বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা অস্থির অবস্থার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় সড়কে বেড়েছে গণপরিবহনের উপস্থিতি। গণপরিবহন চলাচল শুরু হলেও ব্যক্তিগত পরিবহনের সংখ্যা এখনো কম। খুলেছে বিভিন্ন দোকানপাট ও মার্কেট।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কেন্দুয়া উপজেলা ছিল প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের দখলে। যেই তার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ল, তাৎক্ষণিক হাজার হাজার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ছাত্র-শিক্ষকসহ আম জনতা কেন্দুয়া উপজেলার হাটে-ঘাটে-মাঠে উৎসবে মেতে ওঠার পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কিছু মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতা থানা কমপ্লেক্স, সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিনের বাসাবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়।
তাছাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে শেখ মুজিবের ম্যুরাল, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স,আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়, নেতাদের ব্যক্তিগত চেম্বার, বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
ওইদিন বিকেলে (৫ আগস্ট) বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়াসহ বিএনপির নেতাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা বিক্ষুব্ধ জনতাকে নির্বৃত্ত করতে সক্ষম হয়। এরপর রাতে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
এসবের খবর পেয়ে রাতেই ঢাকা থেকে এলাকায় ছুটে যান বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী। পরদিন সকাল থেকে তিনি ও উপজেলা প্রশাসনসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগসহ এসব ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য মাঠে নামেন।
দুপুরে বিজয় মিছিল প্রাক্কালে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণকালে রফিক হিলালী বলেন, তিনি গায়েবি ৫৪টি মামলার আসামি। তিনবার তার বাসাবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের রাতের খাবারের জন্য রান্না করা ভাত ফেলে দিয়েছিল হামলাকারীরা। জানি আমার মতো আপনারাও মামলা-হামলাসহ নানাভাবে স্বৈরচারী হাসিনা সরকার ও তার দল দ্বারা নির্যাতিত-নিষ্পেষিত। বহু কষ্টের চাপ রয়েছে আপনাদের মাঝে। এখন নতুন দিনের প্রত্যাশায় সবকিছু ভুলে গিয়ে নতুন একটা বাংলাদেশ গড়ি। আজকের এই বিজয়ে পুরোটাই কৃতিত্বের দাবিদার এ দেশের ছাত্রসমাজ। দেশের এই সূর্য সন্তানদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা মুক্ত বাতাসে। যারা এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মাগফিরাত আর আহতদের জন্য সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিকে ফেরাতে একযোগে কাজ করছে সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসনসহ জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মাঠে থেকে পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধসহ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে, দোকানপাট খোলা ও নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে।
কেন্দুয়া বাজারের জনৈক ব্যবসায়ী বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। মানুষও বাজারে আসছিল না। নেতাদের ভূমিকায় পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো হয়েছে। এখন মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে বাজারে আসছেন।
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার জানান, এখন পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। দোকানিরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছেন। স্থানীয় নেতারাও তাদের অভয়বাণী দিচ্ছেন। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আমরাও কাজ করছি। আশা করি দু-এক দিনের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।