রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২
আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:১৬ এএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তৃতীয় ধাপের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিপাকে সরকার

আজও মাঠে থাকবেন আন্দোলনকারীরা
তৃতীয় ধাপের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিপাকে সরকার

২০২৩ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে বিভাগভিত্তিক ভাগ করে তিন ধাপে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া শেষে গত বছর প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগের ফল প্রকাশ করা হয় এবং শিক্ষকরা কর্মক্ষেত্রে যোগদানও করেন। কিন্তু গত অক্টোবরে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হলেও শিক্ষকরা এখনো যোগদান করতে পারেননি। এর আগেই এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগপত্র দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মেধার ভিত্তিতে নতুন করে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই রায়ের পর সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা আন্দোলনে নামেন। পুলিশের হামলা ও লাঠিচার্জের পরও তারা রাস্তা থেকে সরে যাননি। গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও সন্তুষ্ট না হয়ে তারা আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতভুক্ত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম এবং অপেক্ষমাণ তালিকা থেকেও নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে দেখা দেয় সমস্যা।

তৃতীয় ধাপে ২০২৩ সালের ১৪ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। এরপর ১১ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৫ ডিসেম্বর জেলা শিক্ষা অফিস এবং ৮ ডিসেম্বর স্কুল পদায়ন সম্পর্কিত নিয়োগ আদেশ জারি করা হয়। নিজ নিজ জেলা সিভিল সার্জনে মেডিকেল টেস্ট এবং জেলা শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাদানও সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু শিক্ষকদের যোগদানের আগেই বিভিন্ন সমস্যা শুরু হয়।

গত বছরের জুলাই মাসে দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ও গণহত্যার এক পর্যায়ে এই আন্দোলন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে রূপ নেয়। ফলে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। পরে আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ৩১ অক্টোবর শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেন।

তবে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জোরালো হয়। যে কারণে কোটা প্রয়োগের মাধ্যমে তৈরি করা ফল প্রকাশ হলে সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়া ৩১ জন হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। পরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলে উত্তীর্ণদের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট।

এদিকে, এই রায় প্রত্যাখ্যান এবং দ্রুত নিয়োগের দাবিতে মাঠে নামেন সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একাংশ। তারা গত রোববার থেকে মাঠে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। টানা এই কর্মসূচি বেশ কয়েকবার পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়েছে। পুলিশ দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করেছে, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছে। পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন।

গতকাল তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নামেন সুপারিশপ্রাপ্তরা। সকালে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নেন তারা। এরপর দুপুর পৌনে ২টার দিকে আলোচনার জন্য তাদের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ের দিকে যান। সেখানে তারা প্রথমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ মাসুদ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর যান গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের দপ্তরে। সেখানে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও তারা তাতে সন্তুষ্ট নন জানিয়ে শাহবাগ এসে আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দেন।

প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য জান্নাতুল নাইম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, সচিবালয়ে গিয়ে আমরা সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ মাসুদ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আগে আমাদের যেমন আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এবারও সেই একইভাবে আশ্বস্ত করে বলা হয় যে এটা আদালতের রায়, এর এখতিয়ার হচ্ছে বিচারকের। তারা বললেন—সরকারের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে।

তিনি বলেন, সচিবের পর আমরা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি বললেন—আপনাদের ৬ হাজার ৫৩১ জনের মধ্যে কাউকেই বাদ দেওয়া হবে না। এরপর তো আমাদের আর কিছু বলার থাকে না। আমরা উপদেষ্টা মহোদয়কে একটা কথাই বললাম, যেন অতি দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আমাদের নিয়োগ প্রদান করা হয়। নাইম আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সবসময় শুধু আশ্বস্ত করা হচ্ছে। আগেরবার আমরা ঘরে ফিরে গিয়েছিলাম, কিন্তু এবার আর ঘরে ফিরব না। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মানা না হবে আমরা রাজপথে থাকব এবং আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।

প্রতিনিধিদলের আরেক নারী সদস্য বলেন, আগে আশ্বাসের পরে আমরা ঘরে ফিরে গেছি। কিন্তু এবার যতদিন নিয়োগ না দিবে, আমরা মাঠ ছাড়ব না। যারা এখনও আন্দোলনে যোগ দেননি, তাদেরও আন্দোলনে আসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা বুধবার সকাল ৯টার মধ্যে এখানে উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিলে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আলটিমেটাম ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তারা।

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও যোগদান করতে না পেরে তারা সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন। এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই তারা অনতিবিলম্বে যোগদান করতে চান। সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী তালুকদার পিয়াস কালবেলাকে বলেন, তৃতীয় ধাপে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পরীক্ষা, ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) সবকিছুই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরপর এই নিয়োগ বাতিল করে দেওয়া হলো। এটি আমাদের চরম হতাশ করেছে। আশা রাখি, আমাদের কষ্টের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টো রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিকের শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, হাইকোর্টের রায় হয়েছে, আমরা আপিল করেছি পুনর্বিবেচনার জন্য। তবে গতকাল শিক্ষকদের আন্দোলন চলমান রাখার বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে তাকে কল করে, খুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাও সাড়া দেননি।

গত ২৮ মে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) মৌখিক পরীক্ষাসহ নিয়োগ প্রক্রিয়া ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণসংক্রান্ত হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন, আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মৌখিক পরীক্ষা নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সে অনুযায়ী ফলও প্রকাশ করা হয়। তবে এই নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গণমাধ্যমে আসা অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নারীসহ ফার্মাসিস্ট আটক

৮ দিন পর খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার

চাঁদা না দেওয়ায় ঠিকাদারকে ডেকে নিয়ে মারধর

মাউন্ট-সেশকোর গোলে ম্যানইউর স্বস্তির জয়

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিবু প্রসাদ গ্রেপ্তার

‘শহিদুল আলম ও গাজার পাশে আছি-থাকব’

রেবতী মহাজন বাড়ির বিজয়া সম্মিলনী

জামায়াত ধর্মের জন্য ক্ষতিকর : আমিনুল হক

এভারেস্ট বেজ ক‍্যাম্প সামিট ৮ বাংলাদেশির

তারেক রহমানের ৩১ দফায় দেশের উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা : আবু বকর সিদ্দিক

১০

মানবাধিকার কর্মীদের আটকের ঘটনা কলঙ্কজনক অধ্যায় : মুহিউদ্দীন রাব্বানী

১১

শিয়ালের কামড়ে মেম্বারসহ আহত ১১

১২

কাশফুলের গালিচায় মোড়া বরিশালের বিসিক

১৩

উপ-সহকারীর ভরসায় চলছে ২০ শয্যার হাসপাতাল

১৪

মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক 

১৫

নদীর স্রোতে তলিয়ে গেল ৩ বোন

১৬

‘ভারতের মানচিত্রও মুছে যাবে’, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হুঁশিয়ারি

১৭

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : আনোয়ারুজ্জামান

১৮

প্রধান উপদেষ্টা ও ওসিকে হত্যার হুমকি যুবলীগ নেতার

১৯

অ্যানথ্রাক্সে মরছে গরু, আতঙ্কে কমেছে মাংস বিক্রি

২০
X