দেশে উৎপাদিত দেশি-বিদেশি ফলের বিপুল সমাহার নিয়ে শুরু হয়েছে জাতীয় ফল মেলা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর কেআইবি চত্বরে গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফল মেলা-২০২৪। মেলার এবারের প্রতিপাদ্য ‘ফলে পুষ্টি অর্থ বেশ, স্মার্ট কৃষির বাংলাদেশ’। এবারের মেলায় আটটি সরকারি ও ৫৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। মোট ৬৩টি স্টলে বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফল চাষ প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
গতকাল মেলায় এসেছেন তেজগাঁও কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্টলে প্রদর্শনীর জন্য থাকা সুন্দরবনের গোল ফল দেখে বেশ কৌতূহলী হয়ে হাত দিয়ে ধরে দেখছিলেন তারা। অরণী রহমান নামে এক শিক্ষার্থী কালবেলাকে বলেন, আমি জীবনের প্রথম এই ফলটি দেখলাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, এটি মূলত উপকূলীয় অঞ্চলের ফল। সুন্দরবন এলাকার মানুষের কাছে এই ফল বেশ পরিচিত। এগুলো খেতে তালশাঁসের মতো। মেলায় এসে এমন নানারকম ফল দেখছি। অচেনা ফলের সঙ্গে পরিচয় হয়ে বেশ ভালো লাগছে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, দেশে উৎপাদিত দেশি-বিদেশি ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছে স্টলগুলো। দেশে উৎপাদিত আজওয়া খেজুর, অগ্নিশ্বর কলা, কাঁঠাল, তাল, রাম্বুটান, কামরাঙা, রিঠা, করমচা, রক্ত ফল ডেউয়া, আঁশফল, চিনাইল, লটকন, কোকোয়া ফল, উইটে ফল, গোলফল, আতা, ডেউয়া, কেওড়া, পেঁপেসহ নানা ধরনের ফল রয়েছে।
এবার মেলায় প্রায় ৯০ ধরনের ফল নিয়ে এসেছে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন। এর মধ্যে প্রায় ১৫টি বিদেশি ফল রয়েছে। কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (উদ্যান উন্নয়ন বিভাগ) ড. আলবেলি আফীফা মীর বলেন, দেশে অর্ধশতাধিক বিদেশি ফল উৎপাদিত হচ্ছে। এসব ফল দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি করছে।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্টলে ঘুরে দেখা যায় প্রায় ১৭৫ ধরনের ফল নিয়ে মেলায় এসেছেন তারা। এর মধ্যে প্রায় ৩০-৩৫ প্রজাতির ফল বিদেশি ও অপ্রচলিত ফল।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, আপেল, আম, থাই সফেদা, সূর্য ডিম আম, রেট তাইওয়ান আম, আমেরিকান কেইন্ট আমসহ প্রায় ৩৫ জাতের বিদেশি ফল আমাদের দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু দেশি ও অপ্রচলিত ফলও প্রদর্শনীর জন্য এনেছি। প্রায় হারিয়ে যেতে বসা এসব ফল মানুষ বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছে।
কুমিল্লা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বদিউর জামান বলেন, প্রতি বছর ফল মেলায় আসি নিজেদের উৎপাদিত আম দেখানো এবং অন্যদের উৎপাদিত ফল দেখা। আসলে বিক্রির উদ্দেশ্যে আমরা আসি না। জাতীয় ফল মেলার এক কোণে বসেছে দেশে উৎপাদিত মাশরুম মেলা। এখানে বসেছে ৬ থেকে ৭টি স্টল। এই স্টলগুলোতে প্রায় ৮-৯ প্রজাতির খাবার উপযোগী মাশরুমের প্রদর্শনী ও বিক্রি হচ্ছে।
উত্তরার মাশরুম বাড়ির উদ্যোক্তা তপু আহমেদ বলেন, দেশেই প্রায় ৫-৬ জাতের মাশরুম উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের বাজারে মাশরুমের চাহিদা অনেক; কিন্তু আমরা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারি না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মোট ফল উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে আম উৎপাদন হয়েছে ২৭ লাখ টন, লিচু ২ লাখ ৩০ হাজার টন, কাঁঠাল ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন ও আনারস ৫ লাখ ৮০ হাজার টন।
গতকাল সকালে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো আব্দুস শহীদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেন, আগামীতে দেশি ফল বিদেশে রফতানিতে সব রকমের জটিলতা দূর করা হবে। পাশাপাশি দেশি ফল পরিবহনের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ভর্তুকি বাড়ানো প্রয়োজন কৃষি খাতে।
আগামীকাল শনিবার বিকেলে বিএআরসি মিলনায়তনে ফল মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি।