একটা ছোট্ট ডোবায় থাকত একটা টাকি মাছ। ডোবাতেই বড় হতে থাকে সে। এদিকে বর্ষা পেরিয়ে শীত এসে গেছে। ডোবায় খুব অল্প পানি। কোনোমতে বেঁচে আছে টাকি। সহসা বৃষ্টিও হবে না। ওদিকে পাশের খালটাও শুকিয়ে আসছে প্রায়। বড় জলাশয়ে যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ।
টাকি মাছ প্রহর গুনছে কবে আসবে বোশেখ মাসের ঝড়-বৃষ্টি। চলছে অগ্রহায়ণ মাস। পৌষ আসি আসি করছে।
একদিন হঠাৎ দেখে মেঘ ধরেছে আকাশে। বাহ, অবেলায় বৃষ্টি হবে নাকি! খুশি হলো টাকি। এক পশলা বৃষ্টি হয়েই ঝলমল করে উঠল শীতের আকাশ। ছোট্ট ডোবার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটিতে অল্প পানি জমেছে। টাকি মাছ ভাবল এবার এক লাফে খালে চলে যাবে। তারপর লাফিয়ে যাবে বড় কোনো জলাশয়ে। সাত-পাঁচ না ভেবেই দিল লাফ।
ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগোতে শুরু করল টাকি। কিন্তু বিপদে পড়তে দেরি হলো না তার। হঠাৎ কোথা থেকে উড়ে এলো দাঁড়কাক। টাকিকে দেখে যেই ঠোঁটে ধরতে গেল তখনই মাছটা বলল, ‘কাক তো তণ্ডুল পাখি।’
মাছের কথা বুঝতে না পেরে কাক বলল তণ্ডুল মানে কী। টাকি বলল তুমি কাক। সবচেয়ে বুদ্ধিমান পাখি। আর তুমি তো তণ্ডুল খাও। এর মানে হলো চাল বা ভাত। তুমি শুধু শুধু আমাকে খেয়ে কেন মুখের স্বাদ নষ্ট করবে? নিজের প্রশংসা শুনে কাক আনন্দে গদগদ হয়ে বলল, ভাই টাকি, তুমি বড় উপকার করলে। তোমার কারণে নতুন শব্দও শিখলাম। যাও আজ তোমাকে ছেড়েই দিলাম।
কাক চলে গেল। টাকি আবার সামনের দিকে এগোতে শুরু করল। বিপদ তবু কাটে না। এবার একটা শিয়াল দেখতে পেল মাছটাকে। ওটা এসে ধরতে যাবে, অমনি টাকি বলে উঠল, ‘শৃগাল চন্দ্রমুখী।’ প্রথমে না বুঝলেও টাকি যখন বলল শিয়াল চাঁদের দিকে তাকিয়ে ডাক ছাড়ে, কারণ শিয়াল দেখতে চাঁদের মতো। তখন শিয়াল তো গর্বে আটখানা। মুখখানা কি না চাঁদের মতো! প্রশংসা শুনে শিয়ালও ওকে খেলো না। বুদ্ধির জোরে টাকি এবারও বেঁচে গেল। আবার শুরু যাত্রা। চলছে তো চলছেই। অনেকটা পথ চলে এসেছে। এবার আরেক বিপদ। কোথা থেকে লাফিয়ে এলো মস্ত এক কোলাব্যাঙ। মাছটিকে যেই ধরতে যাবে অমনি টাকি বলে উঠল, ‘রাজপুত্র কোলাব্যাঙ। তোমার খোঁজে রূপকথার রাজকন্যা হয়রান।’
এ কথা শুনে ব্যাঙ তো খুশিতে মশগুল। রূপকথার গল্প অনুযায়ী রাজকন্যা চুমু দিলেই তো সে রাজপুত্র হয়ে যাবে! ব্যাঙও আর মাছটাকে খেলো না। টাকি চলল নিজের গন্তব্যে। কিন্তু কপাল খারাপ হলে তা কি আর খণ্ডানো যায়?
মাঠের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল এক কৃষক। টাকিটা তার চোখে পড়তেই খপ করে ধরে নিয়ে এলো বাড়িতে। কৃষকের বউ ওটাকে রান্না করার আয়োজন করল। উঠোনে ছাইবঁটি নিয়ে কুটতে বসেছে। সবে কানকো দুটো কাটতে যাবে, অমনি একটা চিল ছোঁ মেরে টাকি মাছটিকে নিয়ে গিয়ে গেল গাছের মগডালে। সঙ্গে সঙ্গে টাকি বলল, ‘চিলের কী থাবা! ও বাবা!’ প্রশংসা শুনে চিলও ছেড়ে দিল টাকিকে। টাকি গিয়ে পড়ল সোজা পুকুরে।
এরপর দিন গেল, মাস গেল। একদিন সেই কৃষকের বউ মাছটা দেখতে পেয়ে বড়শি নিয়ে এলো পুকুরে। বড়শি দেখে টাকি বলল, ‘যতই বড়শি ফেলো না কেন, আমি বাপু আর টোপ গিলছি না। এত কিছু পার হয়ে এসেছি যে, আমার সব জানা হয়ে গেছে। আমাকে ভোলানো এত সহজ নয়।’