রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২
আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:১৩ এএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভাঙনের সুর

ভর্তি পরীক্ষা
বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভাঙনের সুর

রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা সত্ত্বেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভিন্ন অবস্থানের কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষেও একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হয়নি। এর প্রভাব পড়েছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপরও। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই আর গুচ্ছে থাকতে চাচ্ছে না। তারা আগের মতো আলাদা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে চায়। ফলে গুচ্ছ পদ্ধতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, আগে থেকেই মেডিকেল কলেজগুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হলেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি শুরু হয় ২০২০ সালে। এখানে কেন্দ্রীয় কোনো তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা না থাকায় গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্য থেকে কয়েকজন উপাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে ভর্তি শুরুর পর থেকে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি সামনে আসতে থাকে। তাই কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। তবে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গুচ্ছে থেকেই তারা ভর্তি কার্যক্রম শেষ করেন।

তবে এবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছে থাকতে রাজি নয়। বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, এই তালিকায় রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকরা জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষে একক ভর্তি পরীক্ষা হবে ভেবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছে রয়ে গিয়েছিল। তবে একক ভর্তি পরীক্ষা এবারও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, আগামীতে গুচ্ছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কেই রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। তারা বলছেন, রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক ভর্তি পরীক্ষায় আনার বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এটি ছিল নির্দেশনাস্বরূপ। তবে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গুচ্ছ ভর্তির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছে থাকতে জোর করা হয়নি। যে কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে না-ও থাকতে পারে।

শিক্ষকরা বলছেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার মতো যোগ্য কেউ নেই। আবার পান থেকে চুন খসলেই সমালোচনা শুরু হবে। সেজন্য অনেকে দায়িত্ব নিতে চান না। আগে ঢাকার একজন উপাচার্য এবং সিলেটের একজন উপাচার্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন। এর মধ্যে ঢাকার উপাচার্য নামমাত্র ছিলেন। আর্থিকসহ সব বিষয় দেখেছেন সিলেটের উপাচার্য। এ কারণে অনেক শিক্ষকের মাঝেই অসন্তোষ রয়েছে। ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একক ভর্তি পরীক্ষায় আসবে ভেবে সবাই রাজি হয়েছিল গুচ্ছে থাকতে। কিন্তু ঢাকার বাইরের কেউ দায়িত্ব পেলে এবারও অসন্তোষ থেকে যাবে।

এদিকে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে জিএসটি (সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি) ও কৃষি গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করতে ৩৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। এর মধ্যে নতুন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও রয়েছেন। আগামীকাল রোববার ইউজিসিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইউজিসি চেয়ারম্যান, সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতির নতুন সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ভোগান্তি না থাকলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হতে চাইত না। গত বছর আমরা গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। এবারও একই সিদ্ধান্তে অটল আছি। তবে একাডেমিক কাউন্সিল যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা তাতে শক্তভাবে সমর্থন দেব।

জবি উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম কালবেলাকে বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ইউজিসিতে সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে আলোচনার পর আমরা কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেব, সেটি নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম বলেন, গতবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলেন। তবে রাষ্ট্রপতির বাধ্যবাধকতার কারণে গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে। ইউজিসির মনোভাব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা করা হবে। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে পরে সিদ্ধান্ত নেব।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব বলেন, গুচ্ছ নিয়ে শিক্ষকদের অসন্তোষ কমেনি। গত বছর শুধু রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার কারণেই আমরা গুচ্ছে ছিলাম। কিন্তু এবার গুচ্ছ নিয়ে শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ। তারা গুচ্ছে থাকতে চাচ্ছেন না। একাডেমিক কাউন্সিলও গুচ্ছের বিপক্ষে। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি চাইলেই গুচ্ছ পদ্ধতি টিকতে পারে।

বিগত বছরগুলোতে অনুষ্ঠিত গুচ্ছ পরীক্ষায় সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি কালবেলাকে বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। তার পরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকতে চায় না। বিশেষ করে একক ভর্তি পরীক্ষা এবারও না হওয়ায় তাদের গুচ্ছে রাখা কষ্টকর হবে। এ বিষয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও উপাচার্য একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। একাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

এদিকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ইউজিসির এক সদস্য বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে এবারও ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে একটা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সবাইকে অংশ নিতে হবে—এমন বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়নি। ফলে সবাই থাকবে কি না, সে বিষয়ে এবার শঙ্কা আরও বাড়বে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ইউজিসি চায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার একটা নিজস্ব কমিটিও রয়েছে। আমরা তাদের সভা ডাকতে বলেছি। তারাই বসে পরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত: জোনায়েদ সাকি

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ফিরছেন ফোনলাপ ফাঁস হওয়া সেই এনসিপি নেতা

যৌথ বাহিনীর অভিযানে পিস্তলসহ যুবক গ্রেপ্তার 

সাংবাদিকের বাড়িতে চুরি, স্বর্ণালংকারসহ ৫ লাখ টাকার ক্ষতি

৪৫ বছর ভাত না খেয়েও সুস্থ ও সবল বিপ্লব

চেতনানাশক খাইয়ে দুধর্ষ ডাকাতি

রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ঘোষণা

প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে ছাত্রদলের নির্দেশনা, না মানলে ব্যবস্থা

নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে চাকরি খোয়ালেন বেরোবি সমন্বয়ক

হাওর ও চরাঞ্চলের শিক্ষক বদলির তদবির আসে ওপর থেকে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১০

জয় স্যুটকেস ভরে টাকা নিয়ে গেছে : হাবিব-উন-নবী সোহেল

১১

২৫ বছর ধরে বাঁশির মায়ায় আটকে আছে শফিকুলের জীবন

১২

একাত্তরেও আ.লীগ পালিয়েছে, এবারও পালিয়ে গেছে : টুকু

১৩

একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শুরু, শেষ হচ্ছে কবে

১৪

তিন দিনের মধ্যে সাদাপাথর ফেরত না দিলে ব্যবস্থা

১৫

উগান্ডার সঙ্গে ট্রাম্পের চুক্তি, জানা গেল নেপথ্য কারণ

১৬

ইসহাক দারের সঙ্গে কী আলোচনা হলো বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির

১৭

মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু রোববার : রাকসু ট্রেজারার

১৮

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক অনুষ্ঠিত

১৯

পাথরের জন্য মাইকিং, ডেডলাইন ২৬ আগস্ট

২০
X