দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইতিহাস বিকৃত করে পড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রমূলক হিসেবে উল্লেখ করে এসব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বাংলাদেশ স্টাডিজ বইটি পড়ানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবদুল মজিদ, আহমদ হোসেন, বিপ্লব হাসান, আব্দুল মালেক সরকার ও আজিজুল ইসলাম। বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। যেসব ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে গড়িমসি করছে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য বলা হয়।
জানা গেছে, খোদ শিক্ষামন্ত্রী নওফেল বৈঠকে ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গটি তোলেন। দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে সরকারি পাঠ্যপুস্তক না পড়িয়ে বেসরকারি বিভিন্ন বই পড়ানো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাতে দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিকৃত তথ্য রয়েছে। বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। পরে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বাংলাদেশ স্টাডিজ বইটি পড়ানোর বিষয় সুপারিশ আকারে নিয়ে আসা হয়।
বৈঠকে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজকে সরকারিকরণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ ও সেইসঙ্গে কাজের সুবিধার্থে প্রেষণে একজন প্রিন্সিপাল নিয়োগেরও সুপারিশ করা হয়। কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান প্রকল্পগুলোর ঠিকাদারদের নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বিলম্ব সৃষ্টিকারী ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, তাদের শাস্তি ও জরিমানার আওতায় আনা, প্রয়োজনে ঠিকাদার পরিবর্তন করার সুপারিশ করে। জানা গেছে, বৈঠকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয় যেসব ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে গড়িমসি করছে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য।
এমপিওভুক্তদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আনতে আলোচনা: এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। কমিটি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেওয়ার সুপারিশ করে।
জানা গেছে, কমিটির আগের বৈঠকে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের পেনশন নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে—সেখানে কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরের পর পেনশনের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি অনেকেই পেনশন অর্থ না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আরেক সদস্য আহমদ হোসেন বলেন, যেহেতু এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই শিক্ষকদের পেনশন এককালীন পরিশোধ না করে দুটি কিস্তিতে প্রধানের অনুরোধ জানান।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার বলেন, বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের পেনশন এককালীন পরিশোধ না করে সরকারি কর্মচারীদের অর্ধেক এককালীন এবং বাকিটা মাসিক পেনশন হিসেবে দেওয়া যায় কি না তা ভেবে দেখার অনুরোধ করেন।
বৈঠকে অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায়কৃত চাঁদা এবং স্থায়ী আমানতের সুদ মিলে বছরে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। আর বর্তমানে সুদের হার বাড়ায় এ খাত থেকে বছরে ৫০-৫৫ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু শিক্ষকদের দাবিকৃত অবসর ভাতা পরিশোধে প্রয়োজন ৪৪৪ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারের অনুদান বাড়ানোর পাশাপাশি ষষ্ঠ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত ২ কোটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ১০০ টাকা, পাবলিক পরীক্ষার সময় প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডের তহবিল থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়ে পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে গতকালের ওই বৈঠকে কোনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।
সরকারের তরফে এরই মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের নবনিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে একটি প্রযোজ্য হবে বলে সরকারের এক আদেশে বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জানা গেছে, কমিটির আগের বৈঠকে এক সদস্য পাঠ্যপুস্তকের কাগজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলেন, পাঠ্যপুস্তকে যেসব কাগজ ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিম্নমানের। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকাজে অসমতা রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় অনেক বেশি কাজ হয়েছে, আবার কিছু এলাকায় খুবই কম হয়েছে।