কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০৯:০৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পাবনা জজকোর্ট

সেরেস্তাদারের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনে পাঁচ মামলা

সেরেস্তাদারের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনে পাঁচ মামলা

পাবনা জেলা জজ আদালতের সেরেস্তাদার হাসান কবির কাজল। হঠাৎ করেই গত ৯ মে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়। মামলার পরদিনই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এরপর ১৩ মে তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে আরও তিনটি মামলা। সব মামলাতেই অভিযোগ একই। প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের (ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারায়) অভিযোগে করা মামলাগুলোর মধ্যে তিনটি দায়ের করেছেন ওই আদালতের কর্মচারীরা বাদী হয়ে। আর বাকি দুটি মামলা করেছেন দুজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। এসব মামলার মধ্যে একটিতে জামিন চেয়ে পাবনা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করার পর গত ১২ মে তা নাকচ করা হয়। কিন্তু জামিন নামঞ্জুরের ওই আদেশের নকলের কপি গতকাল পর্যন্ত হাতে পায়নি আসামির পরিবার। হঠাৎ করেই এত মামলা দায়ের ও নকল পেতে গড়িমসির পেছনে ওই আদালতেরই কারও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে দাবি তার পরিবারের। এমনকি কারাগারে থাকায় কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে ওই কর্মচারীর চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছে পুরো পরিবার।

জানতে চাওয়া হলে হাসান কবির কাজলের স্ত্রী কালবেলাকে বলেন, ‘৫ দিনের মধ্যে পাঁচটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে। জামিন আবেদন করার পর নাকচ করা হয়েছে। এরপর জামিন না-মঞ্জুরের আদেশের কপির জন্য তাগাদা দিচ্ছি; কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। আজও (গতকালও) নকলের কপি হাতে পায়নি। নকলের কপি না পাওয়ায় জামিনের জন্য আপিল করতে পারিনি। আমার স্বামী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার অফিসের লোকজন আজ তার বিপক্ষে। মনে হচ্ছে, তারা সবাই যেন তার শত্রু। তার অফিস থেকে কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। এর পেছনে এ আদালতের ঊর্ধ্বতন কারও হাত রয়েছে। কেউ চাপ দিয়ে এসব মামলা করাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর সঙ্গে একের পর এক অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। পাবনার আদালতে বড় স্যার আসার পর থেকে তাকে বেশি হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। বড় স্যারের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও সে দেখা করতে পারেনি। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে তার সবগুলোই মিথ্যা। মিথ্যা মামলায় আমার স্বামী কারাগারে। একটা বাচ্চা নিয়ে আজ আমি তার জামিনের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি; কিন্তু কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। এমনকি আমি আমার সন্তানকে নিয়ে ভয়ের মধ্যে দিন পার করছি।

জানা গেছে, গত ৯ মে হাসান কবির কাজলের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় দুটি (জিআর) মামলা হয়। এর মধ্যে একটি মামলার বাদী রাম গোপাল সরকার। তিনি মামলায় অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালে তার দোকান থেকে কাজল ফার্নিচার কেনেন; কিন্তু ৫০ হাজার ৩০০ টাকা তিনি পরিশোধ করেননি। আরেকটি মামলার বাদী মো. কামরুজ্জামান খান। তিনিও তার মামলায় অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালে কাজল আদালতের জন্য ফার্নিচার কেনেন। কিন্তু ৪২ হাজার ২০০ টাকা আজও পরিশোধ করেননি। এ মামলা দায়েরের পরদিনই পাবনা থানা পুলিশ কাজলকে গ্রেপ্তার করে। পরে পাবনার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। গত ১২ মে তার জামিন আবেদন নাকচ করে পাবনার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ১৪ মে জামিন না-মঞ্জুরের আদেশের নকল চেয়ে আবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ওই আদেশের নকলের কপি পায়নি হাসান কবির কাজলের পরিবার।

জানতে চাওয়া হলে পাবনার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান তুলনাকারক সুলতানা পারভীন কালবেলাকে বলেন, ‘দরখাস্তের ওপরে প্রথমে লেখা ছিল নকলের প্রয়োজন নেই। পরের দিন আইনজীবীর মহুরি আনোয়ার এসে সেটা কেটে দেয়। পরে নকলের আবেদন আদালতে পাঠিয়ে দিই। এরপর ফাইল রেডি হয়ে আসার পর স্বাক্ষরসহ নকল রেডি করে রেখেছি। তবে নকলের কপি নেওয়া হয়েছে কি না তা এ মুহূর্তে বলতে পারব না।’

