তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরুর জন্য প্র্যাকটিস নির্দেশনা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। কিন্তু এক মাস পার হলেও ঢাকার নিম্ন আদালতে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। অডিও-ভিজ্যুয়াল ব্যবহারে প্রয়োজনী যন্ত্রাংশ বরাদ্দেও উদ্যোগ নেই। নির্দেশনার ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তরা অন্ধকারে। এ কাজ পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের দেওয়া হয়নি প্রশিক্ষণ। এতে ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে বিচারের প্রস্তুতি নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
গত ২০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ভার্চুয়াল প্র্যাকটিস নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আদালত কক্ষ থেকে দূরবর্তী কোনো স্থানে অবস্থানরত মামলার কোনো পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ এবং মামলা সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অডিও-ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে উপস্থিতি, সাক্ষ্য গ্রহণ, শুনানিসহ সব বিচারিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এতে দেশের বাইরে থেকেও মামলার শুনানিতে অংশ নেওয়া যাবে। তবে আদালত প্রান্ত এবং দূরবর্তী প্রান্তে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল ডিভাইস এবং প্রিন্টার; নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার ডিভাইস; মাইক্রোফোন এবং স্পিকার ও ক্যামেরার ব্যবস্থা করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঢাকার নিম্ন আদালত ঘুরে দেখা গেছে, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মোট ৩৭ কোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে একটা আদালতে মনিটর বসানো হয়েছে। তবে তা এখনো ব্যবহার করা হয়নি। ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০টি কোর্ট রয়েছে। প্র্যাকটিস নির্দেশনার কয়েক মাস আগে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মনিটর স্থাপন করা হলেও সেটা ব্যবহার হয়নি। ঢাকা মহানগর ও দায়রা জজ আদালতে মোট ২৪টি কোর্ট। এর মধ্যে একটা আদালতে প্র্যাকটিস নির্দেশনার আগে শুধু মনিটর স্থাপন করা হয়। কোর্ট পরিচালনার সময় সেটা অন করে রাখা হয়। তবে এখন পর্যন্ত বিচার কাজে ব্যবহৃত হয়নি। ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালতেও একই অবস্থা। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল, সাইবার আদালত, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ জজ আদালত, পরিবেশ আদালত, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও অর্থঋণ আদালতেও ভার্চুয়াল বিচার পরিচালনার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিচার পরিচালনার সময় সমন্বয়কারী হিসেবে একজন দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা আর হয়নি।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির শাহ মো. মামুন কালবেলাকে বলেন, আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। মহানগরের ২৪টি কোর্ট রয়েছে। সব মিলিয়ে ৩০টি পিসি লাগবে। তবে সেই তুলনায় কোনো বরাদ্দ নেই।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মো. আরিফুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এ বিষয়ে জানা নেই। কয়েক মাস আগে আমাদের ১০টা কোর্টের মধ্যে একটাতে মনিটর লাগানো হয়েছে। তবে সেটা এখনো ব্যবহার করা হয়নি।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মো. রেজোয়ান খন্দকার কালবেলাকে বলেন, জিআইজেড প্রকল্পের আওতায় আদালতে মনিটর ও পিসি বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা একটা মনিটরসহ একসেট যন্ত্রাংশ পেয়েছি, সেটা একটা আদালতে লাগানো হয়েছে। সেটার ব্যবহার শুরু হয়নি। তবে এখানো ৩৬টি কোর্টে ভার্চুয়াল বিচারের জন্য যন্ত্রাংশ লাগানো বাদ রয়েছে।
মন্তব্য করুন