ইভ্যালি, কিউকম, ধামাকাসহ অন্তত ৩৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকদের এখনো পাওনা অন্তত ১৫০ কোটি টাকা। শুধু বিকাশ, নগদ, এসএসএল কমার্স, সূর্যমুখী পে এবং ফস্টারের মতো পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গ্রাহকের সরাসরি পাওনা হিসাবে নিলে এর পরিমাণ আরও বেশি হবে। তবে ইতোমধ্যে প্রায় পৌনে ৪০০ কোটি টাকা রিফান্ড তথা ফেরত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। পেমেন্ট গেটওয়ে এবং গেটওয়ের বাইরের পাওনা অর্থ গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে ইভ্যালির সঙ্গে পরীক্ষামূলক একটি প্রকল্প হাতে নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এটি সফল হলে অন্য ই-কমার্সের গ্রাহকদেরও একই উপায়ে অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১২ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন গেটওয়েতে ৩৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আটকে ছিল ৫৩৩ কোটি ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৪৫ টাকা। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো ৩৮৬ কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫৩ টাকা ফেরত দিয়েছে। এখনো গ্রাহকদের পাওনা ১৪৬ কোটি ১৭ লাখ ৪ হাজার ১৯২ টাকা। এর মধ্যে সিংহভাগ আটকে আছে ইভ্যালি এবং কিউকমÑএ দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে। ইভ্যালির কাছে ১৫ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৬ এবং কিউকমের কাছে ৭৫ কোটি ১৯ লাখ ৫ হাজার ৯৭৬ টাকা আটকে আছে। তবে কিউকম বলছে, আটকে থাকা অর্থ তাদের নিজস্ব। বেশিরভাগ গ্রাহককেই পেমেন্ট গেটওয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বুমবুমের ২ লাখ ৩৩ হাজার ১৮৮ টাকা, থলের ৫৫ লাখ ১৮ হাজার ৫০৩ টাকা, আনন্দের বাজারের ৩৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮৭ টাকা, ধামাকা শপিংয়ের ৩৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮৭ টাকা, আলেশা মার্টের ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ১১১ টাকা, দালাল প্লাসে ১৫ কোটি ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮৯৮ টাকা আটকে আছে। তবে সিরাজগঞ্জ শপ পেমেন্ট গেটওয়েতে থাকা ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৪ টাকার পুরোটাই গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছে। যদিও ১৮টি প্রতিষ্ঠান গেটওয়ের কোনো অর্থই তাদের গ্রাহকদের ফেরত দেয়নি।
গ্রাহকদের পাওনা অর্থ ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তারা। ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেল কালবেলাকে বলেন, পেমেন্ট গেটওয়ের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। আলোচনা বেশ ফলপ্রসূ। আশা করছি, ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখের মধ্যে একটা বড় অঙ্কের টাকা আমরা ফেরত দিতে পারব। বাকি টাকা দুই থেকে তিন ভাগে ফেরত দেব।
কিউকমের প্রধান নির্বাহী মো. রিপন মিয়া বলেন, পেমেন্ট গেটওয়েতে যে টাকা আটকে আছে, তা আমাদের ব্যবসার টাকা। অর্থাৎ, সেই টাকার বিপরীতে গ্রাহকরা পণ্য পেয়েছেন। প্রায় শতভাগ গ্রাহকের পাওনা ফিরিয়ে দিয়েছি। বাকি যে কয়েকজন আছেন, তাদেরও টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ চলছে।
জানা গেছে, পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থসহ সব ধরনের পাওনা গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে ইভ্যালির সঙ্গে একটি পাইলট কার্যক্রম পরিচালনা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল) মুহাম্মদ সাঈদ আলী কালবেলাকে বলেন, পেমেন্ট গেটওয়েতে যে টাকা বকেয়া রয়েছে, সেগুলো দ্রুত গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টাকা ফেরত পেয়েছে। আগামীতে পেমেন্ট গেটওয়েতে থাকা গ্রাহকদের পাওনার বিষয়ে তিন-চারটি তালিকা প্রকাশ করবে ইভ্যালি। সে অনুযায়ী গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। পেমেন্ট গেটওয়ের বাইরে আটকে থাকা গ্রাহকদের কীভাবে পরিশোধ করা হবে, তার একটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে ইভ্যালিকে। গতকাল বুধবার তাদের এই নির্দেশনা দিয়ে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি করা হবে। সেই কমিটি টাকা ফেরতের বিষয় দেখভাল করবে। পরীক্ষামূলক এই প্রকল্প সফল হলে পর্যায়ক্রমে অন্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অধীর আগ্রহে গ্রাহকরা: বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা টাকা ফিরে পেতে অধীর আগ্রহে দিন গুনছেন গ্রাহকরা। ২০২১ সালে শুরু হওয়া অচলাবস্থা এখনো কাটেনি। বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ নিয়ে কিছুটা নির্ভার থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি দেওয়া অর্থ ফিরে পাওয়া নিয়ে গ্রাহকরা সন্দিহান। অনেক গ্রাহকের কাছে টাকার রসিদ এবং চেক থাকলেও তা ফিরে পাওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রুমান ইসলামের কাছে ইভ্যালির দেওয়া প্রায় ৫ লাখ টাকার চেক রয়েছে। তিনি বলেন, বাইকের রিফান্ডের জন্য ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছিল ইভ্যালি। এই টাকা কোনো পেমেন্ট গেটওয়েতে নয় বরং সরাসরি দিয়েছিলাম। গেটওয়ের টাকা হয়তো আগে পরে সবাই পাবে, কিন্তু আমাদের কী হবে? এই চেকের কি আসলেই কোনো মূল্য আছে? কোনো আশা দেখছি না।
টাকা ফেরত দেয়নি যেসব প্রতিষ্ঠান: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব মতে, গত বছরের ১২ জুন পর্যন্ত অন্তত ১৮টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কোনো টাকা ফেরত দেয়নি। এর মধ্যে ই-নিডল লিমিটেডের ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪১৬ টাকা, ই-অরেঞ্জের ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯১ টাকা, উই কমের ৯৫ লাখ ২ হাজার ৬৯২ টাকা, আকাশ নীলের ১ লাখ ৮৮ হাজার ২১২ টাকা, আলাদীনের প্রদীপের ২ লাখ ১০ হাজার ৬৯৮ টাকা, পল্লী স্টোর লিমিটেডের ২৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪৯ টাকা, ফানাম ডট কমের ১০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯২ টাকা এবং নিডল ইনকরপোরেশনের ১ কোটি ১ লাখ ৬৩ হাজার ১১৮ টাকা।