শিতাংশু ভৌমিক অংকুর, কবি নজরুল সরকারি কলেজ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পুরান ঢাকায় নিরামিষ খাবারের হোটেলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে

জগন্নাথ ভোজনালয়ে থরে থরে সাজানো নিরামিষ খাবার। ছবি : কালবেলা
জগন্নাথ ভোজনালয়ে থরে থরে সাজানো নিরামিষ খাবার। ছবি : কালবেলা

পুরান ঢাকার কথা মনে হতেই জিভে জল চলে আসে। নানা রকম খাবারের ঐতিহ্য সংবলিত এই শহরের সবচেয়ে আদি জনপথকে পুরান ঢাকা বলা হয়। মোঘল আমল থেকে এই শহরের খাবারের বেশ কদর ছিল। তবে শুধু মসলাদার আমিষ খাবারই নয় এই শহরে নিরামিষ খাবারের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।

তাঁতীবাজার ও শাখাঁরীবাজারের নিরামিষ ভোজিদের ঘিরে গড়ে উঠে বেশকিছু নিরামিষ খাবারের হোটেল। তবে এদের মধ্যে এখন বেশ জনপ্রিয় ‘জগন্নাথ ভোজনালয়’। তবে এই এলাকায় আরও কিছু নিরামিষ খাবার হোটেল রয়েছে। যেমন বিষ্ণুপ্রিয়া হোটেল, জগন্নাথ ভোজনালয়, আদি গোবিন্দ হোটেল, জয় মা তারা ভোজনালয়, রাধামাধব নিরামিষ ভোজনালয় প্রভৃতি, যা নিরামিষ ভোজিদের বেশ পছন্দের।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে জগন্নাথ ভোজনালয় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সবার কাছে। আমিষভোজি ও নিরামিষভোজি উভয়ের পছন্দের তালিকায় জগন্নাথ ভোজনালয়। প্রতিদিন খাবারের পদের সংখ্যায় পার্থক্য থাকলেও মান একই রকম থাকে। প্রায় ২৫ বছর আগে তাঁতীবাজারের শ্যামল অধিকারীর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানটি। এই ২৫ বছরে মালিকানা হাত বদল হয়েছে তিনবার। শ্যামল অধিকারীর কাছ থেকে নিতাই পাল আর নিতাই পালের কাছ থেকে এখন আশোক কবিরাজ এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিয়েছেন।

তাঁতিবাজার শিবমন্দিরের কাছ ১১০ নম্বর রোড তাঁতিবাজারে একটি ভবনের দোতালায় এই নিরামিষ খাবারের হোটেলটি অবস্থিত। এই হোটেলটিতে পেঁয়াজ- রসুন তো বাদই, অন্যান্য মসলাও একাদশীর রান্নায় দেওয়া হয় না। শুধু আদা আর কাঁচামরিচটা দেওয়া হয়। এখানে এখন ভর্তা পাওয়া যায় ২-৩ রকমের। ডাল পাওয়া যায় ৩-৪ প্রকারের। শাকও পাবেন ৫ প্রকারের। হোটেলের টেবিলগুলোয় সারিবদ্ধ করে সাজানো রেকাবি (ট্রে)। সেখানে ইস্পাতের (স্টিল) ছোট ছোট বাটিতে করে সাজানো প্রায় ২০ প্রকারের নিরামিষ পদ। যার যেরকম প্রয়োজন, সেভাবে নিয়ে নিতে পারেন। সব তরকারির দাম ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকার ভেতর। ভাত এক প্লেট ১৫ টাকা, প্রয়োজনে ৫ টাকা করে অতিরিক্ত ভাত নিতে পারবেন। ভাত টেবিলে দেওয়া থাকে না। এটি দোকানের লোকেরাই পরিবেশন করে থাকেন। দৈনিক ২০-২৫টি পদ করা হয় এখানে। তার ভেতর রসা, লাবড়া, শুক্তো, ৫ তরকারি- সবই পাবেন। একবারে দোকানে বসে খেতে পারেন ৩৫-৩৬ জন।

তবে ভর দুপুরবেলায় ভিড় আরেকটু বেশিই থাকে। দুপুর ১ টা থেকে সাড়ে ৩টা -৪টা পর্যন্ত বেশ লোকসমাগম হয় বলে জানান অশোক কবিরাজ। রাতে ১০টা পর্যন্ত সাধারণত দোকান খোলা রাখেন। তবে ভিড় বাড়লে সেটি বেড়ে হয় ১১টা।

অশোক কবিরাজ বলেন, আমরা এখানে প্রতিদিন কেমন লোক খাবে, সেসব হিসাব করেই রান্না চড়াই। দরকারে কম হবে। কিন্তু বেশি খাবার যেন না হয় বা বেঁচে না যায়, তা খেয়াল করি আমরা। তা ছাড়া, নিরামিষ খাবার বাসি হলে দেখে বোঝা যায়। কালচে হয়ে যায়। সেটা খাওয়ার উপযোগী থাকে না।

