পোষা বিড়ালকে নিয়ে খুনসুটি তো প্রতিদিনই মেতে থাকা হয়। খাওয়ানো, গোসল করানো, কোলে নিয়ে আদর কতভাবেই না তাকে আহ্লাদ করা হয়। কিন্তু আজ না হয় একটু বাড়তি আদর-যত্ন দিন তাকে। ভাবছেন কেন? কারণ আজকের এ দিনটি যে শুধু তাদের। প্রতি বছরের ৮ আগস্ট পালন করা হয় বিশ্ব বিড়াল দিবস। ২০০২ সালে সর্বপ্রথম ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার (IFAW) সংস্থার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বিড়াল দিবস পালিত হয়। এর পর থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বিশেষ এ দিনটিতে বিড়ালদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বিভিন্ন পেট শপে। যেখান থেকে কিনে দিতে পারেন আপনার বিড়ালের পছন্দের খেলনা, খাবার, বেল্ট, শ্যাম্পু, ব্রাশ, পেস্ট। কিনে আনতে পারেন তুলতুলে বিছানা। ঘুরে আসতে পারেন বিভিন্ন পেট রেস্টুরেন্ট থেকেও। যেখানে শখের বিড়ালের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতে পারেন।
ঘরে ঘরে পার্সিয়ান বিড়াল, কমছে দাম
আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রজাতির বিড়াল পাওয়া যায় যেমন—দেশি, পার্সিয়ান, মিক্সড ব্রিড, বেঙ্গল, সাইবেরিয়ান ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে দাম ও সহজলভ্য হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে দেশি ও পার্সিয়ানের। বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরাই বিড়ালের ক্রেতা বেশি হয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন কাটাবনের প্রিটি বার্ডস-এর কর্মী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন। দাম কেমন পড়ে বিড়ালের? জবাবে মামুন বলেন, পার্সিয়ান বিড়াল বিক্রি করা হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। আর দেশি যে বিড়াল রয়েছে তা মেলে ৫০০ থেকে হাজারের মধ্যেই। কিন্তু বেঙ্গল জাতের যে বিড়াল রয়েছে তার জোড়া পড়ে ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা। তবে আমাদের দেশে পালার জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য হলো দেশি ও পার্সিয়ান বিড়াল।
তবে আগে থেকে বর্তমানে কমে গিয়েছে পার্সিয়ান বিড়ালের দাম। আগে একটি পার্সিয়ান বিড়াল বিক্রি করা হতো ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সেখানে এখন ১০ হাজার টাকা দাম হাঁকালেও কেউ কিনতে চায় না। এর কারণ হিসেবে এই বিক্রেতা বলেন, আমাদের দেশে এখন প্রচুর বিড়াল পালন শুরু হয়েছে। ঘরের পাশাপাশি বিভিন্ন মানুষ বিড়ালের খামারও করছেন। ফলে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে পার্সিয়ান বিড়াল। কিন্তু আগে তেমনটা ছিল না। আগে আমাদের অর্ডার দিলে তবেই বাইরে থেকে এনে দিতে হতো।
দিন-রাত খাঁচার মধ্যে বন্দি থাকা এসব বিড়ালের যত্ন কীভাবে নেন আপনারা? মামুন বলেন, ছোট কিটেন (বিড়ালের বাচ্চা) যেগুলো রয়েছে তাদের চার বেলা খাবার দিতে হয়। আর বড়গুলোকে তিন বেলা খাবার দিতে হয়। ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর তাদের গোসল করাতে হয়। এ ছাড়া নখ কাটা, দাঁত ব্রাশ করা তো রয়েছেই। যেসব বিড়াল একটু দুর্বল থাকে সেগুলোকে ভিটামিন ও প্রোটিন তো দিতেই হয়। মাঝে মধ্যে তাদের খাঁচা থেকে বের করি যাতে করে খোলা জায়গায় তারা খেলা করতে পারে। বিড়ালের সবচেয়ে বেশি যে রোগগুলো হয় তা হলো ফ্লু। তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ফ্লুর টিকা দিতে হয়।
পার্সিয়ান এসব বিড়ালের খাদ্য তালিকায় রাখা হয় চিকেন, মাছ ও বিভিন্ন সবজি। বাচ্চাদের বিভিন্ন সবজি সিদ্ধ করে তারপর তা ভালো করে ব্লেন্ড করে খাওয়াতে হয়। কারণ তাদের যদি দেশি বিড়ালের মতো ভাতের সঙ্গে মাছ ও ব্রয়লার মেখে দেওয়া হয় তাহলে তাদের ওজন তো বেড়ে যাবেই পাশাপাশি তাদের লোম ঝরে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাই পার্সিয়ান বিড়ালকে যতটা সম্ভব ভাত কম খাওয়াতে হবে।
বিড়াল পালনে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি
টক্সোপ্লাজমোসিস: এটি একটি পরজীবী, যা বিড়ালের মলের মাধ্যমে ছড়ায় এবং মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। গর্ভাবস্থায় এ রোগটি মায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অন্যান্য পরজীবী সংক্রমণ: বিড়ালের শরীরে উকুন, ফ্লি বা অন্যান্য পরজীবী থাকতে পারে, যা মানুষের ত্বকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ: কিছু ব্যাকটেরিয়া বিড়ালের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যেমন সালমোনেলা বা ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর।
ভাইরাসঘটিত রোগ: যদিও বিড়াল থেকে মানুষের মধ্যে ভাইরাসঘটিত রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি কম, তবে কিছু ক্ষেত্রে তা হতে পারে।
বিড়াল পালনে অ্যালার্জির ঝুঁকি: বিড়ালের লোম, লালা এবং মৃত চামড়া থেকে অ্যালার্জেন তৈরি হতে পারে, যা অ্যালার্জি, হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
করণীয়
নিয়মিত বিড়ালের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
বিড়ালের লিটার বক্স পরিষ্কার করার সময় গ্লাভস এবং মাস্ক ব্যবহার।
বিড়ালের সঙ্গে খেলার পর হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
অন্তঃসত্ত্বাদের বিড়ালের সংস্পর্শে আসার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা।
বিড়ালকে নিয়মিত গোসল করানো এবং লোম পরিষ্কার রাখা।
শিশুরা বিড়ালের সংস্পর্শে আসার পর হাত পরিষ্কার রাখা জরুরি।
মন্তব্য করুন