আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি সরাতে আর বিদেশিদের জুজুর ভয় দেখাতে সরকার জঙ্গি নাটক করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কী রকম কূটকৌশলী এবং কী রকম ভয়াবহ এরা! তার প্রমাণ কুলাউড়ায় হঠাৎ করে দেখা গেল একটা বাড়িতে একটা জঙ্গিবিরোধী অভিযান হয়েছে। সেখানে থেকে ৬ জন নারী, ৪ শিশুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সঙ্গে কী? ডেটোনেটার, তিন কেজি বিস্ফোরক ভয়াবহ। হঠাৎ করে কোত্থেকে এলো? কারা আনল? কীভাবে আনল? ওই যখন আন্দোলন উঠতে থাকে, তার আগে জঙ্গি নাটক অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকবার প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন এটা হচ্ছে। গতকাল রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় সিলেটের কুলাউড়ায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে ক্রীড়া সংগঠক প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর ৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়। এতে বিএনপি মহাসচিব প্রয়াত কোকোর জীবনী নিয়ে একটি স্মরণিকা এবং তার নামে ক্রীড়াঙ্গনে পুরস্কার প্রবর্তনের জন্য আয়োজকদের প্রতি আহ্বান জানান।
ক্রীড়া সংগঠক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাবেক ক্রিকেটার দেবব্রত পালের সঞ্চালনায় সভায় অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম তপন, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক পরিচালক শরীফুল আলম, বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের অতিরিক্ত মহাসচিব কাজী মহিউদ্দিন বুলবুল, ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সহসভাপতি মঞ্জুর হোসেন মালু, বিসিবির সাবেক পরিচালক আল ফুয়াদ রেদোয়ান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু, ক্রীড়াবিদ শাহ আলম, ক্রীড়া সাংবাদিক নাসিমুল হাসান দোদুল, মোজাম্মেল হক চঞ্চল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিএনপি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকে বলেন, আপনার মুখে এত হাসি দেখি কেন সবসময়। হাসি এজন্য যে, আমি খুব পরিষ্কার দেখতে পারছি, এই ভয়াবহ দানব আমাদের মুখ থেকে সরে যাচ্ছে জনগণের উত্তাল তরঙ্গের মধ্য দিয়ে। আমরা সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন, পরিবর্তন আসছে, পরিবর্তন হবে। সত্যের জয় হবে, সুন্দরের জয় হবে, গণতন্ত্রের জয় হবে ইনশাল্লাহ।
অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেয়েছি একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। আপনারা (আওয়ামী লীগ) ওই সরকারের (তত্ত্বাবধায়ক) অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তাহলে আজকে কেন সেটা পুরোপুরি বাতিল করে দিয়ে কোনো কথাই শুনতে চান না। কারণ আপনারা জানেন, যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া যায় তাহলে শতকরা ১০টি আসনও পাবেন না।
ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে সরকারের কোনো উদ্বেগ নেই অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাই অ্যালার্ট করেছে। মানে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন হাই অ্যালার্ট। প্রতিদিন ১০-১২-১৪ জন করে মারা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের কথা শুনে কি একবারও মনে হয় বা তাদের কোনো উদ্বেগ আছে?
চলমান আন্দোলনেই সরকারের বিদায়
বিরোধী দলগুলোর জনসম্পৃক্ত চলমান যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই সরকারকে বিদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বিকেলে রাজধানীর শান্তিনগরের হোয়াইট হাউস হোটেলে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন জেএসডির আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ।
হাসনাত কাইয়ূম বলেন, দেশে আজ সরকার পাল্টানোর কথা চলছে, রাষ্ট্র সংস্কার করার কথাও চলছে—এটাই আমাদের অর্জন।
মন্তব্য করুন