিফ হোসেন নামে এক গ্রাহক বলেন, স্বপ্ন ছিল কষ্টে জমানো টাকা দিয়ে পছন্দের মোবাইল কেনার। গরিবের সে স্বপ্ন পূরণ হলো না। টাকা ফেরত পাব কিনা তাও জানি না।
সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান কালবেলাকে বলেন, অভিযুক্ত শুভর নামে প্রতারণা মামলা করেন কয়েক গ্রাহক। পরে সেই মামলা তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়। কম দামে মোবাইল ফোন দেওয়ার বিষয়টি একদম পরিকল্পিত প্রতারণা। সে ১০০ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১০ জনকে মোবাইল দিত। তাদের ফেসবুকে রিভিউ দেওয়ার কথা বলত অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য।
মন্তব্য করুন