

বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের জন্ম ও মৃত্যুদিবস ছিলো চলতি ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ। যে যুগে ভারতবর্ষের নারীরা ছিল পিছিয়ে পড়া, সেই অন্ধকার সময়ে বেগম রোকেয়া এক অদম্য সাহসী নারী হিসেবে স্বপ্ন দেখেছিলেন নারী জাগরণের। তিনি ছিলেন এক স্বপ্নদ্রষ্টা নারী। তার স্বপ্ন ছিল-নারীরা হবে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত, উন্নত জীবনে আধুনিক মানসিকতার অধিকারী। আর সেই বিপ্লবী কল্পনাকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার সাহিত্যকর্মে। এই মহিয়সীর অদম্য স্পৃহা এবং দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনা এবার কবিতার ছন্দ, সুরের মূর্চ্ছনা আর কণ্ঠাভিনয়ের জাদুতে উঠে এলো ঢাকার মঞ্চে৷
‘রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা’ শিরোনামের এই কাব্যনাটকের আয়োজন করা হয়েছিল শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেন্দিয়ার জাহেদ হাসান মিলনায়তনে৷ হলভর্তি দর্শক-শ্রোতা পিনপতন নীরবতায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেন ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের এই আয়োজন৷ মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার দৃঢ়তা আর অনড় সংকল্প যেন নেমে এসেছিল মঞ্চের প্রতিটি পারফরমারের চোখেমুখে; কণ্ঠধ্বনিতে৷ যা অনুরণিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল দর্শক গ্যালারির সবটা জুড়ে৷
প্রযোজনাটির গ্রন্থনা এবং নির্দেশনা দিয়েছেন নার্গিস সুলতানা৷ পোশাক পরিকল্পনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানেও ছিলেন তিনি৷ আবহসংগীত করেছেন আরেফিন নিপুন ও মাজহারুল তুষার৷
বেগম রোকেয়াকে নিয়ে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন সম্পর্কে নির্দেশক নার্গিস সুলতানা বলেন, “বেগম রোকেয়ার সাহসী ও ক্ষুরধার লেখনী এবং তার দূরদর্শী চিন্তা-চেতনা ও দর্শনই আমাদের ‘রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা’ অনুষ্ঠানের মূল ভিত্তি। তার অমিয় বাণীকে পাথেয় করে আমরা কাব্য ও নাট্যে সমাজে নারীর বর্তমান অবস্থান এবং তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে, সেই বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি এ প্রযোজনায়।”
তিনি বলেন, “আজ শত বছর পরে, এই তথাকথিত প্রগতিশীল সমাজে দাঁড়িয়ে আমাদের জিজ্ঞাসা, আজকের সুলতানারা কেমন আছেন? রোকেয়ার স্বপ্ন কতখানি বাস্তবে রূপ নিয়েছে? আজকের নারী কি সত্যিই ‘অবাদী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে নাকি রোকেয়ার সুলতানারা এখনও নিজেদের অধিকার ও অস্তিত্বের লড়াইয়ে ব্যতিব্যস্ত!” এসব প্রশ্নের উত্তরই এই কাব্যনাটকে খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
নার্গিস সুলতানা আরও বলেন, ‘কবিতার বলিষ্ঠ উচ্চারণ আর শ্রুতিঅভিনয়ে আমরা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি- বেগম রোকেয়ার সুলতানারা সমাজকে নতুন আলোর প্রান্তে আনতে পেরেছেন কি না! নাকি শত প্রতিকূলতায় তারা স্বপ্ন দেখতে ও স্বপ্নে বাঁচতে ভুলে গেছেন?’
যেসব নারীরা মহিয়সীর সেই স্বপ্নের পৃথিবীকে বাস্তবে পরিণত করতে লড়াই-সংগ্রামে সোচ্চার রয়েছেন, সেই সব রোকেয়া-অনুরাগীদের জন্য এ অনুষ্ঠানটি উৎসর্গকৃত বলে জানান নির্দেশক৷
সাহিত্য-সংস্কৃতির সৃজনশীল প্ল্যাটফরম ‘লেখার পোকা’র পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত কাব্যনাট্যে আবৃত্তি, শ্রুতিকথন আর অভিনয়ে অংশ নেন নার্গিস আক্তার, রেজিনা খন্দকার, জয়া হাওলাদার, আবুল ফজল, তোফাজ্জল হোসেন তপু, সুজন রেহমান, নূরাইশা হাসান সামিয়া, মীর উমাইয়া হক পদ্ম, উম্মে হাবিবা শিবলী, অদ্রিতা ভদ্র ও নার্গিস সুলতানা৷
মন্তব্য করুন