হাসান আজাদ
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ১১:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দরপত্র ছাড়া কাজ পেতে তৎপরতা গ্যাজপ্রমের

জিটুজি ভিত্তিতে কাজের প্রস্তাব
দরপত্র ছাড়া কাজ পেতে তৎপরতা গ্যাজপ্রমের

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত রাশিয়ান বহুজাতিক কোম্পানি গ্যাজপ্রম নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে। আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানির বিশেষ আইন ব্যবহার করে চড়া মূল্যে কূপ খননের কাজ নেয় কোম্পানিটি। এর সঙ্গে জড়িত ছিল আওয়ামী সরকারের একজন উপদেষ্টা ও কয়েকজন রাজনীতিক। পরে অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ আইন বাতিল করার পর এখন জিটুজি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে কূপ খননের কাজ করতে প্রস্তাব দিয়েছে গ্যাজপ্রম। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, গত ১৫ মে জি টু জি চুক্তির মাধ্যমে ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে পাঁচটি কূপ খননের প্রস্তাব দিয়েছে গ্যাজপ্রম। রাশিয়ার নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন সচিবালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এ প্রস্তাব দেন। এ সময় জ্বালানি সচিবও উপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জি টু জির মাধ্যমে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ প্রস্তাবের আওতায় তারা ভোলায় পাঁচ কূপ খনন ও ত্রিমাত্রিক জরিপের কাজ করতে চায়। তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করতে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গ্যাজপ্রম এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ মিলিয়ে ১৭টি কূপ খনন করেছে। এর মধ্যে ভোলার দুটি কূপ রয়েছে। কূপপ্রতি রাশিয়ার কোম্পানিটি গড়ে ১৫২ কোটি টাকা করে নিয়েছে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে। যেখানে বাপেক্স নিজে কূপ খননে ব্যয় করে সর্বোচ্চ ৮০ কোটি টাকা। বিশ্বের জ্বালানি খাতের অন্যতম বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানি গ্যাজপ্রম। কিন্তু বাংলাদেশে কোম্পানিটি সরাসরি কাজ না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করে। এতে মানসম্মত কাজ হয় না বলে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

গ্যাজপ্রম ২০১২ সালে দেশের ১০টি গ্যাসকূপ খননের ঠিকাদারি নেয়। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম দফায় খনন করা তিতাস-২০, তিতাস-২১, সেমুতাং-৬, বেগমগঞ্জ-৩ ও শাহবাজপুর-৪ এ পাঁচ গ্যাস কূপই উত্তোলন শুরুর অল্পদিন পরই বালু ও পানি উঠে বন্ধ হয়ে যায়। নিম্নমানের কাজের জন্য এ অবস্থা হয়েছে। পরে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স নিজেই আবার সেগুলোর সংস্কার করে গ্যাস উত্তোলন করছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্যাজপ্রম তিতাস ২০ কূপটি খনন শেষ করে ২০১৩ সালের ১৯ মে। নিম্নমানের খনন ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বলে বাপেক্সের রিপোর্টে দেখা গেছে। কূপটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদনকালেই অতিরিক্ত পানি আসায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরে রির্জাভারের সম্ভাব্য ড্যামেজ এড়ানোর জন্য রি মিডিয়াল ওয়ার্ক করা হয়। এ জন্য গ্যাজপ্রম বাড়তি ১৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বিল আদায় করে। এ ছাড়া একই গ্যাসক্ষেত্রের তিতাস ২১ কূপ ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু করে। মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই গ্যাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় পানি ও বালু এলে ২০১৪ সালের ২০ জুন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত টিউবিং এবং সিমেন্টিং যথাযথ না হলে এমন সমস্যা হয়ে থাকে বলে খনি বিশেষজ্ঞদের অভিমত। পরে উত্তোলন সচল করতে বাপেক্সের মাধ্যমে ওয়ার্কওভার করতে গিয়ে টিউবিং প্লেসমেন্টে ত্রুটি ধরা পড়ে।

দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় গ্যাস সমৃদ্ধ এলাকা ভোলা। এখানকার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে দৈনিক ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। ভোলা নর্থ নামে এখানে আরেকটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিক রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স। দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্স সাশ্রয়ী ও সফল বলে স্বীকৃত। পেট্রোবাংলার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাপেক্সের সক্ষমতা কম এমন যুক্তির কোনো ভিত্তি নেই। সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগের সরকারের মতো বাপেক্সকে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল করে রাখা হবে নাকি সক্ষমতার পুরোটুকু ব্যবহার করা হবে।

ভোলার গ্যাসক্ষেত্র বেঙ্গল বেসিনভুক্ত। সেখানে যে ভূকাঠামোয় গ্যাস পাওয়া গেছে, তার ভূতাত্ত্বিক নাম ‘স্টেটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার’। দেশের অন্য সব গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে সুরমা বেসিনে। এ বেসিনের ভূতাত্ত্বিক নাম ‘অ্যান্টি ক্লেইন স্ট্রাকচার’। ভোলার দুই গ্যাসক্ষেত্রে দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস রয়েছে। গ্যাসের মজুত আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০৯ সালের ১১ মে থেকে শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। শাহবাজপুর ও ভোলা—এ দুই গ্যাসক্ষেত্রে মজুত রয়েছে ২ দশমিক ০৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সম্প্রতি ভোলায় গ্যাসের নতুন মজুত পাওয়া গেছে। দ্বীপের শাহবাজপুর থেকে ইলিশা পর্যন্ত ৬০০ বর্গকিলোমিটারে ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) সিসমিক জরিপ চালানো হয়। এতে ২ দশমিক ৪২৩ টিসিএফ উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত আবিষ্কৃত হয়েছে। চরফ্যাসনে দ্বিমাত্রিক (টুডি) সিসমিক সার্ভে করে ২ দশমিক ৬৮৬ টিসিএফ গ্যাসের মজুত পাওয়া গেছে। শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে ভোলায় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে (২২৫ ও ৩৫ মেগাওয়াট) গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকদেরও গ্যাস দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, ১৯৯৫ সালে বাপেক্স ভোলার শাহবাজপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পায়। তাই বাপেক্সকে দিয়ে কূপ খননের কাজ করা উচিত। বাপেক্সের সক্ষমতা না থাকলে তার সঙ্গে অন্য কোনো কোম্পানিকে যুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু এককভাবে কোনো বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বলেন, বাপেক্স নিজের গ্যাসক্ষেত্রে নিজেই গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান করলে তা সাশ্রয়ী হবে। এতে বাপেক্সের কর্মীদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়বে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৬ ডিসেম্বর : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

৬ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

নতুন ‘বাবরি মসজিদের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শনিবার

নতুন প্রজন্ম শান্তিপূর্ণ রাজনীতি প্রত্যাশা করে : ইশরাক

ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা আজ

‘খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের আপনজন’

২০ বছরের ব্যবসা বাঁচাতে ছাড়লেন চেয়ারম্যান পদ

তাসনিম অনন্যার অনুসন্ধানে মহাবিশ্বের চাঞ্চল্যকর রহস্য উন্মোচন

২০২৬ বিশ্বকাপে কবে মুখোমুখি হতে পারে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল?

১০

বিশ্বকাপের গ্রুপ অব ডেথে ফ্রান্স

১১

নুরুদ্দিন অপুর হাত ধরে আ.লীগ নেতার বিএনপিতে যোগদান

১২

২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত: দেখে নিন কোন গ্রুপে কোন দল

১৩

২০২৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ যারা

১৪

রাতে আবার হাসপাতালে গেলেন জুবাইদা রহমান

১৫

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় ৩০টির বেশি দেশ

১৬

খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, বন্ধ হয়েছে রক্তক্ষরণ

১৭

‘বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে ঝুপঝাপ শব্দে ভেঙে পড়ে’

১৮

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

১৯

দেড় হাজার দৌড়বিদের অংশগ্রহণে হাফ ম্যারাথন

২০
X