ঝকঝকে সড়কে সন্ধ্যা নামার আগ মুহূর্তে ছুটে চলেছে নানা রকম যানবাহন। এমন সময় এসব গাড়ি টপকে এগিয়ে যাচ্ছে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা! সেটির পেছনে ছুটছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট। অটোরিকশার ভেতরে বসা পুলিশের এক ট্রাফিক সদস্য। সেই রিকশা থামানোর জন্য বারবার সংকেত দিচ্ছেন মোটরসাইকেলে পিছু নেওয়া সার্জেন্ট, তবুও এটি থামানো যাচ্ছে না।
এখানেই শেষ নয়, সড়কে চলা কোনো কোনো প্রাইভেটকার চালকও অটোরিকশাটিকে থামানোর চেষ্টা করছেন। থামাতে গিয়ে উল্টে পড়ে যান এক মোটরসাইকেলের চালক। তবুও কোনোকিছুকেই তোয়াক্কা না করে এপাশ-ওপাশ ঘুরিয়ে চলেছে অটোরিকশার চালক! এটিকে তামিল কোনো অ্যাকশন সিনেমার দৃশ্য মনে হলেও, এ ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকার ঝকঝকে ৩০০ ফিট সড়কে। যে ভিডিও এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
গত মঙ্গলবারের এ ঘটনার বিষয়ে শেষ পর্যন্ত জানা গেছে, এটি ‘চোর-পুলিশ’ খেলার অংশ। ওই দিন চালক উল্টোপথে অটোরিকশা নিয়ে গিয়ে পেছন থেকে একটি প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দিয়েছিলেন। ঘটনার শুরু সেখান থেকেই। এর পরের দৃশ্য ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরপর কী ঘটল, এমন প্রশ্ন তো থেকেই গেল নেটিজেন দর্শকদের মনে!
উত্তর মিলল ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান ট্রাফিক বিভাগে। জানা গেল, প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো পথে অটোরিকশা নিয়ে পালাচ্ছিলেন চালক। তাকে থামিয়ে উল্টোপথে চলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছিলেন দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট। তখন একজন ট্রাফিক উঠে বসেন সেই অটোরিকশায়। এর মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত সেই প্রাইভেটকার চালক এসে থামেন ঘটনাস্থলে। প্রাইভেটকারের চালক তার সঙ্গে হওয়া ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সার্জেন্টের কাছে। ঘটনা শুনে ট্রাফিক সার্জেন্ট থানায় ফোন দেন। এ অবস্থা দেখে অটোরিকশার চালক পেছনে বসা কনস্টেবলকে নিয়েই বেপরোয়া গতিতে ছুটতে থাকেন, যা সড়কের অন্য লোকজন ভিডিও করেন।
ঘটনাস্থলে ছিলেন গুলশান ট্রাফিক বিভাগের বাড্ডা জোনের সার্জেন্ট রোকন-উজ্জামান। তিনি বলেন, ‘উল্টোপথে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে আসায় ৩০০ ফিট সড়কের মুখে আমি অটোরিকশার চালককে থামাই। কারণ জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। ওই সময় এক প্রাইভেটকার চালক এসে বলেন, তার গাড়িতে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাচ্ছিল অটোরিকশাটি। তখন দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল অটোরিকশায় উঠে বসেন, যাতে চালক পালিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে অটোরিকশা চালক পালানোর উদ্দেশ্যে বেপরোয়াভাবে চালানো শুরু করেন। পিছু নিয়ে থামার সংকেত দিলেও সে থামবে না বলে জানিয়ে ড্রিফটিং করতে থাকে।’
এই সার্জেন্ট বলেন, অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি বাইক নিয়ে ছোটেন অটোরিকশা থামাতে। সেই বাইকেও কয়েকবার ধাক্কা মেরে পালানোর চেষ্টা করে অটোরিকশার চালক। এতে তিনি পরে গেলেও অটোরিকশার ভেতরে থাকা ট্রাফিক কনস্টেবল বা সড়কে অন্য গাড়ির যাত্রীদের যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্য সজোরে তিনি ধাক্কা দিয়েও অটোরিকশা থামাতে পারছিলেন না। গতি কমে এলে একপর্যায়ে জনতার সহায়তায় সেই চালককে আটক করা হয়। পরে জানা যায়, সেই চালকের নাম মো. লিটন।
বাড্ডা জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আজম মাহমুদ বলেন, ‘ধাক্কায় প্রাইভেটকারটির অনেক ক্ষতি হয়েছে, জরিমানা দিতে না পারলে জেল খাটতে হতে পারে—এমন চিন্তা থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিল চালক লিটন।’
ঘটনাটি রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকার মধ্যে হয়েছে। ওই থানার উপপরিদর্শক রেজাউল জব্বার জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ট্রাফিক পুলিশের কাছে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। ততক্ষণে জনতা সেই অটোরিকশা চালককে আটকে পিটুনি দেওয়া শুরু করে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাইভেটকারের চালক কোনো অভিযোগ না করায়, ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে মুচলেকা নিয়ে অটোরিকশার চালক লিটনকে তার পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, অটোরিকশা চালক লিটনের বাসা কাঞ্চনব্রিজ এলাকায়। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে অটোরিকশাসহ কাঞ্চনব্রিজ এলাকায় যেতে চেয়েছিল সে।
মন্তব্য করুন