থোকায় থোকায় ঝুলছে ফ্রুট ব্যাগে ঝোলানো আম। কোথাও আবার দেখা মিলছে নানা আকারের রং-বেরঙের আম। ছোট্ট ছোট্ট আমগাছের মাঝে আবার রয়েছে পোকামাকড় দমনে ব্যবহৃত পট ও প্লাস্টিক পাত্রের ফাঁদ। মূলত আমকে বিষমুক্ত ও নিরাপদ রাখতেই এমন পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে সাড়া ফেলেছেন চাঁদপুরের কৃষি উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন। গত ৩১ মে শনিবার দুপুরে কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা তার ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতে গেলে চোখে পড়ে বাহাড়ি সব জাতের আমের সমাহার।
চাঁদপুর সদরের শাহতলীতে ডাকাতিয়া নদীর তীরে পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিত্যক্ত ইটভাটায় বালুর ওপর মাটি ফেলে কোনো প্রকারের কীটনাশক ছাড়াই ৫৭ জাতের বিদেশি উচ্চমূল্যের আম চাষ করে নজর কেড়েছেন হেলাল উদ্দিন। গবেষণাধর্মী এই আম চাষাবাদের স্থানটির তিনি নাম দিয়েছেন ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো, যেখানে বর্তমানে ২৫০টির বেশি বিভিন্ন বিদেশি জাতের আমগাছের চারা রয়েছে। ভালো ফলন হচ্ছে কি না এবং ফলন লাভজনক কি না? সেটাই এখানে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে দেখছেন হেলাল।
কৃষি উদ্যোক্তা হেলাল বলেন, তিনি সেখানে ভ্যালেন্সিয়া প্রাইড, লেমনজেস্ট, বেইলি মার্বেল, রোসারোসা, সানসেট, আতাউল্ফ, কারাবাও, আলফানসো, গ্লেইন, হাডেন, মায়া, সেনসেশন, অস্টিন, অস্টিন গোল্ড, আর-টু ই-টু, ক্যাংসিংটন প্রাইড, ঝিইল, টমি অ্যাটকিনস, রেড আইভরী, কিং অব চাকাপাত, মিয়াজাকি, জাম্বো রেড চাকাপাত, ব্ল্যাকস্টোন, থ্রিটেস্ট, কেন্ট, কেইট, পালমার (ফ্লোরিডা), চিলি ম্যাঙ্গো, কেষার, পুষা আম্বিকা, পুষা অরুনিমা, পুষা সুরাইয়া, মল্লিকা, তোতাপুরি, হানিডিউ, নামডকমাই, নামডকমাই সিমওয়াং, গোল্ডেন নামডকমাই, আপেল ম্যাঙ্গো, মহাচানক, চিলতাখাস, ক্যারিই, ওকরংথন (চায়নিজ), এসআর ম্যাংগো, কাটিমন, হানিডিউ, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, ফ্রাংসিস, থাই কাঁচামিঠা, বারি-৪, গৌরমতিসহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ করে সফল হচ্ছেন।
হেলাল বলেন, ‘বিদেশে আম রপ্তানিতে প্রধান শর্ত ফ্রুট ব্যাগিংয়ের ব্যবহার করা হচ্ছে এখানে। আম ফ্রেশ রাখতে ৫০ গ্রাম ওজনের সময় থেকেই এখানে ফ্রুট ব্যাগিং করা হচ্ছে। খরচ কমিয়ে কীভাবে আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে উচ্চমূল্যের বিদেশি আম চাষে লাভবান হওয়া যায় সে তথ্য ছড়িয়ে দিতেই আমি কাজ করছি। গত বছর ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো থেকে ৪৭ জাতের আম প্রায় ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে এবার আরও ১০ জাতের আমের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ বাড়িয়ে মোট ৫৭ জাতের আম এখানে উৎপাদন করে বিক্রির টার্গেট রেখেছি প্রায় ৮ লাখ টাকা।’
এ ছাড়া ২৭ জাতের সাইট্রাস (কমলা, ম্যান্ডারিন, মাল্টা, লেমন), ২১ জাতের আঙুর, ১৪ জাতের লংগান, ৪ জাতের রাম্বুটান, ম্যাগোস্টিন, ৭ জাতের ড্রাগন, ৭ জাতের লিচু, ৭ জাতের এভাকাডো, ৬ জাতের আতাফল এবং ৫ জাতের আপেল ছাড়াও আছে ক্যান্সার প্রতিরোধক করোসল, অ্যাপ্রিকট, মাম্মি সাপুটে, ব্ল্যাক সাপুটে, পামেলো, নতুন জাতের বরই, পেঁপে, কলা, খেজুরসহ আরও ৩৭ জাতের ফল-ফলাদি চাষাবাদ করছেন কৃষি উদ্যোক্তা হেলাল। তার খামার থেকে যে কেউ চাষাবাদের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে চারা কিনে নিজেও চাষাবাদ করে সফল হতে পারবেন বলে জানান তিনি।
ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর কর্মচারীরা জানান, তাদের খামারের আম ফ্রুট ব্যাগিং করা, যা কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক ছাড়াই ৯ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। বৃষ্টিতে আমের গায়ে ছত্রাক দমন এবং চারা উৎপাদন-পরিচর্যাসহ ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে তারা কাজ করছেন। দূর-দূরান্তের মানুষ এসে বিভিন্ন জাতের ফলের প্রদর্শনী দেখে ও কিনে নিয়ে যায়।
খামারটিতে ঘুরতে আসা শিমুল নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘এখান থেকে আমের চারা কিনে বাড়িতে লাগিয়ে ভালো ফলন পাচ্ছি। এখানে ৪-৫ লাখ টাকা দামেরও আমগাছের চারা রয়েছে।’
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ‘কৃষি উদ্যোক্তা হেলালের পরীক্ষামূলকভাবে ৫৭ জাতের বিদেশি আম চাষাবাদকে সাধুবাদ জানাই। তাকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে দেশব্যাপী এসব আমের জাত ছড়িয়ে দিলে মানুষ উপকৃত হয়।’
মন্তব্য করুন