সাইয়েদ বাবু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০২:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, পানিবন্দি ২ লাখ মানুষ

হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে অবস্থিত হকের চর। ছবি : কালবেলা
হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে অবস্থিত হকের চর। ছবি : কালবেলা

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। টানা ৭ দিনব্যাপী স্থায়ী বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার বন্যা প্লাবিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে মানুষ যেসব উঁচু স্থানে গবাদিপশু রেখেছে, গত তিন দিনে হু হু করে সেসব স্থানে পানি ওঠায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। জীবন বাঁচাতে অনেকে নিজস্ব নৌকায়, উঁচু রাস্তায়, ফ্লাড শেল্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মেইন ল্যান্ডে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্য মতে, নাগেশ্বরীতে দুধকুমার নদীর ১০০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন করে ১৫ গ্রামের ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলায় পানিবন্দি লোকের সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি।

তবে জেলা দুর্যোগ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৭৫০ জন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান, রোববার সকালে ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম ব্রিজ পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমার নদীর পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগামী কয়েক দিন এ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানান।

গত ৬ দিন ধরে নৌকায় স্ত্রী, ছেলে ও ২ নাতিকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের গুজিমারী গ্রামের শামসুল আলম। তিনি বলেন, ঘরের আসবাবপত্র, চাল-ডাল, কাপড়চোপড় ও মূল্যবান জিনিসপত্র যাতে হারিয়ে না যায় এ জন্য নৌকায় আশ্রয় নিয়েছি। সারাদিন বৃষ্টির কারণে কিছু রান্নাবান্নাও করতে পারছি না। খুব সমস্যায় আছি।

একই উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর বাগুয়ার কোবাদ আলী জানান, এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজখবর নিতে আসে নাই। চুলা বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সকাল গড়িয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত পেটে কিছু পড়েনি।

একই উপজেলার হকের চরের মহুবর বলেন, ছোট মেয়েডা অসুস্থ। কোনো ডাক্তার পাইতাছি না। ঝাড়ফুঁক দিয়া রইছে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কালির আলগা গ্রামের আছিয়া বলেন, খোলা নৌকায় গাদাগাদি কইরা আছি। সরকারিভাবে চাল-ডাল-তেল পাইলেও লাকড়ির অভাবে আন্দোলন করবার পারতাছি না। ছোয়া-পোয়া খুব কান্নাকাটি করতাছে।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩টি মেডিকেল টিম বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কার্যত বন্যা এলাকায় কাউকে দেখা মেলেনি। ওই সব গ্রামে গত ৬ দিন ধরে কোনো মেডিকেল টিম খোঁজখবর নেয়নি বলে বানভাসিরা জানিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর ফসলি জমি, বীজতলা ও শাকসবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া যাবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, ১৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বেগম নুরুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২টি এবং নাগেশ্বরীর বেরুবাড়ী ইউনিয়নের সবুজ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৫টি বানভাসি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম জানান, চলমান বন্যায় ১০৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৭১টি স্কুল, ৩২টি মাদ্রাসা ও ৬টি কলেজ রয়েছে।

তিনি আরও জানান, এ ছাড়াও চিলমারী নটারকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়, নাগেশ্বরী সরকালি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভিতরবন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ডিগদারি নুনখাওয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজিবপুর কোদালকাটি উচ্চ বিদ্যালয় ও চর নেওয়াশী উচ্চ বিদ্যালয়ে বানভাসি মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের নজরে দেওয়া হলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেব। আমরা সম্মিলিতভাবে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে বদ্ধ পরিকর। এখন পর্যন্ত দুর্গতদের জন্য ৪১৭ টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যা আক্রান্ত এলাকার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যে কোনো সমস্যা হলে ইউএনও অথবা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘ওলামা-মাশায়েখদের ত্যাগ-কোরবানি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে’

যুদ্ধবিরতিতে গাজার ঘরে ঘরে আনন্দ, রাস্তায় মিছিল

সচেতন হলে ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব : চসিক মেয়র

২০ মাসে মামলার রায়, স্ত্রী হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন

ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারই জাতির একমাত্র লক্ষ্য : গয়েশ্বর

ঘুষি মেরে বিমানের মনিটর ভেঙে ফেললেন লন্ডন প্রবাসী

ইসরায়েলের যে কারাগারে বন্দি শহিদুল আলম

আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, টিটিপি প্রধান নিহতের গুঞ্জন

বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল

এককভাবে সরকার গঠন করবে বিএনপি : এমরান চৌধুরী

১০

‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে রংপুর অচল করে দিতে বাধ্য হবো’

১১

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : লায়ন ফারুক

১২

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

১৩

বৃহত্তর মিরপুরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৪

দেশ বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই : টুকু

১৫

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / বস্তিবাসী ও শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি মেনে নিন

১৬

মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

১৭

রাজধানীতে ১৭ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাগপা ছাত্রলীগের বৈঠক

১৮

হাত-মুখ বেঁধে শিশুকে ধর্ষণ, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

১৯

এনসিটিবির নামে ‘নকল’ ছাপাখানা, আটক ৫ 

২০
X