রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশোর আকাশকে (১৪) রড চুরির অভিযোগে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত মূলহোতাসহ পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে দুজনকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও তিনজনকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, কিশোর আকাশকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে গ্রেপ্তার আসামিরা। তারা জানান, এ ঘটনার মূলহোতা প্রকৌশলী মীর মোয়াজ্জেম হোসেন। গত শুক্রবার সিরাজগঞ্জ সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বাবু (২১) ও মো. আব্দুল বারেক বাবুকে (২৩) গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। একই দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন, ফিরোজ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করে র্যাব।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নির্মাণ শ্রমিকরা আকাশকে চোর সন্দেহে আটক করে তাদের থাকার জায়গায় নিয়ে যায়। পরে প্রকৌশলী মোয়াজ্জেমের নির্দেশে ওই কিশোরকে রড চুরির অপবাদ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় হাত-পা বেঁধে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে লাঠি, লোহার রড ও স্টাম্প দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। মোবাইল ফোনে পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করে মোয়াজ্জেমের কাছে পাঠানো হয়। ফিরোজ ও মোস্তাফিজুর আকাশের ওপর নির্যাতন চালায়। ফিরোজ পেশায় একজন শ্রমিক। মোস্তাফিজুর নির্মাণাধীন সাইটের ফোরম্যান হিসেবে আছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে আকাশ বন্ধুদের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়ায় নির্মাণাধীন বরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আড্ডা দিতে যায়। সেখানে শ্রমিকরা চোর সন্দেহে তাদের ধাওয়া করলে অন্য বন্ধুরা পালিয়ে যেতে পারলেও আকাশকে তারা আটক করে। পরে ভবনটির ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেমের নির্দেশে তাকে লাঠি, লোহার রড ও স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয়। পরদিন ভোর ৬টার দিকে আকাশ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে নির্যাতনকারীরা তার ফুফুকে ফোনের মাধ্যমে জানায়। ফুফু ঘটনাস্থলে এসে আকাশকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। সকাল ৮টার দিকে সে মারা যায়।
আকাশের মৃত্যুর সংবাদ শুনে গ্রেপ্তার এড়াতে ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকরা পালিয়ে রাজধানীর মগবাজার, রমনাসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যায়। এ ঘটনায় আকাশের ফুফু মোহাম্মদপুর থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। আকাশ স্থানীয় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির একজন ছাত্র ছিল। তাকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে বলেন, হত্যায় ব্যবহৃত লাঠি, রড ও ক্রিকেট খেলার স্টাম্প উদ্ধার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন