নকুল শর্ম্মা
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:১৬ পিএম
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:২৩ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গল্প

টাকি মাছের বুদ্ধি কত

টাকি মাছের বুদ্ধি কত

একটা ছোট্ট ডোবায় থাকত একটা টাকি মাছ। ডোবাতেই বড় হতে থাকে সে। এদিকে বর্ষা পেরিয়ে শীত এসে গেছে। ডোবায় খুব অল্প পানি। কোনোমতে বেঁচে আছে টাকি। সহসা বৃষ্টিও হবে না। ওদিকে পাশের খালটাও শুকিয়ে আসছে প্রায়। বড় জলাশয়ে যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ।

টাকি মাছ প্রহর গুনছে কবে আসবে বোশেখ মাসের ঝড়-বৃষ্টি। চলছে অগ্রহায়ণ মাস। পৌষ আসি আসি করছে।

একদিন হঠাৎ দেখে মেঘ ধরেছে আকাশে। বাহ, অবেলায় বৃষ্টি হবে নাকি! খুশি হলো টাকি। এক পশলা বৃষ্টি হয়েই ঝলমল করে উঠল শীতের আকাশ। ছোট্ট ডোবার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটিতে অল্প পানি জমেছে। টাকি মাছ ভাবল এবার এক লাফে খালে চলে যাবে। তারপর লাফিয়ে যাবে বড় কোনো জলাশয়ে। সাত-পাঁচ না ভেবেই দিল লাফ।

ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগোতে শুরু করল টাকি। কিন্তু বিপদে পড়তে দেরি হলো না তার। হঠাৎ কোথা থেকে উড়ে এলো দাঁড়কাক। টাকিকে দেখে যেই ঠোঁটে ধরতে গেল তখনই মাছটা বলল, ‘কাক তো তণ্ডুল পাখি।’

মাছের কথা বুঝতে না পেরে কাক বলল তণ্ডুল মানে কী। টাকি বলল তুমি কাক। সবচেয়ে বুদ্ধিমান পাখি। আর তুমি তো তণ্ডুল খাও। এর মানে হলো চাল বা ভাত। তুমি শুধু শুধু আমাকে খেয়ে কেন মুখের স্বাদ নষ্ট করবে? নিজের প্রশংসা শুনে কাক আনন্দে গদগদ হয়ে বলল, ভাই টাকি, তুমি বড় উপকার করলে। তোমার কারণে নতুন শব্দও শিখলাম। যাও আজ তোমাকে ছেড়েই দিলাম।

কাক চলে গেল। টাকি আবার সামনের দিকে এগোতে শুরু করল। বিপদ তবু কাটে না। এবার একটা শিয়াল দেখতে পেল মাছটাকে। ওটা এসে ধরতে যাবে, অমনি টাকি বলে উঠল, ‘শৃগাল চন্দ্রমুখী।’ প্রথমে না বুঝলেও টাকি যখন বলল শিয়াল চাঁদের দিকে তাকিয়ে ডাক ছাড়ে, কারণ শিয়াল দেখতে চাঁদের মতো। তখন শিয়াল তো গর্বে আটখানা। মুখখানা কি না চাঁদের মতো! প্রশংসা শুনে শিয়ালও ওকে খেলো না। বুদ্ধির জোরে টাকি এবারও বেঁচে গেল। আবার শুরু যাত্রা। চলছে তো চলছেই। অনেকটা পথ চলে এসেছে। এবার আরেক বিপদ। কোথা থেকে লাফিয়ে এলো মস্ত এক কোলাব্যাঙ। মাছটিকে যেই ধরতে যাবে অমনি টাকি বলে উঠল, ‘রাজপুত্র কোলাব্যাঙ। তোমার খোঁজে রূপকথার রাজকন্যা হয়রান।’

এ কথা শুনে ব্যাঙ তো খুশিতে মশগুল। রূপকথার গল্প অনুযায়ী রাজকন্যা চুমু দিলেই তো সে রাজপুত্র হয়ে যাবে! ব্যাঙও আর মাছটাকে খেলো না। টাকি চলল নিজের গন্তব্যে। কিন্তু কপাল খারাপ হলে তা কি আর খণ্ডানো যায়?

মাঠের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল এক কৃষক। টাকিটা তার চোখে পড়তেই খপ করে ধরে নিয়ে এলো বাড়িতে। কৃষকের বউ ওটাকে রান্না করার আয়োজন করল। উঠোনে ছাইবঁটি নিয়ে কুটতে বসেছে। সবে কানকো দুটো কাটতে যাবে, অমনি একটা চিল ছোঁ মেরে টাকি মাছটিকে নিয়ে গিয়ে গেল গাছের মগডালে। সঙ্গে সঙ্গে টাকি বলল, ‘চিলের কী থাবা! ও বাবা!’ প্রশংসা শুনে চিলও ছেড়ে দিল টাকিকে। টাকি গিয়ে পড়ল সোজা পুকুরে।

এরপর দিন গেল, মাস গেল। একদিন সেই কৃষকের বউ মাছটা দেখতে পেয়ে বড়শি নিয়ে এলো পুকুরে। বড়শি দেখে টাকি বলল, ‘যতই বড়শি ফেলো না কেন, আমি বাপু আর টোপ গিলছি না। এত কিছু পার হয়ে এসেছি যে, আমার সব জানা হয়ে গেছে। আমাকে ভোলানো এত সহজ নয়।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ

নতুন থেরাপি নিয়ে আশা জাগাচ্ছে এইডস চিকিৎসা

বিচ্ছেদ গুঞ্জনে দিব্যা

বিষণ্নতা নাকি শুধুই ক্লান্তি

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও লোহাগড়ায় নির্মিত হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ

ভোট দিতে প্রবাসী নিবন্ধন ২ লাখ ৪৯ হাজার

অপহরণ মামলায় আসামি ৭ বছরের শিশু

ট্রাইব্যুনালে হাসিনা আমলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৭ জন

ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, ৬০০ ফুট খাদে গাড়ি পড়ে নিহত ৬

আমি একা থাকতে দারুণ উপভোগ করি: অক্ষয় খান্না

১০

মারা গেলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়

১১

প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়া ২ কর্মচারীকে শোকজ

১২

স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কাতর্কির কারণ জানালেন ময়মনসিংহের ডাক্তার

১৩

সংঘর্ষের পর কম্বোডিয়ায় বিমান হামলা চালাল থাইল্যান্ড

১৪

২ জেলায় নিয়োগ দিচ্ছে টিআইবি

১৫

দেশের বাজারে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১৬

বায়ুদূষণে ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’ ঢাকা

১৭

বিএনপিতে যোগ দিলেন আ.লীগের শতাধিক নেতাকর্মী

১৮

কিছু সহজ টিপসে ঘর থাকবে ঝকঝকে ও পোকামাকড়মুক্ত

১৯

হোয়াইট হাউসে ইসরায়েল-কাতারের গোপন বৈঠক

২০
X