এদিকে গত ১৩ মে একই দিনে হাসান কবির কাজলের বিরুদ্ধে পাবনার আদালতে আরও তিনটি (সিআর) মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই তিনটি মামলারই বাদী পাবনা আদালতের বর্তমান ও সাবেক কর্মচারী। এর মধ্যে পাবনা জজ আদালতের জারিকারক নবাব। আরেকটি মামলার বাদী নবাবের ভাগনে ইমন শেখ। ইমন শেখ পাবনার আদালতে মাস্টাররোলে নাইট গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। আর তৃতীয় আরেকটি মামলা করেছেন সাদেক আলী। তিনি পাবনা আদালতে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে পিআরএল-এ আছেন। এ তিনটি মামলার অভিযোগও প্রায় একই ধরনের। জারিকারক নবাব তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, তাকে এক বছরের মধ্যে পদোন্নতি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে আসামি ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু পদোন্নতি করিয়ে না দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণা করেছেন। ইমন শেখ তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, নাইট গার্ড পদে চাকরি এক বছরের মধ্যে স্থায়ী করিয়ে দেবেন বলে আসামি তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চাকরি স্থায়ী না করিয়ে তিনি বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণা করেছেন। আর সাদেক আলী তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, আসামি তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নেন। কিন্তু তিনি আর ফেরত না দিয়ে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।

মামলার ব্যাপারে জানতে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফোন দেওয়া হয় জারিকারক নবাবকে। আরেকটি মামলার বাদী ইমন শেখ তার ভাগনে, তিনি তা স্বীকার করেন। তবে মামলার ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিতে তিনি রাজি হননি। বক্তব্য চাইলে আগামীকাল (আজ) সকাল ৯টার সময় অফিস টাইমে যোগাযোগ করতে বলেন। মামলার সঙ্গে অফিস টাইমের কোনো বিষয় জড়িত নয়। তাহলে বক্তব্য দেবেন না কেন? এমন প্রশ্নে নবাব বলেন, আমি এখন স্যারের সঙ্গে। সে টাকা নিয়েছে এতটুকুই বলব। বিস্তারিত বলতে পারব না। এতদিন পর সবাই একযোগে টাকার জন্য মামলা করলেন কেন—এমন প্রশ্নেরও কোনো জবাব না দিয়ে নবাব ফোন কেটে দেন।

জানতে চাওয়া হলে হাসান কবির কাজলের আইনজীবী মাসুদ খন্দকার কালবেলাকে বলেন, ‘প্রথমে দুটি মামলা হয়, এরপর আরও তিনটি হয়েছে। আমি আইনজীবী হিসেবে লড়ছি। তবে এর ভেতরে-বাইরে কোনো ঘটনা আছে কি না, তা আমার জানা নেই। আর মিথ্যা মামলা হলে সে আইনের মাধ্যমে বের হবে। নকলের ব্যাপারে তিনি বলেন, নকলের কপি আমরা এখনো হাতে পাইনি। ১৪ তারিখে আবেদন দিলে নকল পাওয়া উচিত ছিল। তবে নকল পেয়েছেন কি না সে ব্যাপারে তার সহকারীর কাছে জেনে আইনজীবী মাসুদ খন্দকার বলেন, আগামীকাল (আজ) নকল দেবে বলে শাখা থেকে জানানো হয়েছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সীমান্ত দিয়ে ২৪ বাংলাদেশিকে পুশইন

মেয়াদ শেষেও কাজ হয়নি অর্ধেক

সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা জোরদার 

ইরানে ভয়ংকর হামলা করতে প্রস্তুত ইসরায়েল

কাকরাইলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের রাতভর অবস্থান

নেতানিয়াহুর কারণে ডুবতে বসছে ইসরায়েল

‘৬ হাজার টাকার চাইল পাইতাছো, ২০০ টাকা দিতে কি সমস্যা?’

কাতারের বিলাসবহুল বিমান লুফে নিলেন ট্রাম্প

ইশরাকের শপথ ইস্যুতে আদালতের আদেশ আজ

ভারতীয় গরু প্রবেশের শঙ্কায় দিন কাটছে খামারিদের

১০

গাজার পথে হাজারো ত্রাণের ট্রাক আটকে রেখেছে ইসরায়েল

১১

আজ কেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া 

১২

ঈদুল আজহা : ট্রেনের ১ জুনের টিকিট বিক্রি আজ

১৩

গাজার ত্রাণকে ‘সমুদ্রে এক ফোঁটা পানি’ বলছে জাতিসংঘ

১৪

টিভিতে আজকের খেলা

১৫

গাজায় খাবার ঢুকছে না, দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ফিলিস্তিনিরা

১৬

সাতসকালে ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’

১৭

আজ যেসব এলাকায় ৪ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না 

১৮

মনিরামপুরে ভূমি অফিসে দুদকের অভিযান

১৯

দুপুরের মধ্যে ৫ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা

২০
X