কষ্টে আছেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘরের বাসিন্দারা। অনাহারে দিনযাপন করছেন তারা। ঘরে খাবার নেই। নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি। পাকা ঘর উপহার পেলেও পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। ঝড়ে নিয়ে গেছে টিন। চাল পর্যন্ত ছুঁইছুঁই পানি। পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের সবকিছু। এখন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন তারা। কিন্তু সে খবর নেই কারও কাছে। কেউ তাদের খবর রাখেনি বলে আক্ষেপ জানালেন মুজিবনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ বাসিন্দা।
রাখাল বিশ্বাস নামে একজন কালবেলাকে বলেন, ‘খুব কষ্টে আছি। খাবার পানি, খাবার আর থাকার জায়গা—কোনোটিই নেই। সব ভাঙছে। আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখি সেখানেও জায়গা নেই। আরেক জনের ভাঙা ঘরে উঠে কোনোরকম জীবন রক্ষা করছি। কী করব বুঝতেছি না।’
আলি আকবর বলেন, ‘কাথা-কম্বল, থালাবাসন কিছুই নেই। সব ভেসে গেছে। কোথায় রান্না করব আর কি-ই বা খাব? এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্যও তো পাইনি।
নজরুল ইসলাম জানান, এই মুজিবনগর যখন তৈরি হয় তখনই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছিলাম যে এ রকম থাকলে স্বাভাবিক পানিতেই তলিয়ে যাবে। তিনি তখন বলেছিলেন, পানি এলে দেখা যাবে। আসলে এই প্রকল্প সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। এখানে থাকার পরিবেশ নেই। বন্যা তো দূর স্বাভাবিক পানিতে সব তলিয়ে যায়।
ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মৎস্য খামার, গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও হাটবাজার। এ ছাড়া গবাদি পশু-পাখি ভেসে গেছে। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও তা অপ্রতুল। নেই কোনো গো-খাদ্য। পানিতে ভেসে গেছে মাছ ও মাছের পোনা। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থাও।
তিন দিন পানিবন্দি থাকার পর এখনো অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে যাননি ঘরবাড়ি ও আসবাবের মায়ায়। অনেকে আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি এবং ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।
গত বুধবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। উপজেলার তেলিখাল উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে এই খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। এর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, আলু, লবণ, মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ছয়টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন বন্যাকবলিত। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার কেবল একটি মহাসড়ক বাদে বাকি সব সড়ক পানির নিচে। প্রত্যন্ত এলাকার লোকজন নৌকা ছাড়া বের হতে পারছেন না। দুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ৭১ মেট্রিক টন চাল, লাখ ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যদিও বন্যার্তদের অভিযোগ প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণের পরিমাণ অপ্রতুল।