পরিচয়ের শুরুটা আরও চার বছর আগে। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে ধনাঢ্য পরিবারের আব্দুল আহাদ মর্তুজার সঙ্গে পরিচয় হয় যশোরের তরুণী ফারহানা ইয়াসমিনের। পরিচয়ের সূত্র ধরে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। ধীরে ধীরে ফেসবুকের সেই বন্ধুত্ব গড়ায় প্রণয়ে। সবশেষে ২০২০ সালে নিজেরাই কাজি অফিসে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলেন। সেই কথা দুজনের বাসায় জানাজানি হতেই শুরু হয় বিপত্তি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পরিবারের সম্মতিতে তাদের আবার বিয়েও হয়। বিয়ের চার বছরের ব্যবধানে সংসারের সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে ফারহানার চোখের জলে। এখন স্বামী-সংসার ফিরে পেতে মামলা-মোকাদ্দমা আর স্বামীর বাসার সামনে বসে অনশনে দিন কাটছে ফারহানার।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন এক নারী—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ সময় ওই নারী বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন। অভিযোগ তুলেছেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছেন। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার খবরে হাসপাতালে ছুটে যায় পুলিশ। পরদিন শ্বশুর মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরী, স্বামী আব্দুল আহাদ মর্তুজা এবং শাশুড়ি রহিমা বেগমের বিরুদ্ধে
মামলা করেন ফারহানা। এরপর মামলার আসামিরা জামিন পান। মামলার পর ফারহানাকে সেইফ হোমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু গত রোববার রাতে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নগরের পাঁচলইশের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় স্বামীর বাড়ির সামনে অনশন শুরু করেন ফারহানা।
গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, ওই বাড়িটি ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়। বাড়ির সামনেই অনশনে বসেছেন ফারহানা। তার পাশে কয়েকটি পানির বোতল, মশারি ও কম্বল রাখা আছে। তিনতলা ওই বাড়িটি ঘিরে সবাই কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। ফারহানার কাছে এসে করছেন নানা প্রশ্ন। বাড়িটি মারসা গ্রুপের পরিচালক মর্তুজা সিদ্দিকের বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা কাউসার কালবেলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে তৃতীয় লিঙ্গ ও কিছু লোকজন এসে ফারহানার খোঁজখবর নেন। এ সময় তারা বাড়িটির গেট ভাঙার চেষ্টা করেন। পরে তারা কিছু খাবার কিনে দিয়ে চলে গেছেন।’
এদিকে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফারহানা। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে স্বামীর কোনো ঝামেলা নেই। পরিবারের চাপে সে এমন করছে। আমি স্বামী-সংসার ফেরত চাই। এখন যে অবস্থা, হয় আমাকে মরতে হবে, নাহয় স্বামীর কাছে ফেরত যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘একটা মানুষকে আমি একবার নয়, তিনবার বিয়ে করেছি। তাকে কীভাবে ভুলে যাব।’
এ ব্যাপারে জানতে মর্তুজা সিদ্দিক ও আব্দুল আহাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নম্বর দুটি বন্ধ পাওয়া যায়। পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানিয়েছেন, এ ঘটনা নিয়ে মামলা দায়েরের পর গত শুক্রবার রাতেই মর্তুজা সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে জামিন পান তিনি।