ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীকে সচেতন করতে ৫৪টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী প্রচার অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ কার্যক্রম শুরুর এক সপ্তাহ পর আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে যেসব বাড়ি ও অফিসে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাবে তাদের জেল-জরিমানা করা হবে।
এমনকি সরকারি অফিসে বা সিটি করপোরেশনের কোনো অফিসে যদি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়, সেই অফিসের কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও মামলা ও জেল-জরিমানার মতো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।
সোমবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় ডিএনসিসির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সচেতনতা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম এ হুঁশিয়ারি দেন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করছি। তবে আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে কোনো বাসায় বা অফিসে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জেল ও জরিমানা করা হবে। সরকারি অফিসেও যদি লার্ভা পাওয়া যায় সে অফিসের যিনি দায়িত্বে আছেন তার বিরুদ্ধে মামলা হবে, জরিমানা হবে। এমনকি আমার সিটি করপোরেশনের কোনো অফিসেও যদি লার্ভা পাওয়া যায় সেই অফিসের কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার ক্লিয়ার মেসেজ। লার্ভা পেলে মামলা হবে, জেল হবে, জরিমানা হবে এবং জরিমানার টাকার পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যাবে। আমাদের আরও ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারা সচেতন হলে জেল-জরিমানা, মামলার দরকার নাই। তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন। এডিস মশা জন্মাতে পারে এমন জায়গাগুলো পরিষ্কার করুন। এডিস মশা কামড় না দিলে ডেঙ্গু হবে না। সচেতন হয়ে নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যকেও নিরাপদ রাখুন।’
মেয়র বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের মতে, খালের ও ড্রেনের ময়লা পানিতে এডিস মশা জন্মায় না। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা জন্মায়। যেসব পরিত্যক্ত দ্রব্যাদিতে পানি জমে এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে সেসব দ্রব্যাদি সিটি করপোরেশন কিনে নিচ্ছে। ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, দইয়ের কাপ এগুলো যত্রতত্র না ফেলে ডিএনসিসির কাউন্সিলরদের কাছে জমা দিন নগদ টাকা গ্রহণ করুন। পুরোনো টায়ার, কমোড, রঙের কৌটা এগুলো ছাদে বা বারান্দায় না রেখে আমাদের কাউন্সিলরদের কাছে জমা দিয়ে টাকা নিন।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে সেখানে এগুলো ফেলে রাখলে এডিস মশার জন্ম হয়ে আমাদের মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসবে। কারণ, মশা কিন্তু কাউকে চিনবে না। মশা শুধু রক্ত চেনে। কে নেতা, কে সংসদ সদস্য আর কে কোন লীগ করে, কিছুই চিনবে না।’ এডিস মশার জন্ম না হলে এ শহরের বাসিন্দাদের কারও ডেঙ্গু হবে না বলেও জানান তিনি।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনায় ঢাকা উত্তর সিটির প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে (সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর) ৫০ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকা দিয়ে কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকাবাসীকে সচেতন করতে মতবিনিময় সভা, শোভাযাত্রা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা কার্যক্রম চালাবেন এবং প্রচারপত্র বিতরণ করবেন।
৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তফাজ্জল হোসেন টেনুর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান, ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ, কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশারসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে রূপনগর এলাকার বাড়ির মালিক সমিতির সদস্যদের নিয়ে কাজ করছি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা জরুরি। শুধু সিটি করপোরেশন একার কাজ নয় এটি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ এলাকার সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে ডিএনসিসির মাসব্যাপী এই প্রচার অভিযান সফল করব।’
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, 'ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর বাসা ও আশপাশের এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ডেঙ্গু রোগীকে মশা কামড় দেওয়ার পরে অন্যকে কামড়ালে ডেঙ্গু হয়। তাই রোগী চিহ্নিত হলে তার আশপাশ পরিষ্কার রাখা ও সতর্ক থাকা জরুরি।’
ডিএনসিসি মেয়রের উপদেষ্টা ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাসার বলেন, ‘আমি সকালে এই এলাকার কয়েকটি বাড়িতে পরিদর্শন করেছি৷ একটি বাড়িতে পরিত্যক্ত টায়ারে অসংখ্য লার্ভা পেয়েছি। দেখুন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কিন্তু বাড়ির ভিতরে পরিত্যক্ত টায়ার খুঁজে পাবে না। আমাদের নিজেদেরই এসব পরিষ্কার করতে হবে। কোথায় এসব লার্ভার উৎস আছে খুঁজে বের করুন এবং ধ্বংস করুন।’
মতবিনিময় সভা শেষে ওয়ার্ডবাসীকে নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়। রূপনগর আবাসিক এলাকার ২৩ নম্বর সড়ক প্রদক্ষিণ করে রূপনগর প্রধান সড়কে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হয়। পরে মেয়রসহ অন্যরা প্রচারপত্র বিতরণ করেন।
মন্তব্য করুন