ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক অধ্যাপক কেবিএম মামুন রশীদ চৌধুরীর স্ত্রী কোহিনূর বেগমের (৬৫) মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। কোহিনূর মৃত্যুর ঘটনায় স্বামী রশীদ চৌধুরী ও তাদের পালিত কন্যা ফাইজা নূর-ই-রশীদকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন মৃতের ভাই সালাহউদ্দীন ম. রহমতুল্লাহ। পরবর্তী সময়ে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা তদন্ত করে জানিয়েছে, কোহিনূরকে হত্যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি ‘বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার’ নামক রোগে ভুগছিলেন। মানসিক এই অসুস্থতার কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
গত বছরের ১০ এপ্রিল কোহিনূর বেগমের মরদেহ নিজ বাসায় ঝুলন্ত অবস্থায় পান তার স্বামী মামুন রশীদ। ডাইনিং রুমের সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলছিলেন কোহিনূর। মামুন রশীদ নিজেই ওড়না কাঁচি দিয়ে কেটে নিথর কোহিনূরকে নিচে নামিয়ে আনেন। তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার দিনই মামুন রশীদ ধানমন্ডি থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হইয়াছে।’ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের এই প্রতিবেদন পেয়ে মৃতের ভাই সালাহউদ্দীন ম. রহমতুল্লাহ বোনের স্বামী মামুন রশীদ ও দত্তক নেওয়া মেয়ে ফাইজা-নূর-ই-রশীদসহ অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে মামলা করেন। ২০২৩ সালের আগস্টে ধানমন্ডি থানা থেকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ পিবিআইর অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগকে। মামুন রশীদ ও তার মেয়ে ফাইজা-নূর-রশীদকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। হত্যা মামলাটির তদন্ত শেষে গত ২৮ মার্চ বাবা ও মেয়েকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শাহীন মিয়া।
তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই জানতে পেরেছে, কোহিনূর বেগম জীবিত থাকাকালে ‘বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার’ নামক রোগে ভুগছিলেন। অধ্যাপক ডা. এম এ মোহিত কামালের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর প্রথম তার কাছে কোহিনূরকে নিয়ে আসে পরিবার।
তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় ভুক্তভোগী কোহিনূর বেগম বাসায় একাই ছিলেন। তাদের দত্তক মেয়ে ফাইজা অফিসে কাজে সকালে চাঁদপুর যায়। আর তাদের ছেলে নূর-ই-চৌধুরী ছিলেন আইইএলটিএস ক্লাসে আর স্বামী মামুন রশীদ ছিলেন বসুন্ধরায় অবস্থিত ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে।
তদন্তে পিবিআই জানিয়েছে, মামুন রশীদ বাসায় প্রবেশের প্রায় পাঁচ মিনিটের মধ্যেই প্রথম ফোন করেছেন তার ভায়রা ভাই আজিজুল্লাহকে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্নজনকে এবং শেষে ৯৯৯-এ অর্থাৎ পুলিশকে। এ থেকেও তার সময় ও কার্যক্রম বিবেচনায় সৎ উদ্দেশ্য প্রতীয়মান হয়। এই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পূর্বের এবং অন্যদের সহযোগিতা ছাড়া ভিকটিমকে মেরে আবার গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়াটা বাস্তবিক পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ সময়স্বল্পতা, অন্যদের অনুপস্থিতি এবং সর্বোপরি দরজা খোলা ছিল। বাসার কোনো দরজা-জানালা ভাঙা ছিল না; কোনো ভায়োলেন্সের চিহ্ন ছিল না; অন্যপথে প্রবেশের কোনো লক্ষণ ছিল না—এ বিষয়গুলো বিবেচনায় এটি সুস্পস্টভাবে আত্মহত্যা বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে।
এদিকে পিবিআইর এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নারাজির আবেদন করেছেন মামলার বাদী সালাহউদ্দীন ম. রহমতুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে চিকিৎসক হত্যাকাণ্ড বললেও পিবিআই এটাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে নারাজির আবেদন করেছি।’