ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মের পর থেকে মা শাহানার বুকের দুধ পাচ্ছিল না নবজাতক আব্দুল্লাহ। পাশের বিছানাতেই ছিলেন আরেক নবজাতকের মা নুসরাত। তার সন্তান ছিল আইসিইউতে ভর্তি। আব্দুল্লাকে দুধ দানে এগিয়ে আসেন নুসরাত। তিন দিন ধরে নিজের বুকের দুধ পান করান শাহানার সন্তান আব্দুল্লাহকে।
নিজের সন্তান হয়তো বাঁচবে না—এই আশঙ্কা থেকে শাহানার সন্তানকে চুরি করে নিয়ে যান নুসরাত। ৩১ আগস্ট দুপুরে নবজাতক আব্দুল্লাহকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আজিমপুরে স্বামী তুষারের কাছে তুলে দেন। এরপর আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন নুসরাত। এদিকে আব্দুল্লাকে খুঁজে না পেলে নুসরাত দাবি করেন, শাহানা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার পাশে আব্দুল্লাকে রেখে আইসিইউতে নিজের সন্তান দেখতে গিয়েছিলেন। সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদে নুসরাত শিশু চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে আব্দুল্লাহকে সুস্থ অবস্থায় কামরাঙ্গীরচর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাতেই শিশুটি তার বাবা হিরন ও মা শাহানার কাছে ফিরিয়ে দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ।
গতকাল রোববার রমনা বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, নবজাতক চুরির ঘটনায় শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন নুসরাতের স্বামী নাজমুল হোসেন তুষার, শাশুড়ি নাহার বেগম ও ননদ নাদিরা ওরফে খুরশিদা। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রাজমিস্ত্রি হিরন মিয়া ও শাহানা বেগম দম্পতির পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া নবজাতক মায়ের দুধ পাচ্ছিল না। এই সময়ে একই ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা নুসরাত দুধ দানে এগিয়ে আসেন। তার নবজাতক আইসিইউতে থাকায় তিনি এ সহযোগিতা করেন।
শিশু চুরির বিষয়ে ডিসি আশরাফ বলেন, তিন দিন ধরে শাহানার নবজাতককে দুগ্ধ দান করে আসছিলেন। এ সময় তার শিশুটি আইসিইউতে ছিল। তার শিশুটির বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা না থাকায় তিনি হাসপাতাল থেকে শাহানার সন্তানকে ৩১ আগস্ট চুরি করে নিয়ে যান। এরপর শিশুটিকে নিয়ে আজিমপুর এলাকায় স্বামী তুষারের হাতে তুলে দেন। এরপর ফের হাসপাতালের বেডে এসে শুয়ে থাকেন। আর তুষার শিশুটিকে তাদের বাসায় নিয়ে যান। ডিসি আরও বলেন, এ ঘটনার তথ্য পেয়ে শাহবাগ থানা পুলিশ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখে। তাতে দেখা যায়, নুসরাত নবজাতকটি কোলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে তাকে জিজ্ঞাবাদ করলে চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন। পরবর্তী সময়ে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কামরাঙ্গীচর এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় এবং তার স্বামী, শাশুড়ি ও ননদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নুসরাত সিজারের রোগী। অসুস্থ থাকায় তাকে থানা পুলিশের হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। নুসরাত সুস্থ হলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে।
মন্তব্য করুন