মূলত নিরামিষ আহারি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কথা চিন্তা করে হোটেলটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও সব ধর্মের মানুষের জন্যই এটি উন্মুক্ত। এখানে দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকেই খেতে আসেন।

রকমারি পদের সমাহার রয়েছে এখানে। তিনি আরও জানান, পূজার সময় এখানে খুবই ভিড় হয়। বন্ধের দিনেও লোক বেশি হয়। শুক্রবার ছুটি থাকায় অনেকে আসে। অন্যান্য দিনেও শাঁখারিবাজার, তাঁতিবাজার, ইসলামপুর, নবাবপুর থেকে মানুষ আসে। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তো আসেই।

আজকাল ভ্লগাররাও আসেন জানিয়ে তিনি বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে কেউ যদি আসতে না পারেন, সেক্ষেত্রে আছে ফুডপান্ডার মাধ্যমে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা।

এখন টেলিভিশনের সাংবাদিক বাইজিদ সা’দ জানালেন তার এখানে নিরানিষ ভোজনের অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, খাবার আমার বেশ ভালো লাগে। তাই নিয়মিত খেতে আসি। নিরামিষ খাবার যে এত সুস্বাদু হতে পারে এখানে না আসলে জানতেই পারতাম না। যে পরিমাণ ও যেমন মান, তাতে বলা যায় বেশ সাশ্রয়ী। এলাকাটা একটু ঘিঞ্জি, তবে দোকানের পরিবেশ বেশ ছিমছাম ও পরিষ্কার-পরিছন্ন।

এখানে খেতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অলকানন্দা জানালেন, তিনি প্রায়ই এখানে খেতে আসেন। খাবারের স্বাদ ও মান একশতে একশ, কিন্তু দামটা একটু কমানো গেলে বেশ ভালো হতো।

এই এলাকায়ই পুরনো নিরামিষ হোটেলগুলোর মধ্যে আরেকটি বিষ্ণুপ্রিয়া হোটেল। এটি বেশ জনপ্রিয়। তবে এখানে আগের মতো ভিড় থাকে না। বিষ্ণুপ্রিয়া নিরামিষ হোটেলটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সুমন হালদার জানান, ২০০০ সালের দিকে যাত্রা শুরু করা হোটেলটি বর্তমানে এখনও সমানতালে নিরামিষ ভোজীদের ক্ষুধা নিবারণ করে আসছে। কয়েকবার হাতবদল হওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকে সরস্বতী হালদারের মালিকানায় রয়েছেন। করোনার পর হোটেলের নাম পরিবর্তন করে হরে কৃষ্ণ ভোজনালয় রাখা হলেও লোকমুখে এটি বিষ্ণুপ্রিয়া হোটেল নামেই পরিচিত। ভাই ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজেই রান্নাঘর আর পরিবেশনার কাজ সামলান সরস্বতী হালদার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঘরে বসেই মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ করবেন যেভাবে

বিএনপিসহ ৬টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির বৈঠক চলছে

নিউইয়র্কে ফ্ল্যাট, হীরাখচিত মুকুট ও ব্যক্তিগত বিমান, মিথিলা কি পাবেন সেই স্বপ্নের চাবি?

বিজয় দিবস উদযাপনে কোনো ধরনের নাশকতার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গাজীপুরে কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট

ডিআরইউ ক্রিকেটে কালবেলার বিশাল জয়, ম্যান অব দ্যা ম্যাচ শেখ হারুন

মেজর জলিল ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দি : রাশেদ প্রধান

মডেল-অভিনেত্রী জিনা লিমার রহস্যময় মৃত্যু

খাসোগি হত্যার বিষয়ে কিছুই জানতেন না সৌদি যুবরাজ : ট্রাম্প

তারেক রহমানকে নিয়ে ‘সংকট সংগ্রামে সাফল্য’ শীর্ষক তথ্যচিত্র মুক্তি পাচ্ছে বৃহস্পতিবার

১০

তারেক রহমানের জন্মদিনে ছাত্রদলের দোয়া ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণের নির্দেশ

১১

নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

১২

‘আশুলিয়ায় ছয়টি মরদেহ পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেন ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ’

১৩

স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট আনতে গ্রামীণফোন ও বিএসসিএলের চুক্তি

১৪

গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ

১৫

বিপিএল: বিশ্বকাপজয়ী মারকুটে ব্যাটারকে দলে ভেড়ানোর ইঙ্গিত ঢাকার

১৬

সাংবাদিক সোহেলকে তথ্য যাচাইয়ের জন্য আনা হয়েছিল : ডিএমপি

১৭

শরীয়তপুরের উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করব : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১৮

যুবদল নেতা হত্যা : শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘পাতা সোহেল’সহ গ্রেপ্তার ২

১৯

ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে বড় পরিবর্তন

২০
X