মধ্যরাতে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। চলছিল সোমবার ভোরেও। তাই ঘুম থেকে ওঠেননি তারা। এমনিতে সিলেটে কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে চলছে বন্যা পরিস্থিতি। এমন বাদল দিনে সকালে বাড়িঘেঁষা টিলা ধসে এসে পড়ে আধাপাকা ঘরের ওপর। এতেই শেষ হয়ে যায় একটি পুরো পরিবার। ঘুম থেকে তারা চলে যান চিরঘুমে।
গতকাল সোমবার সিলেট নগরীর ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুরের মেজর টিলার চামেলীবাগ আবাসিক এলাকায় টিলাধসে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। দুপুর দেড়টার দিকে ওই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্ধারকারীরা। তারা হলেন আগা করিম উদ্দিন (৩০) তার স্ত্রী শাম্মি রুজি বেগম (২৫) ও তাদের দুই বছরের শিশু তানিম। করিম একটি ইন্টারনেট কোম্পানির কেবল অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।
ওই বাড়িতে থাকতেন ১১ জনের যৌথ পরিবার। টিলাটি ধসে এসে ঘরের ওপর পড়তেই তা একেবারে গুঁড়িয়ে যায়। এতে চাপা পড়েন ১১ জনের সবাই। তাৎক্ষণিকভাবে আটজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তবে ওই তিনজনকে তখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চামেলীবাগ আবাসিক এলাকার ৮৯ নম্বর বাড়িটি করিম উদ্দিনদের পৈতৃক ভিটা। তারা দুই ভাই ও চার চাচা এ বাড়িতে থাকেন। তাদের ঘরটি টিনের চালার আধাপাকা। ঘরের প্রায় ৫০০ ফুট পেছনে একটি বড় টিলা। টিলা ও ঘরের মাঝখানে কয়েক শতক খালি জায়গাও রয়েছে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, খালি জায়গায়ও টিলা ছিল। কাটা হয়েছে সে টিলা। ভারি বৃষ্টির কারণে মাটি গলে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিকট শব্দে টিলাটি ধসে করিম উদ্দিনদের ঘরের ওপর এসে পড়লে ঘর ও মাটির নিচে চাপা পড়েন মোট ১১ জন। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ওই আটজনকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, সরু গলির কারণে ঘটনাস্থলের কাছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও সিসিকের মাটি কাটার যন্ত্র (এক্সক্যাভেটর) যেতে না পারায় এবং বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজে দেরি হয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর ৩টি টিম উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। তারা ঘরের পেছন দিকের একটি দেয়াল ভেঙে এক্সক্যাভেটর নিয়ে মাটি সরান। দুপুর ১টার দিকে উদ্ধার করা হয় করিম, শাম্মী ও তানিমকে। পরে সেনাবাহিনীর টিমের চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, সকাল থেকে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস মাটিতে চাপা পড়াদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। এরপর দুপুর ১২টার দিকে সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযানে নামে। তারা অভিযান শুরুর কিছুক্ষণের পর নিখোঁজদের মরদেহ পাওয়া যায়।
স্থানীয় কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছিলেন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও আমরা এসে এক ভাই, তার স্ত্রী ও তাদের সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি। তবে আরেক ভাই, তার স্ত্রী ও এক বছরের সন্তানকে বাঁচাতে পারিনি। তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুরে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেই সরাসরি দুর্ঘটনাস্থলে যান সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার গলিটি অত্যন্ত সরু। যে কারণে ফায়ার সার্ভিস ও সিসিকের গাড়ি বা মাটি কাটার যন্ত্র প্রবেশ করানো যাচ্ছিল না।
সিলেট পাহাড়বেস্টিত হওয়ায় এর টিলাগুলোর পাদদেশে ঘর বানিয়ে ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছেন অনেক পরিবার। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে টিলাধসে এসব ঘরের ওপর পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।