গত দু-তিন বছর অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সরকারের নানা উদ্যোগে চলতি বছরের জুনে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি অনেকটা কমেছিল। কিন্তু এক মাস বাদে জুলাইয়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। জুনের তুলনায় জুলাইয়ে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় ধরনের পণ্যেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চলতি বছরের জুলাইয়ের ভোক্তা মূল্যসূচকের তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বিবিএস। সবশেষ তথ্য বলছে, জুলাইয়ে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে, যা জুনে ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
জুলাইয়ে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হওয়ার মানে বাজার থেকে পণ্য ও সেবা কিনতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যদি খরচ হয় ১০০ টাকা, তাহলে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে সেই একই পণ্য ও সেবা কিনতে ১০৮ টাকা ৫৫ পয়সা খরচ করতে হয়েছে ভোক্তাদের। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ৮ টাকা ৫৫ পয়সা।
বিবিএস বলছে, জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা জুনে ছিল ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এদিকে জুনে দেশের খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ থাকলেও জুলাইয়ে তা দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়ে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশে দাঁড়ায়।
জুলাইয়ে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ সময়ে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
গতবছরের জুলাইয়ে আন্দোলনের ধাক্কায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেয়। এর কিছুটা সুফলও মেলে। গত দু-তিন বছর ধরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ানো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। এতে কয়েক মাস গড় মূল্যস্ফীতি ৯ ও ১০ শতাংশের মধ্যেই ওঠানামা করছিল। এ বছর জুনে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়, যা ছিল ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
কিন্তু এক মাস বাদে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। অথচ চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের উচ্চ হার ধরে রেখেছে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বজায় থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
মন্তব্য করুন