কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৩৩ এএম
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মোস্তাফিজের আনুকূল্য পেতে গৃহবধূকে কৌশলে ডেকে আনে মামুন

জাবিতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
মোস্তাফিজের আনুকূল্য পেতে গৃহবধূকে কৌশলে ডেকে আনে মামুন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের আনুকূল্য পেতে পূর্বপরিচিত গৃহবধূকে কৌশলে ডেকে তার হাতে তুলে দিয়েছিল মামুনুর রশিদ মামুন। এরপর দুজন মিলেই ওই গৃহবধূর ওপর পৈশাচিকভাবে পাশবিকতা চালায়। তখন গৃহবধূর স্বামীকে হলের ভেতর আটকে রাখে অন্য ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মুরাদ হোসেন। ক্যাম্পাসে ডেকে নিয়ে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মামুন ও মুরাদকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

এই মামুন ক্যাম্পাসে বহিরাগত। ছাত্রলীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় সে ২০১৭ সাল থেকে ক্যাম্পাসে মাদক কেনাবেচা করে আসছিল। পাশাপাশি ছাত্রলীগ নামধারী কয়েক নেতাকে ইয়াবা সরবরাহসহ তাদের নানা আবদার মিটিয়ে আসছিল।

মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী র‌্যাব সূত্র বলছে, ঘটনার দিন ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ মামুনকে ‘মেয়ে জোগাড়’ করে দিতে বলেছিল। তার মনোবাসনা পূরণ করতে এবং ক্যাম্পাসে মাদকের কারবারে ওই নেতার সুনজর পেতে মামুন প্রথমে পূর্বপরিচিত গৃহবধূর স্বামীকে ফাঁদে ফেলে ক্যাম্পাসের হলে ডেকে নেয়। এরপর তাকে দিয়ে কৌশলে স্ত্রীকে ডেকে আনা হয়। পরে মুরাদসহ ছাত্রলীগের আরও কয়েক নেতা গৃহবধূর স্বামীকে হলের ভেতর আটকে রাখে।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মামুন স্বীকার করেছে, ‘ছাত্রলীগের নেতা মোস্তাফিজের নির্দেশে গৃহবধূকে মীর মশাররফ হোসেন হলের পেছনে বোটানিক্যাল গার্ডেনের নির্জন জঙ্গলে নিয়ে যান। সেখানে প্রথমে মোস্তাফিজ ওই নারীকে ধর্ষণ করে। এরপর সে নিজেও পাশবিকতায় অংশ নেয়।

গ্রেপ্তার মুরাদ দাবি করেছে, সে সহ আরও কয়েকজন মিলে ওই নারীর স্বামীকে হলের কক্ষে আটকে রেখেছিলেন। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনাটা সে ওইদিন বুঝতে পারেনি। পরে মামলা হলে ঘটনা জানতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে মামুন ও মুরাদকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। সেখানে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ধর্ষণের ঘটনার আগে মামলার প্রধান আসামি জাবি ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর গ্রেপ্তার মামুনের কাছে অনৈতিক কাজের ইচ্ছা প্রকাশ করে। সে ইচ্ছা পূরণ করতে মামুন ওই ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে ৩ ফেব্রুয়ারি ফোন দেয়। নারীর স্বামীও মামুনের সঙ্গে মাদক কারবারে যুক্ত ছিল। সেজন্য মামুন ফোনে জানায় মোস্তাফিজ নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। মামুনের কথা মতো ওইদিন সন্ধ্যার দিকে জাবির মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করেন নারীর স্বামী। পরে ভুক্তভোগীর স্বামীকে মামুন তার অন্যতম সহযোগী মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।

