আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক বার্তা ও কার্যক্রম জনগণের কাছে সরাসরি পৌঁছে দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও তৎপরতা বাড়াতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও এরই মধ্যে দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা নিজ উদ্যোগে তৎপরতা বাড়িয়েছেন। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে একটি পক্ষ বিএনপির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপিও বসে থাকতে পারে না। সেই লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করেন, মূল ধারার গণমাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরার ক্ষেত্রে ‘সীমাবদ্ধতা’র কারণে বিএনপি তাদের কৌশল হিসেবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে উপযুক্ত মনে করছে। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার দুপুরে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মূলধারার মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তার বক্তব্যের বিশেষ কথাগুলোকে টিভি চ্যানেলের টকশো, পত্রিকার কলামসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কীভাবে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করা যায়, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যক্তিদের নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি।
এ বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী গতকাল কালবেলাকে বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নিয়ে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিভিন্ন ধরনের কাজ থাকে। সে লক্ষ্যেই সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে সভা হয়েছে। সভার আলোচ্য বিষয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কীভাবে আরও সক্রিয় এবং অগ্রসর হতে পারি সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানা যায়, বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী ড. সাইমুম পারভেজ, সাংগঠনকি সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মাহবুবের রহমাম শামীম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সৈয়দ শাহীন শওকত, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, শরীফুল আলম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আকন কুদ্দুসর রহমান, আব্দুল খালেক, মিফতাহ সিদ্দিকী, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, বৈঠকে দলের সাংগঠনকি বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ মিডিয়ায় দলের ভূমিকা তুলে ধরার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, এক কথায় বৈঠকটি ছিল রুটিন ওয়ার্ক। তবে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, সামনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে নানা মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি কীভাবে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার মোকাবিলা করতে পারে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানা যায়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রচারে বিএনপি দলের মিডিয়া সেল বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অত্যন্ত সক্রিয়। বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্সে (সাবেক টুইটার) বেশ সক্রিয়। বিএনপি মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজের অনুসারীর সংখ্যা ৩৩ লাখের বেশি। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’ পেজেরও রয়েছে ৩৮ লাখের বেশি ফলোয়ার বা অনুসারী। বিএনপির মিডিয়া সেলের ইউটিউব চ্যানেলে ৩৮ হাজারেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, যেখানে নিয়মিত লাইভ অনুষ্ঠান ও বিশ্লেষণমূলক ভিডিও দেওয়া হয়। সাবেক টুইটার তথা এক্স প্ল্যাটফর্মে অনুসারী রয়েছে ৮০ হাজারের বেশি। সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে সরকার পরিবর্তনের পর এক্সে দলটির অনুসারী বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এ ছাড়া টিকটক ও ইনস্টাগ্রামেও অনেক ফলোয়ার বা অনুসারী রয়েছে। পাশাপাশি সাংগঠনিক খবর আদান-প্রদানে হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২২ জুন মিডিয়া সেল গঠন করে বিএনপি। এ ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নামে পৃথক ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর বিভিন্ন খবর নিয়মিত প্রচার করা হয়।
ড্যাবের নতুন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়
এদিকে বিএনপির চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি নতুন নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ড্যাব শুধু চিকিৎসাসেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঝড় জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, করোনা, শীতকালে সব দুর্যোগে ড্যাবের নেতৃবৃন্দ পাশে থেকেছেন। বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ বিতরণ করেছেন। তিনি বলেন, এক-এগারোর সময়টি বিএনপির জন্য গভীর খাদের সৃষ্টি করে। সেখান থেকে উঠে আবারও ১৬ থেকে ১৭ বছর আন্দোলন করতে হয়েছে।
রিজভী বলেন, পতিত আওয়ামী স্বৈরশাসকের শাসনামলে ড্যাবের কোনো নেতাকর্মীই শান্তিতে ছিলেন না। যারা যৌবনে ছাত্রদল করেছেন অথবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তারা পদোন্নতি পাননি। বিদেশ যাত্রা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। চাকরিচ্যুত করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী ঘরানার ডাক্তারদের। জুনিয়রদের প্রমোশন দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণে সেসব ডাক্তারদের কাজ করতে বাধ্য করা হতো। মেধাকে অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
ড্যাবের নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিলের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সহসম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন, সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল কেনান, কোষাধ্যক্ষ ডা. মো. মেহেদী হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. খালেকুজ্জামান দিপু প্রমুখ। এ সময় ড্যাব নেতা ডা. জাহিদুল কবির, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. মাসুদ আক্তার জিতু, ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, ডা. রুস্তম আলী মধু, ডা. নিলোফার ইয়াসমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ফিলিস্তিনের গাজার উদ্দেশে রওনা দেওয়া বাংলাদেশি ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমকে অপহরণ করার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী। এ বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মন্তব্য করুন