র্যাব মুখপাত্র বলেন, মামুন এক সময় ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর সঙ্গে সাবলেট থাকতো। সে নারীর স্বামীকে জানায়, এখন থেকে সে জাবির হলে থাকবে। এজন্য বাসায় থাকা কাপড়গুলো নিয়ে আসতে তার স্ত্রীকে (ভিকটিম) ফোন দিতে বলে। মামুনের কথা মতো ফোন করলে রাত ৯টার দিকে মামুনের ব্যবহৃত কাপড়গুলো একটি ব্যাগে করে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে উপস্থিত হয় ভুক্তভোগী। ওইসময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন ও মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজ কৌশলে মুরাদকে ভিকটিমের স্বামী ও কাপড়ের ব্যাগসহ হলের ৩১৭ নম্বর রুমে নিয়ে যেতে বলে। মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে নিয়ে হলের রুমে অবস্থান করে। এ সময় মামুন ও মোস্তাফিজ ভিকটিমকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে। আসামিরা হলের রুমে গিয়ে নারীর স্বামীকেও বাসায় চলে যেতে বলে। এরপর স্বামী তার স্ত্রীর কাছ থেকে ধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা করে। ঘটনা জানাজানি হলে মামুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় আত্মগোপন করে। গ্রেপ্তার মুরাদ ও মোস্তাফিজকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে নিজেও পালিয়ে যায়। তবে ঘটনার পরদিনই প্রধান আসামি মোস্তাফিজ গ্রেপ্তার হয় এবং নওগাঁয় পালিয়ে থাকা মুরাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র্যাব জানায়, মামুন প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকার জুরাইন এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে চাকরি শুরু করে। পরে সে আশুলিয়া এলাকায় এসে গার্মেন্টসের চাকরির পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়। জাবির আশপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে মাদক সরবরাহ করার ফলে তাদের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়। পরে সে গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি মাদক ব্যবসায় জড়ায়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্ত ৮টি মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে এসব মামলায় একাধিকবার কারাভোগ করেছে সে।

মুরাদ জাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। সে মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকত। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ থানায় মারামারি সংক্রান্ত ১টি জিডি রয়েছে। তার নামে ৩১৭ নম্বর কক্ষ বরাদ্দ হলেও থাকত অন্য রুমে।

কমান্ডার মঈন বলেন, মামুন নিয়মিত কক্সবাজার থেকে মাদক আনত। ঘটনার আগের দিনও ২১শ’ ইয়াবা নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে সে। তার মাদক কারবারের হট জোন ছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে বটতলা এলাকা। মাদক বিক্রি ছাড়াও ক্যাম্পাসে নারীদের হেনস্তা, নিপীড়ন, শ্লীলতাহানিসহ ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সে। তবে ভুক্তভোগী অনেক নারী ভয়ভীতির কারণে তা প্রকাশ করেননি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়

বেড়েছে পদ্মার পানি, ডুবেছে ৩১ গ্রাম

ভূমিকম্পে কাঁপল আফগানিস্তান, নজর রাখছে জার্মান সংস্থা

নোয়াখালীতে পুকুরে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু

ঝগড়া থামাতে গিয়ে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

মোহাম্মদপুরের কুখ্যাত ছিনতাই চক্রের প্রধান ভাগনে বিল্লাল গ্রেপ্তার

কোন কোন শর্ত মেনে ছেলেদের চীনাবাদাম খাওয়া উচিত

যাবজ্জীবন দণ্ড ভোগ করে মুক্তির পর দোকান পেলেন দুলাল

রাজস্থান থেকে মিস ইউনিভার্স বিশ্বমঞ্চে মনিকা বিশ্বকর্মা

জুলাইয়ে সড়কে ঝরেছে ৪১৮ প্রাণ

১০

চোখের চিকিৎসায় ব্যাংকক গেলেন মির্জা আব্বাস

১১

খাবার হোটেলে গিয়ে অবরুদ্ধ শ্রম পরিদর্শক

১২

ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ২২৬৪ মামলা

১৩

বিতর্কিত শিক্ষা কর্মকর্তা সালামকে বদলি, গাজীপুরে মিষ্টি বিতরণ 

১৪

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিদল

১৫

ফ্লাইটে কারিগরি ত্রুটির ঘটনায় কঠোর সিদ্ধান্তে বিমান

১৬

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অর্থায়ন করছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ

১৭

এই কৌশলে মাত্র ২ মিনিটেই ঘুমিয়ে পড়বেন যেভাবে

১৮

টানা ৫ দিন বৃষ্টির আভাস, সন্ধ্যার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়

১৯

জনগণের সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করেই সমাধান করব : আমিনুল হক

২০
X